Topic – Ophiolite
প্রসঙ্গ – ওফিওলাইট (Topic – Ophiolite)
আপনাকে ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভূগোল বিচিত্রা’ বিভাগে স্বাগত জানাই। আজকের পোস্ট : প্রসঙ্গ – ওফিওলাইট (Topic – Ophiolite)।
▶️▶️▶️ ওফিওলাইট হল নিমজ্জন (Subduction) শুরুর সময় সামুদ্রিক শৈলশিরা, ব্যাক আর্ক বেসিন (Back Arc Basin) বা ফোরআর্ক (Fore Arc) -এর বিস্তৃতি কেন্দ্রগুলিতে সৃষ্ট মহাসাগরীয় শিলামন্ডল, যা বিপরীত নিমজ্জন (Obduction) প্রক্রিয়াতে মহাদেশীয় শিলামন্ডলের ওপর উত্থিত হয়। পাতসংস্থান (Plate Tectonics) -এর এক প্রধান নির্দেশক হল ওফিওলাইট। ওফিওলাইট হল শিলাপ্রকারের এক সমন্বয় বা সমাহার, যার পেট্রোজেনেটিক ও প্যারাজেনেটিক বৈশিষ্ট্য মধ্য-মহাসাগর শৈলশিরাতে পরিচালিত প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে উৎপত্তি নির্দেশ করে। ওফিওলাইট হল অ্যালোকথনীয় একক (Allochthonous Unit), যা বর্তমানে ভঙ্গিল পর্বত অঞ্চলে দেখা যায়। ওফিওলাইট সামুদ্রিক ভূ-ত্বক এবং নিম্নস্থ শিলামন্ডল ও গুরুমন্ডলের স্থানান্তরিত টুকরো হিসাবে বিবেচিত হয়। ওফিওলাইট হল পৃথিবীর মহাসাগরীয় ভূ-ত্বক ও নিম্নস্থ উর্দ্ধ গুরুমন্ডলের এক অংশ, যা উত্থিত হয়ে মহাদেশীয় ভূ-ত্বকের ওপর প্রতিস্থাপিত ও উন্মুক্ত রয়েছে। কোনো ওফিওলাইট গঠনের সামগ্রিক ভূতাত্ত্বিক অনুক্রমটিকে ওফিওলাইট সুইট (Ophiolite Suite) বলে।
ওফিওলাইট (Ophiolite) শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ ওফিজ (Ophis) অর্থাৎ সাপ এবং লিথোস (Lithos) অর্থাৎ শিলা থেকে এসেছে। সার্পেনটিনাইট সহ কিছু ওফিওলাইট শিলার বর্ণ সাপের ত্বকের মতো। তাই এইরূপ নামকরণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৮১৩ সালে ফরাসি ভূতত্ত্ববিদ আলেকজান্দ্রে ব্রংনিয়ার্ট (Alexandre Brongniart) সার্পেনটিনাইট (Serpentinite) শিলা সম্পর্কে ওফিওলাইট (Ophiolite) শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। ১৮২১ সালে আলেকজান্দ্রে ব্রংনিয়ার্ট ওফিওলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিয়েছিলেন। ১৮২১ সালে তিনি অতিক্ষারকীয় ও আগ্নেয় শিলা, ডায়াবেস, গ্যাব্রো ইত্যাদি শিলাপ্রকার সমন্বয়কে ওফিওলাইট হিসাবে চিহ্নিত করেন। ১৯৭২ সালে জিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ আমেরিকা (Geological Society of America) -এর পেনরোজ সম্মেলন (Penrose Conference) -এ ওফিওলাইটের সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়।
মহাদেশীয়-মহাদেশীয় অভিসারী পাত সীমানাতে দুই মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষের ফলে পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী সমুদ্রে সঞ্চিত পলিস্তরে পার্শ্বচাপ সৃষ্টি হওয়ায় কারণে গিরিজনি প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটে। উভয় পার্শ্ব থেকে প্রবল চাপের ফলে মধ্যবর্তী সামুদ্রিক ভূ-ত্বক খন্ডিত হয়ে পড়ে, চ্যুতি সৃষ্টি হয় এবং ক্ষারকীয় শিলার উদবেধ ঘটে। সমুদ্রে সঞ্চিত পাললিক শিলার মধ্যে এইসব ক্ষারকীয় শিলা অনেক সময় রূপান্তরিত হয়ে একত্রে এক বিশেষ ধরনের শিলায় পরিণত হয়, যা ওফিওলাইট (Ophiolite) নামে পরিচিত। ওফিওলাইট শিলার উপস্থিতি দুই মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষ স্থান নির্দেশ করে। ভূতাত্ত্বিক লেখ্যতে, ওফিওলাইট হল উৎপত্তিগত ভাবে পিলো ব্যাসল্ট, স্তরযুক্ত গ্যাব্রো, শিটেড ডাইক, পডিফর্ম ক্রোমাইট, পেলাজিক অবক্ষেপ, প্ল্যাজিওগ্রানাইট, হার্জবার্গাইট কিংবা/এবং ডুনাইটের এক সংমিশ্রণ। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ওফিওলাইট হল — ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে অবস্থিত সেমাইল ওফিওলাইট (Semail Ophiolite), চিনের ঝুনহুয়া ওফিওলাইট (Zunhua Ophiolite), তিব্বতের ডংবো ওফিওলাইট (Dongbo Ophiolite), দক্ষিণ ভারতের কান্দ্রা ওফিওলাইট (Kandra Ophiolite), উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগা পাহাড় ওফিওলাইট (Naga Hills Ophiolite) ইত্যাদি।
Pingback: Topic - Mélange - ভূগোলিকা-Bhugolika