Well of Hell of Yemen
ইয়েমেনের নরকের কূপ
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Well of Hell of Yemen । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি ‘নরকের কূপ’ নামে পরিচিত ইয়েমেনের বারহুট কূপ সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

এ পৃথিবীকে বৈচিত্র্যময় রূপে সাজিয়ে তুলেছে প্রকৃতি। ভূপৃষ্ঠে কখনো কখনো প্রকৃতির কারিগরি হার মানায় শিল্পীর কল্পনাকেও। পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রকৃতির এমনই কিছু বিস্ময় ছড়ানো রয়েছে। সেরকমই প্রকৃতির এক বিস্ময় হল ইয়েমেনের ‘নরকের কূপ’ (Well of Hell of Yemen)। সৌদি আরবের দক্ষিণে, মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি ও পাহাড় অধ্যুষিত দেশ হল ইয়েমেন (Yemen)। ইয়েমেনের পূর্বাংশে আল মাহরা (Al Mahrah) প্রদেশের মরুভূমিতেই এই ‘নরকের কূপ’ অবস্থিত, যা ‘বারহুটের কূপ’ (Well of Barhout) নামেও পরিচিত। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ওমানের সীমান্ত থেকে এটি নিকটে অবস্থিত হলেও, ইয়েমেনের রাজধানী সানা (Sanaa) থেকে প্রায় ১৩০০ কিমি দূরে অবস্থিত।
ইয়েমেনের হাধরামাউট (Hadhramaut) অঞ্চলে অবস্থিত এই নরকের কূপ একটি বৃত্তাকার বৃহৎ গর্ত, যা ভূপৃষ্ঠে ৩০ মিটার (১০০ ফুট) চওড়া এবং আনুমানিক ১১২ মিটার (৩৬৭ ফুট) গভীর। স্থানীয় লোকগাঁথা অনুসারে, এই গর্তটি হল দৈত্যদের কারাগার ; গর্তটির ভেতর থেকে উঠে আসা নোংরা এবং বিষাক্ত গন্ধের কারণেই এইরকম লোকগাঁথার জন্ম হয়েছে। একই কারণে অনেকে এটিকে ‘নরকের মুখ’ (The Mouth of Hell) বলে থাকেন। অনেক স্থানীয় বাসিন্দাই বিশ্বাস করেন যে, নরকের কূপের কাছাকাছি গেলে বা এই কূপ সম্পর্কে আলোচনা করলে, তা দুর্ভাগ্য নিয়ে আসবে। এমনিতেই ইয়েমেনিরা দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের শিকার! এছাড়া, স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে এনিয়ে কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে যে, কোনোকিছু এই গর্তের কাছাকাছি গেলে, গর্তটি তা গিলে ফেলবে। প্রচলিত ইয়েমেনের উপকথাতে এই কূপকে ‘জিনদের কারাগার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইয়েমেনের উপকথায় দাবি, দুষ্ট জিনদের বন্দি করতেই এই অন্ধকূপ তৈরি হয়েছিল। এখানে এক বার ঢুকলে সাধারণ মানুষের বেঁচে ফেরা অসম্ভব।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : স্ত্রীরোগের আঁতুড়ঘর সুন্দরবন
লোকগাঁথা যাই হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে এই নরকের কূপ একপ্রকার প্রাকৃতিক ভূমিরূপ। তবে উত্তর ও দক্ষিণে পাহাড়-টিলা বেষ্টিত এই গর্ত আসলে কোনপ্রকার ভূমিরূপ, এনিয়ে দীর্ঘকাল বিতর্ক ছিল। অনেকে এটিকে ‘সুপার ভলক্যানো’ (Super Volcano) কিংবা ‘পিঙ্গো’ (Pingo) বলে দাবি করতেন। ইংল্যান্ডের কিলে বিশ্ববিদ্যালয় (Keele University) -এর গ্লেসিওলজি ও প্যালিওক্লাইমাটোলজির অধ্যাপক ক্রিস ফগউইল (Chris Fogwill) -এর মতে, এটি একটি সিঙ্কহোল (Sinkhole), যা চুনাপাথরের ক্ষয় বা ভূগর্ভস্থ লবণের অপসারণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর মতে, এই গর্তের প্রান্তদেশের ক্ষয়কাজ ইঙ্গিত দেয় যে, এটি বয়সে নবীন নয়, যথেষ্ট প্রাচীন। ভূপ্রাকৃতিক ভাবে এমনিতেই দুর্গম এই মরু অঞ্চলে এধরনের এক গর্ত নিঃসন্দেহে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। সূর্যের আলো এই গর্তে খুব একটা প্রবেশ করেনা, ফলে নরকের কূপের একেবারে প্রান্তদেশে দাঁড়িয়েও কূপটির তলদেশ দেখা অসম্ভব ; শুধুমাত্র পাখিরা উড়ে গর্তের ভিতরে ঢুকছে-বেরোচ্ছে দেখা যায়। কয়েক শতাব্দী ধরে এই গর্তটি নিয়ে অতিপ্রাকৃত গল্প-কাহিনী প্রচারিত হয়েছে, যা এক রহস্য ও কৌতূহল তৈরি করেছে। এই নরকের কূপের নিচে কি রয়েছে, তা দীর্ঘকাল অজানাই ছিল।
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১। ওমান গুহা অন্বেষণ দল (OCET)-এর ১০ জন গুহাবিদ বারহুট কূপ অভিযান করেন এবং ৮ জন নরকের কূপের ভিতর প্রবেশ করেন। ওমানি গুহা বিশেষজ্ঞদের নরকের কূপের তলদেশ স্পর্শ করতে প্রায় অর্ধেক দিন লেগে যায়। তাঁরা দেখেন, নরকের কূপের ভিতরে বহু পশু-পাখির মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। এই কূপের ভিতর চুনাপাথরেরও সন্ধান মিলেছে। এএফপি (AFP) প্রকাশিত ওই অভিযানের ভিডিও চিত্রে নরকের কূপে স্ট্যালাগমাইট গঠন দেখা গেছে। নরকের কূপের নীচে মুক্তার মতো এক ধরনের উজ্জ্বল সবুজ নিটোল গোল পাথরেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। এই কূপের ভিতর চুঁইয়ে পড়া ক্যালশিয়াম মিশ্রিত জল থেকে এই ধরনের পাথর ‘গুহা মুক্তা’ (Cave Pearl) নামে পরিচিত। এই রহস্যময় গর্ত নিয়ে এখনও অবদি বিশদ অধ্যয়ন ও গবেষণা হয়নি। বিশদ গবেষণার জন্য ওমানের বিশেষজ্ঞ দলটি নরকের কূপ থেকে মৃত পশু-পাখির দেহ, গুহার মাটি, পাথর, জলের নমুনা সংগ্রহ করে এনেছেন। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, নরকের কূপ আসলে একটি সিঙ্কহোল। পরিশেষে বলা যায়, মরুভূমির বুকে এহেন সিঙ্কহোল সত্যিই বিস্ময়কর। (Well of Hell of Yemen)
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-II]
লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- Daily Mail (UK) ; Gulf News ; The Times of India ; India Times ; The New Indian Express
Pingback: History of India in Geographical Context - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Seasonal Diversity of West Bengal - ভূগোলিকা-Bhugolika
Excellent…
Pingback: Topic - Ecological Footprint - ভূগোলিকা-Bhugolika