World Oceans Day
বিশ্ব মহাসাগর দিবস (World Oceans Day)
আজ ৮ ই জুন (8 June), বিশ্ব মহাসাগর দিবস (World Oceans Day)। প্রতি বছর ৮ ই জুন তারিখটি বিশ্ব মহাসাগর দিবস রূপে পালিত হয়। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো-তে অনুষ্ঠিত বসুন্ধরা সম্মেলন (Earth Summit) -এ সর্বপ্রথম বিশ্ব মহাসাগর দিবস প্রতিষ্ঠার ধারণাটি গৃহীত হয়। ২০০২ সালের ৮ ই জুন ইউনেস্কোর ইন্টারগভর্নমেন্টাল ওশেনোগ্রাফিক কমিশন (Intergovernmental Oceanographic Commission/IOC) -এর উদ্যোগে সর্বপ্রথম বিশ্ব মহাসাগর দিবস পালিত হয়। ২০০৮ সালের ৫ ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ ৮ ই জুন তারিখটি বিশ্ব মহাসাগর দিবস হিসাবে ঘোষণা করে এবং ২০০৯ সালের ৮ ই জুন প্রথমবার রাষ্ট্রসংঘ স্বীকৃত বিশ্ব মহাসাগর দিবস পালিত হয়। বিশ্ব মহাসাগর দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল : মহাসাগরের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মহাসাগরের ওপর মানুষের কর্মকান্ডের প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করা এবং স্থিতিশীল মহাসাগর ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচারণা করা। এবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে বিশ্ব মহাসাগর দিবসের থিম হল : ‘Wonder : Sustaining What Sustains Us’।
পৃথিবীর ৭০.৮% অংশ জুড়ে মহাসাগর রয়েছে। মহাসাগর হল আমাদের জীবনের উৎস, যা মানবজাতি ও পৃথিবীর অন্যান্য জীবেদের ভরণপোষণ করে। মহাসাগর পৃথিবীর কমপক্ষে ৫০% অক্সিজেন উৎপাদন করে। মহাসাগর হল পৃথিবীর ৮০% জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল এবং বিশ্বজুড়ে এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্রোটিনের প্রধান উৎস হল মহাসাগর। মহাসাগরগুলি মানুষের দ্বারা উৎপাদিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের প্রায় ৩০% শোষণ করে, যা বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবকে প্রতিহত করে। মহাসাগর হল আমাদের অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি। রাষ্ট্রসংঘের তথ্য অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে মহাসাগর-ভিত্তিক শিল্পে নিযুক্ত মানুষের সংখ্যা হবে আনুমানিক ৪ কোটি। পৃথিবীর মহাসাগর – তাদের তাপমাত্রা, রসায়ন, স্রোত ও জীবন – বৈশ্বিক ব্যবস্থা পরিচালনা করে, যা পৃথিবীকে মানবজাতির জন্য বাসযোগ্য করে তুলেছে। আমাদের বৃষ্টির জল, পানীয় জল, আবহাওয়া, জলবায়ু, উপকূলরেখা, আমাদের খাদ্যের বেশিরভাগ অংশ, এমনকি অক্সিজেন – সবকিছুই মহাসাগর দ্বারা সরবরাহ ও নিয়ন্ত্রিত হয়। ঐতিহাসিক কাল থেকে মহাসাগর ও সমুদ্র বাণিজ্য ও পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়। এই অপরিহার্য বৈশ্বিক সম্পদের যত্নশীল ব্যবস্থাপনা এক স্থিতিশীল ভবিষ্যতের একটি মূল বৈশিষ্ট্য। তবে বর্তমান সময়ে, দূষণ ও অম্লকরণের কারণে মহাসাগরীয় জলভাগের ক্রমাগত অবনতি ঘটছে, যা বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতা ও জীববৈচিত্র্যের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলছে। তাই, স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং পৃথিবীর পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করতে মহাসাগরের সুরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উল্লেখ্য, পৃথিবীর মহাসাগরগুলিতে পৃথিবীর মোট জলের ৯৭% রয়েছে। পৃথিবীর মহাসাগরকে ৫ টি ভাগে বিভক্ত করা হয় — প্রশান্ত মহাসাগর (Pacific Ocean), আটলান্টিক মহাসাগর (Atlantic Ocean), ভারত মহাসাগর (Indian Ocean), সুমেরু মহাসাগর বা উত্তর মহাসাগর (Arctic Ocean/Northern Ocean) ও কুমেরু মহাসাগর বা দক্ষিণ মহাসাগর (Antarctic Ocean/Southern Ocean)। পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর হল প্রশান্ত মহাসাগর এবং ক্ষুদ্রতম মহাসাগর হল সুমেরু মহাসাগর বা উত্তর মহাসাগর। পৃথিবীর মহাসাগরের গড় গভীরতা ৩৬৮২ মিটার (সূত্র : NOAA)। সর্বাধিক গভীরতাযুক্ত মহাসাগর হল প্রশান্ত মহাসাগর, যার গড় গভীরতা ৪২৮০ মিটার। প্রশান্ত মহাসাগরের অন্তর্গত মারিয়ানা খাত (Mariana Trench)-এর চ্যালেঞ্জার ডিপ (Challenger Deep) হল পৃথিবীর মহাসাগরের গভীরতম অংশ, যার সর্বাধিক গভীরতা ১১,০০৯ মিটার। সর্বনিম্ন গভীরতাযুক্ত মহাসাগর হল সুমেরু মহাসাগর বা উত্তর মহাসাগর, যার গড় গভীরতা ১০৩৮ মিটার।