আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস (International Day for Biological Diversity)

আজ ২২ শে মে (22 May), আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস (International Day for Biological Diversity), যা বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস (World Biodiversity Day) নামেও পরিচিত। প্রতি বছর ২২ শে মে তারিখটি আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস রূপে পালিত হয়। উল্লেখ্য, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্য, ১৯৯২ সালের ২২ শে মে তারিখে বহুপাক্ষিক চুক্তি ‘কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি‘ (Convention on Biological Diversity/CBD)-এর খসড়া তৈরি হয় এবং ১৯৯৩ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর তারিখে এই চুক্তি কার্যকর করা হয়। ১৯৯৪ সালের ২৮ শে নভেম্বর থেকে ৯ ই ডিসেম্বর সময়কালে বাহামার নাসাউ-তে অনুষ্ঠিত প্রথম ‘কনফারেন্স অফ পার্টিজ্ টু দ্য কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি‘ (Conference of the Parties to the Convention on Biological Diversity)-তে ২৯ শে ডিসেম্বর তারিখটি (অর্থাৎ CBD চুক্তি কার্যকরের তারিখ) আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস রূপে গৃহীত হয়। ১৯৯৪ সালের ১৯ শে ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ ২৯ শে ডিসেম্বর তারিখটি আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস হিসাবে ঘোষণা করে এবং ১৯৯৪ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর তারিখে প্রথমবার আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস পালিত হয়। পরে, ২০০০ সালের ২০ শে ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ ২৯ শে ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২২ শে মে তারিখটি (অর্থাৎ CBD চুক্তির খসড়া তৈরির তারিখ) আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস হিসাবে ঘোষণা করে এবং ২০০১ সালের ২২ শে মে তারিখে প্রথমবার আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস পালিত হয়। আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল : জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত বিষয়গুলি সম্পর্কে জনসচেতনতা ও বোধগম্যতা বৃদ্ধি করা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপকে উৎসাহিত করা। এবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসের থিম হল : ‘Harmony with Nature and Sustainable Development’।

কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে বা স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন প্রকার জীবের বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাবেশকে জীববৈচিত্র্য (Biodiversity) বলে। UNEP-এর সংজ্ঞা অনুসারে, জীববৈচিত্র্য হল জিন, প্রজাতি এবং বাস্তুতান্ত্রিক পর্যায়ে বৈচিত্র্যের পরিমাপ। উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে অনুষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল ফোরাম অন বায়োডাইভার্সিটি‘ শীর্ষক সভাতে ওয়াল্টার জি. রোসেন (Walter G. Rosen) সর্বপ্রথম ‘Biodiversity‘ শব্দটি ব্যবহার করেন। PLOS Biology -এর ২০১১ সালের তথ্য অনুসারে, পৃথিবীতে মোট জীব প্রজাতির সংখ্যা ৮৭ লক্ষ। উপাদানের ভিত্তিতে জীববৈচিত্র্যকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয় — (১) জিনগত বৈচিত্র্য : কোনো জীব প্রজাতির মধ্যে যে গঠন ও প্রকৃতিগত পার্থক্য অর্থাৎ জিনগত বিভিন্নতা থাকে, তাকে জিনগত বৈচিত্র্য (Genetic Diversity) বলে। উদাহরণ — বর্তমানে মানুষের ৩৫-৪৫ হাজার জিনগত বৈচিত্র্য রয়েছে। (২) প্রজাতিগত বৈচিত্র্য : কোনো অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির (উদ্ভিদ, প্রাণী, আণুবীক্ষণিক জীব) জীবের সমাবেশকে প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (Species Diversity) বলে। উদাহরণ — কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি (CBD) এর তথ্যানুসারে, বর্তমানে ব্রাজিলে কমপক্ষে ১,০৩,৮৭০ প্রাণী এবং ৪৩,০২০ উদ্ভিদ প্রজাতি (জ্ঞাত) রয়েছে। (৩) বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য : কোনো অঞ্চলে বাস্তুতন্ত্রের সমস্ত অজীবজ ও জীবজ উপাদানের মধ্যে যে বিভিন্নতা থাকে, তাকে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity) বলে। উদাহরণ — বনভূমি, তৃণভূমি, মরুভূমি, পুকুর, কৃষিভূমি প্রভৃতি প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য দেখা যায়।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্বগুলি হল — (১) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশে খাদ্যশৃঙ্খল অটুট রাখা যায়। (২) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশে অক্সিজেনের জোগান অক্ষুণ্ণ রাখা যায়। (৩) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে লুপ্তপ্রায় জীব প্রজাতিগুলিকে রক্ষা করা যায়। (৪) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য নির্ভর পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা যায়, যার নান্দনিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। (৫) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন জীবপ্রজাতি সম্পর্কে গবেষণা ও জ্ঞান লাভ করা যায়।

SSC Upper Primary TET Social Studies (Bengali Version)

গুরুত্বপূর্ণ দিবস : আন্তর্জাতিক চা দিবস