বিশ্ব শিল্পকলা দিবস (World Art Day)

আজ ১৫ ই এপ্রিল (15 April), বিশ্ব শিল্পকলা দিবস (World Art Day)। প্রতি বছর ১৫ ই এপ্রিল তারিখটি বিশ্ব শিল্পকলা দিবস রূপে পালিত হয়। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ আর্ট (IAA) -এর ১৭-তম সাধারণ সভাতে ১৫ ই এপ্রিল তারিখটি বিশ্ব শিল্পকলা দিবস হিসাবে গৃহীত হয়। ১৫ ই এপ্রিল হল ইতালীয় রেনেসাঁ পর্বের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯) -এর জন্মদিন। তাঁরই স্মরণে ১৫ ই এপ্রিল তারিখটি বিশ্ব শিল্পকলা দিবস রূপে পালিত হয়। ২০১২ সালে প্রথমবার বিশ্ব শিল্পকলা দিবস পালিত হয়। ২০১৯ সালের ২৬ শে নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ৪০-তম সাধারণ সম্মেলনে ১৫ ই এপ্রিল তারিখটিকে বিশ্ব শিল্পকলা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ইউনেস্কোর মতে, শিল্পকলা (Art) বিশ্বজুড়ে সকল মানুষের জন্য সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে প্রতিপালন করে এবং জ্ঞান ভাগাভাগি এবং কৌতূহল ও সংলাপকে উৎসাহিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব শিল্পকলা দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল : শৈল্পিক সৃষ্টি ও সমাজের মধ্যে সংযোগকে আরও সুদৃঢ় করা, শৈল্পিক প্রকাশের বৈচিত্র্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, স্থিতিশীল উন্নয়নে শিল্পীদের অবদান তুলে ধরা এবং শিল্পকলা শিক্ষার গুরুত্ব প্রচার করা।

শিল্পকলা হল মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা প্রকৃতপক্ষে মানুষের সৃজনশীলতা, সংস্কৃতি ও চিন্তাধারার প্রতিফলন। যেসব সৃজনশীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষের চিন্তা, অনুভূতি ও সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তাদের শিল্পকলা বলে। শিল্পকলা হল এক সৃজনশীল প্রক্রিয়া, যা মানুষের আবেগ, কল্পনা ও চিন্তাধারাকে রূপদান করে। শিল্পকলাকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয় — (১) চারুকলা বা চারুশিল্প বা ললিতকলা (Fine Arts) এবং (২) কারুকলা বা কারুশিল্প বা হস্তশিল্প (Crafts)। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সুকুমার বৃত্তি রোমন্থনে সৃষ্ট যেসব শিল্পকলাতে শুধুমাত্র সৌন্দর্যের প্রাধান্য থাকে, কোনো ব্যবহারিক দিক থাকে না, তাদের চারুকলা বা চারুশিল্প বা ললিতকলা বলে। চারুকলা প্রধানত ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি ও সৃজনশীলতার উপর নির্ভরশীল। যেমন — চিত্রাঙ্কন, ভাস্কর্য, কাব্য, সঙ্গীত, নৃত্য ইত্যাদি। ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও স্থানীয় উপকরণ দ্বারা প্রভাবিত যেসব শিল্পকলাতে ব্যবহারিক বস্তুর সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়, তাদের কারুকলা বলে। কারুকলা প্রধানত ব্যবহারিক দক্ষতা ও কৌশল উপর নির্ভরশীল। যেমন — মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, ধাতুশিল্প, বস্ত্রবয়ন শিল্প, চর্মশিল্প ইত্যাদি।

চারুকলাকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায় — (১) দৃশ্যকলা (Visual Arts): যেমন — চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য ইত্যাদি ; (২) পরিবেশন শিল্পকলা (Performing Arts): যেমন — সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক ইত্যাদি ; (৩) সাহিত্যকলা (Literary Arts): যেমন — কবিতা, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি। আবার, লোক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে তৈরি যেকোনো প্রকার শিল্পকলাকে লোকশিল্প (Folk Arts) বলে। লোকশিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সরলতা, প্রথাগত শিল্পকর্ম, সৃষ্টিশৈলীর রক্ষণশীলতা। যেমন — বাংলার লোকশিল্পের দুই অনন্য উদাহরণ হল নকশিকাঁথা ও গম্ভীরা নৃত্য। ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলার পাশাপাশি আধুনিক কালে বিভিন্ন প্রকার নতুন শিল্পকলার উদ্ভব ঘটেছে। যেমন — শিল্প নকশা (Industrial Design), পণ্য নকশা (Product Design), বেশভূষাশৈলী নকশাকরণ (Fashion Design), অন্দরসজ্জা (Interior Design), চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন (Graphic Design), ফাঁপাচিত্রণ (Holography), অসদ বাস্তবতা কলা (Virtual Reality Art), দ্বি-আঙ্কিক শিল্পকলা (Digital Art), বহুমাধ্যম নিমগ্ন কলা (Multimedia Immersive Art), জঞ্জাল কলা (Junk Art) ইত্যাদি।

SSC Upper Primary TET Social Studies (Bengali Version)

গুরুত্বপূর্ণ দিবস : আন্তর্জাতিক মানব মহাকাশ উড়ান দিবস