পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পরিচয় উপাদান

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘পরীক্ষা প্রস্তুতি’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ‘পরীক্ষা প্রস্তুতি’ বিভাগের উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা (Competitive Exams) -তে শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সাহায্য করা। ‘পরীক্ষা প্রস্তুতি’ -এর MISCELLANEOUS বিভাগে সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আলোচনা করা হয়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল : State Identity Elements of West Bengal । এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পরিচয় উপাদানগুলি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লাভ করবেন।

পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) হল ভারত (India) -এর একটি অঙ্গরাজ্য। পশ্চিমবঙ্গ — আয়তন অনুসারে, ভারতের ত্রয়োদশ বৃহত্তম রাজ্য (Thirteenth Largest State by Area) এবং জনসংখ্যা অনুসারে, ভারতের চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য (Fourth Most Populous State)। ভারতের যেকোনো রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো পশ্চিমবঙ্গেরও বিভিন্ন রাজ্য পরিচয় উপাদান (State Identity Elements) রয়েছে। আসুন, একনজরে দেখে নিই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পরিচয় উপাদানগুলি —

(State Identity Elements of West Bengal)

(১) রাজ্য প্রতীক (State Emblem) :

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য প্রতীকের ওপরে রয়েছে ‘অশোক স্তম্ভ’, যা ভারতের জাতীয় প্রতীক। অশোক স্তম্ভের ঠিক নিচে দেবনগরী লিপিতে লেখা রয়েছে ‘सत्यमेव जयते’ (সত্যমেব জয়তে), যা ভারতের জাতীয় নীতিবাক্য বা আদর্শবাণী। সত্যমেব জয়তে শব্দবন্ধটির বাংলা অর্থ হল ‘সত্যেরই জয় হয়’ বা ‘সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী’ (Truth Alone Triumphs)।

এর নিচে রয়েছে একটি নকশাযুক্ত বৃত্ত, যার কেন্দ্রে রয়েছে একটি ভূগোলক (Globe)। ভূগোলকের ওপর পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র হলুদ ও সবুজ রঙে বাংলা বর্ণমালার ‘ব’ বর্ণ দ্বারা লক্ষ্যণীয় করা রয়েছে। ভূগোলকের ওপর এবং নিচে অর্ধচন্দ্রাকারে যথাক্রমে বাংলা ও ইংরেজিতে ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার’ এবং ‘GOVT. OF WEST BENGAL’ লেখা রয়েছে।

২০১৮ সালের ৫ ই জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের এই রাজ্য প্রতীকটি গৃহীত হয়। এই রাজ্য প্রতীকটির নকশাকার (Designer) মমতা ব্যানার্জী। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ভারতের জাতীয় প্রতীক ‘অশোক স্তম্ভ’ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হত।

(২) রাজ্য নীতিবাক্য/আদর্শবাণী (State Motto) :

‘सत्यमेव जयते’ (সত্যমেব জয়তে)

দেবনগরী লিপি (Devanagari Script)-তে ‘সত্যমেব জয়তে’ (सत्यमेव जयते)-এর বাংলা অর্থ ‘সত্যেরই জয় হয়’ বা ‘সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী’ (Truth Alone Triumphs)।

‘সত্যমেব জয়তে’ হল ভারতের জাতীয় নীতিবাক্য/আদর্শবাণী, যা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নীতিবাক্য/আদর্শবাণী হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

উৎস (Source) : হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অর্থব বেদ (Atharva Veda)-এর অন্তর্গত মুন্ডক উপনিষদ (Mundaka Upanishad) -এর একটি মন্ত্র (৩.১.৬)-এর অংশ হল ‘সত্যমেব জয়তে’।

(৩) রাজ্য সঙ্গীত/গান (State Anthem/Song) :

নাম : বাংলার মাটি বাংলার জল (Banglar Mati Banglar Jol)

পাঠ :
বাংলার মাটি বাংলার জল
বাংলার বায়ু বাংলার ফল
পুণ্য হউক পুণ্য হউক
পুণ্য হউক হে ভগবান।

বাংলার ঘর বাংলার হাট
বাংলার বন বাংলার মাঠ
পূর্ণ হউক পূর্ণ হউক
পূর্ণ হউক হে ভগবান।

বাঙালির পণ বাঙালির আশা
বাঙালির কাজ বাঙালির ভাষা
সত্য হউক সত্য হউক
সত্য হউক হে ভগবান।

বাঙালির প্রাণ বাঙালির মন
বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন
এক হউক এক হউক
এক হউক হে ভগবান।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন কালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই দেশাত্মবোধক, প্রার্থনা গীত রচনা করেন।

২০২৩ সালের ৭ ই সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভাতে ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ রাজ্য সঙ্গীত/গান হিসেবে গৃহীত হয়।

(৪) রাজ্য পশু/প্রাণী (State Animal) :

নাম : মেছো বিড়াল বা মেছো বাঘ বা বাঘরোল (Fishing Cat)

বৈজ্ঞানিক নাম : প্রায়োনাইলুরুস ভিভেরিনাস (Prionailurus viverrinus)

মেছো বিড়াল হল ফেলিডি (Felidae) পরিবারের অন্তর্গত প্রায়োনাইলুরুস (Prionailurus) গণের একটি প্রজাতি।

মেছো বিড়াল হল একপ্রকার মাঝারি আকারের বন্য বিড়াল, যা মূলত জলাভূমি অঞ্চলে পাওয়া যায়। IUCN মেছো বিড়ালকে ‘সংকটাপন্ন প্রজাতি’ (Vulnerable Species) হিসেবে ঘোষণা করেছে।

২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক ‘মেছো বিড়াল’ রাজ্য পশু/প্রাণী হিসেবে গৃহীত হয়।

(৫) রাজ্য পাখি (State Bird) :

নাম : সাদাগলা মাছরাঙা বা সাদাবুক মাছরাঙা বা ধলাগলা মাছরাঙা (White-throated Kingfisher)

বৈজ্ঞানিক নাম : হলসিয়ন স্মারনেনসিস (Halcyon smyrnensis)

সাদাগলা মাছরাঙা হল অ্যালসিডিনিডাই (Alcedinidae) পরিবারের হলসিয়ন (Halcyon) গণের অন্তর্গত একপ্রকার গেছো মাছরাঙা (Tree Kingfisher)।

(৬) রাজ্য মাছ (State Fish) :

নাম : ইলিশ (Ilish/Hilsa)

বৈজ্ঞানিক নাম : তেনুয়ালোসা ইলিশা (Tenualosa ilisha)

পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ ইলিশ একপ্রকার সামুদ্রিক মাছ (Marine Fish) এবং অ্যানাড্রোমাস মাছ (Anadromous Fish)। ইলিশ প্রজনন ঋতুতে সমুদ্রের লবণাক্ত জল থেকে নদ-নদীর স্বাদু জলে প্রবেশ করে।

ইলিশ হল ডোরোসোমাটিডি (Dorosomatidae) পরিবারের তেনুয়ালোসা (Tenuloasa) গণের একপ্রকার মাছ।

২০০৬ সালে ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের ‘রাজ্য মাছ’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(৭) রাজ্য ফুল (State Flower) :

নাম : শিউলি (Shiuli/Night-flowering Jasmine)

বৈজ্ঞানিক নাম : নিকটান্থেস আর্বার-ট্রিসটিস (Nyctanthes arbor-tristis)

শিউলি হল ওলিয়াসিয়া (Oleaceae) পরিবারের নিকটান্থেস (Nyctanthes) গণের অন্তর্গত একটি প্রজাতি। শরৎকালে শিউলি ফুল ফোটে এবং শিউলি ফুলকে শারদীয় দুর্গাপূজার ‘আগমনী ফুুল’ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়।

(৮) রাজ্য বৃক্ষ (State Tree) :

নাম : ছাতিম বৃক্ষ/সপ্তপর্ণ বৃক্ষ (Blackboard Tree/Chhatim Tree/Saptaparna Tree)

বৈজ্ঞানিক নাম : অ্যালস্টোনিয়া স্কলারিস (Alstonia scholaris)

ছাতিম হল অ্যাপোসিনেসিয়া (Apocynaceae) পরিবারের অন্তর্গত অ্যালস্টোনিয়া (Alstonia) গণের অন্তর্গত একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতি। ইংরেজিতে এই বৃক্ষ ‘Devil’s Tree’ নামেও পরিচিত।

(৯) রাজ্য ফল (State Fruit) :

নাম : আম (Mango)

বৈজ্ঞানিক নাম : ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা (Mangifera indica)

আম হল অ্যানাকার্ডিয়াসিয়েই (Anacardiaceae) পরিবারের অন্তর্গত ম্যাঙ্গিফেরা (Mangifera) গণের একটি প্রজাতি।

আম হল একপ্রকার ক্রান্তীয় ফল (Tropical Friut)। উল্লেখ্য, ভারতের জাতীয় ফল (National Fruit of India) হল আম।

(State Identity Elements of West Bengal)

উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]

বাঙালি কবি-সাহিত্যিকদের ছদ্মনামের তালিকা