Sunday, June 8, 2025

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভৌগোলিক প্রবন্ধ

Seasonal Diversity of West Bengal

পশ্চিমবঙ্গের ঋতু বৈচিত্র্য

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Seasonal Diversity of West Bengal । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি পশ্চিমবঙ্গের ঋতু বৈচিত্র্য সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

Seasonal Diversity of West Bengal
পশ্চিমবঙ্গের ষড়ঋতু — বামদিকে ওপর থেকে নিচে : গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ এবং ডানদিকে ওপর থেকে নিচে : হেমন্ত, শীত, বসন্ত

পশ্চিমবঙ্গ ঋতু বৈচিত্র্যের রাজ্য। ভৌগোলিক কারণে এখানকার প্রকৃতি ষড়ঋতুর চক্রে আবর্তিত হয়। পশ্চিমবঙ্গে ক্রান্তীয়, উষ্ণ ও আর্দ্র, মৌসুমি জলবায়ু দেখা যায়। বারো মাসে ছয় ঋতু পশ্চিমবঙ্গে বাঙালির জীবনে আনে নব নব রূপ ও রসের অপরূপ ছন্দ। সে কারণেই বুঝি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, “জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হে – তুমি বিচিত্ররূপিনী”। এরাজ্যে প্রতি দুই মাস অন্তর নতুন ঋতুর আবির্ভাব ঘটে। সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন এবং মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ভিত্তিতে উষ্ণতা-আর্দ্রতার তারতম্যে বঙ্গভূমিতে গ্রীষ্ম (Summer), বর্ষা (Rainy), শরৎ (Autumn), হেমন্ত (Late Autumn), শীত (Winter) ও বসন্ত (Spring) — এই ছয়টি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয় এবং প্রকৃতিকে অপরূপ বৈচিত্র্যে ভরিয়ে তোলে। (Seasonal Diversity of West Bengal)

(১) গ্রীষ্মকাল :
বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে, বছরের প্রথম দুই মাস বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি) মিলে গ্রীষ্মকাল। তবে, চৈত্র (মার্চের মাঝামাঝি) থেকে গ্রীষ্মের প্রখরতা শুরু হয় এবং মৌসুমি বায়ু দেরিতে প্রবেশ করলে আষাঢ়ের প্রথমভাগ (জুনের মাঝামাঝি) পর্যন্ত গ্রীষ্মের দাবদাহ অনুভূত হয়। ২১ জুন তারিখে সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান, নদীয়া জেলার উপর কর্কটক্রান্তি রেখা বিস্তৃত হওয়ার কারণে, এই জেলাগুলিতে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। এভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে পেতে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সর্বাধিক উষ্ণতা দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের গড় উষ্ণতা ২৬.৯°C এবং গড় বৃষ্টিপাত ২৪৮.৩ মিমি (আইএমডি, কলকাতা)। রাজধানী কলকাতায় রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ উষ্ণতা হল ৪৩.৯°C। পশ্চিমবঙ্গের উষ্ণতম স্থান কোনটি, এনিয়ে অনেকরকম তথ্য পাওয়া যায়। সাধারণত আসানসোল (৪৫°C)-কে পশ্চিমবঙ্গের উষ্ণতম স্থান বলা হয়। তবে, উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে বহরমপুরে ২৩ শে মে এবং ২ রা আগস্ট, ১৯৮১ তে ৪৮.৩°C উষ্ণতা রেকর্ড করা হয়েছে। আবার, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৯ সালের ২২ শে এপ্রিল ৪৯.২°C উষ্ণতা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে গ্রীষ্মে উত্তরবঙ্গে তুলনামূলক কিছুটা কম উষ্ণতা পরিলক্ষিত হয়। গ্রীষ্মে দার্জিলিং-এ সবচেয়ে কম উষ্ণতা (১৫-২০°C) দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি ও মালভূমি এলাকা দুপুরবেলা প্রচন্ড উত্তপ্ত হয়। ফলে বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে ওপরে ওঠে মেঘের সৃষ্টি করে এবং বিকেলবেলা বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টি হয়, যা কালবৈশাখী (Norwester) নামে পরিচিত। কালবৈশাখীতে কখনো কখনো শিলাবৃষ্টিও ঘটে। কালবৈশাখীর বৃষ্টির ফলে সন্ধ্যাবেলা ও রাতে উষ্ণতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। এসময় দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং প্রভৃতি পার্বত্য অঞ্চলে স্বল্প উষ্ণতার কারণে ব্যাপক পর্যটক সমাগম হয়। বাঁকুড়া-পুরুলিয়া সহ পশ্চিমাংশের জেলাগুলিতে অনেকসময় খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই ঋতুতে কৃষ্ণচূড়া, স্বর্ণচাঁপা, জারুল, কনকচূড়া, করঞ্জা, কামিনী, বরুণ ইত্যাদি ফুল ফোটে। এই ঋতুর প্রধান ফলগুলি হল : আম, লিচু ইত্যাদি।

(২) বর্ষাকাল :
বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে, গ্রীষ্মের পরে দ্বিতীয় ঋতু হল বর্ষাকাল। মূলত আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস মিলে বর্ষাকাল হলেও, ভাদ্র মাসেও বর্ষার প্রভাব দেখা যায়। ইংরেজি মাস অনুসারে, জুনের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই ঋতু বিস্তৃত। সমগ্র মে মাস এবং জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রচন্ড উত্তাপের ফলে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের বিশাল এলাকা জুড়ে এক গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। ফলে জুন মাসের শুরুতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে এবং বর্ষাকালের সূচনা হয়। সাধারণত ১৫ জুনের মধ্যে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখার প্রভাবে নিম্ন উচ্চতার নিম্বাস মেঘের দ্বারা প্রচন্ড বজ্রপাত সহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তরবঙ্গে প্রথম বর্ষার সূচনা ঘটে। পরে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার আগমন ঘটে। তবে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সময় ভীষণভাবে অনিশ্চিত। এজন্য কোনো বছর বর্ষার আগমন কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে যায়। আবার বর্ষাকালে অনেক সময় সাময়িক বৃষ্টিহীন পর্ব দেখা যায়। একে ‘ব্রেক অফ মনসুন’ (Break of Monsoon) বলে। জুলাই মাসে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত ঘটে। বর্ষাকালে উত্তরবঙ্গের গড় উষ্ণতা ২০°C এবং দক্ষিণবঙ্গের গড় উষ্ণতা ৩০°C দেখা যায়। বর্ষাকালে পশ্চিমবঙ্গে ১৬৪৯ মিমি গড় বৃষ্টিপাত ঘটে (আইএমডি, কলকাতা)। তবে অঞ্চলভেদে বৃষ্টিপাতের তারতম্য দেখা যায়। উত্তরবঙ্গে ২০০০-৪০০০ মিমি ; উপকূল অঞ্চলে ২০০০ মিমি ; গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে ১৫০০-২০০০ মিমি এবং পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে ১০০০-১২৫০ মিমি বৃষ্টিপাত ঘটে। পশ্চিমবঙ্গের সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত জেলা এবং স্থান হল আলিপুরদুয়ার এবং বক্সাদুয়ার (আলিপুরদুয়ার জেলা, ৪৫০ সেমি)। আর, পশ্চিমবঙ্গের সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাতযুক্ত জেলা এবং স্থান হল পুরুলিয়া এবং ময়ূরেশ্বর (বীরভূম জেলা, ৫০ সেমি)। বর্ষা ঋতু বাংলার কৃষককূলের কাছে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। কারণ এই মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপরেই ফসল, খাদ্য এবং সুখ-সমৃদ্ধি সবকিছু নির্ভরশীল। কিন্তু মৌসুমি বায়ুর আগমন-প্রত্যাগমনে দেরি এবং অতিবৃষ্টি বা স্বল্প বৃষ্টিতে বাংলার প্রধান ফসল ধানের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতি বৃষ্টিপাতের ফলে নিম্নসমভূমির নানা অঞ্চলে বন্যা দেখা যায়। এসময় নদী নালা, খাল-বিল জলে পূর্ণ থাকে। এই ঋতুতে কদম, বকুল, শাপলা, লিলি, সন্ধ্যামালতি, জুঁই, মালতি ইত্যাদি ফুল ফোটে। এই ঋতুর প্রধান ফলগুলি হল : জামরুল, পেয়ারা, তাল ইত্যাদি।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : ইয়েমেনের নরকের কূপ

(৩) শরৎকাল :
শরৎকাল হল ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু। ভাদ্র ও আশ্বিন মাস (সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের শুরুর দিক) মিলে শরৎকাল। শরৎ-এর শুরুতে বর্ষার প্রভাব দেখা যায়। ভাদ্র মাসে এজন্য আর্দ্রতার পরিমাণ খুব বেশি থাকে। তবে বৃষ্টিপাত ক্রমশ কমতে থাকে। এই সময় সূর্য ক্রমশ মকরক্রান্তির রেখার দিকে হেলতে থাকায়, স্থলভাগে উষ্ণতা হ্রাস পেতে থাকে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে মৌসুমি বায়ু বিদায় নেয়। পশ্চিমবঙ্গে শরৎকাল উৎসবের কাল হিসাবেও বিবেচিত হয়। এই ঋতুতে শারদীয়া দুর্গোৎসব জগৎবিখ্যাত। এসময়ে পরিষ্কার নীল আকাশ পরিলক্ষিত হয় এবং সেই আকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘ এদিকে সেদিকে ভেসে বেড়ায়। শরৎকালে পশ্চিমবঙ্গে গড়ে ২০-৩০°C উষ্ণতা ও ১৬০ মিমি বৃষ্টিপাত দেখা যায়। এই ঋতুতেই কেবলমাত্র পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটে। শরৎকালের পূর্ণিমার চাঁদ বছরের উজ্জ্বলতম পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে থাকে। এই ঋতুতে রাত্রিকালে বিশেষত ভোরবেলা ঠান্ডা পড়তে শুরু করে। দিন ছোট ও রাত বড়ো হতে থাকে। সকালে ঘাসের আগায় শিশির দেখা যায়। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এই সময় দ্বিতীয় ভ্রমণ ঋতু হিসাবে বিবেচিত হয়। এই ঋতুতে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টির কারনে কখনো কখনো প্রবল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, যা পশ্চিমবঙ্গে আশ্বিনের ঝড় নামে পরিচিত। এই ঋতুতে হিমঝুরি, গগনশিরীষ, ছাতিম, শিউলি, কাশ ইত্যাদি ফুল ফোটে। এই ঋতুর প্রধন ফলগুলি হল : জলপাই, আমলকী, চালতা ইত্যাদি।

(৪) হেমন্তকাল :
শরৎ-এর পরের ঋতু হল হেমন্ত, যা বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের সমন্বয়ে (নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি) গঠিত। শরৎকালের পর এই ঋতুর আগমন। হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। প্রকৃতিজুড়ে হেমন্তে শুকনো একটা রূপ উঁকি দেয় বিভিন্ন রূপে। কৃত্তিকা ও আর্দ্রা এই দুটি তারার নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের। ‘মরা’ কার্তিকের পর আসে সর্বজনীন লৌকিক উৎসব নবান্ন। ‘অগ্র’ ও ‘হায়ণ’ এই দুই অংশের অর্থ যথাক্রমে ‘ধান’ ও ‘কাটার মরসুম’। সম্রাট আকবর অগ্রহায়ণ মাসকেই বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস ঘোষণা করেছিলেন। এক সময় বাংলায় বছর শুরু হত হেমন্ত দিয়েই। কারণ, ধান উৎপাদনের ঋতু হল এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন ধান শরৎ-এ বেড়ে ওঠে। আর হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধান পরিপক্ক হয়। হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসব -এর সূচনা হয়। এই ঋতুতে বকফুল, ছাতিম, রাজ অশোক, শিউলি, কামিনী, মল্লিকা প্রভৃতি ফুল ফোটে। এই ঋতুর প্রধান ফলগুলি হল : নারিকেল, বেদানা ইত্যাদি।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে ভারতের ইতিহাস

(৫) শীতকাল :
শীতকাল হল ষড়ঋতুর পঞ্চম ঋতু। বাংলা পৌষ ও মাঘ মাস (ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি) মিলে শীতকাল। মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমনের পর ডিসেম্বর মাস থেকে সমগ্র ভারত উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয়। এই সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে মকরক্রান্তি রেখা উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে পশ্চিমবঙ্গের উপর সূর্য তির্যক ভাবে পতিত হওয়ায় শীতকাল বিরাজ করে। পশ্চিমবঙ্গে উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (-৭ থেকে ৫°C) ও হিমালয়ের পাদদেশস্থ সমভূমি অঞ্চল (৪-৭°C) এবং পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে (৭-১২°C) অধিক শীত দেখা যায়। তুলনায় দক্ষিণবঙ্গের গাঙ্গেয় সমভূমি (১০-১৫°C) ও উপকূল অঞ্চলে (১৫-২০°C) শীতের তীব্রতা তুলনায় কম। পশ্চিমবঙ্গের শীতলতম জেলা হল দার্জিলিংদার্জিলিং হল পশ্চিমবঙ্গের শীতলতম স্থান। ১৯৭১ সালের ৩০ শে জানুয়ারি দার্জিলিং-এ -৭.২°C উষ্ণতা রেকর্ড করা হয়েছে। এই সময়ে বায়ু উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এতে জলীয় বাষ্প থাকে না। তাই শীতকালে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয়না। তবে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারনে কখনো স্বল্পমাত্রায় বৃষ্টিপাত ঘটে। শীতকালে পশ্চিমবঙ্গে গড় বৃষ্টিপাত ৩৮.৫ মিমি (আইএমডি, কলকাতা)। এই ঋতুতে সকালের দিকে কখনো কখনো ঘন কুয়াশা দেখা যায়। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হতে দেখা যায়। শীত হল পাতাঝরার ঋতু। শীতের সময় খেজুরের রস পাওয়া যায়। বাঙালি সংস্কৃতিতে শীত মানেই হরেকরকম পিঠে-পায়েস খাওয়ার ঋতু। এই ঋতুতে বনভোজনের প্রচলন রয়েছে। এই ঋতুতে চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী ইত্যাদি ফুল ফোটে। এই ঋতুর প্রধান ফলগুলি হল : কুল,সফেদা ইত্যাদি।

(৬) বসন্তকাল :
‘বাতাসে বহিছে প্রেম,
নয়নে লাগিল নেশা
কারা যেন ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে।’
বসন্ত পঞ্চমী উৎসব বসন্ত ঋতুর আগমনবার্তা সূচিত করে। বাংলা ফাল্গুন ও চৈত্র মাস (ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি) মিলে বসন্তকাল। এই সময় শুকনো, রৌদ্রোজ্জ্বল, নাতিশীতোষ্ণ আরামদায়ক আবহাওয়া দেখা যায়। তবে বসন্তের শেষ দিকে গ্রীষ্মের পদধ্বনি অনুভূত হয়। বসন্তেই সরস্বতী পূজা এবং দোল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বসন্তে উষ্ণতা ২০-৩০°C এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এই ঋতুতে কখনো কখনো সকালের কুয়াশা সৃষ্টি হয়। বাংলা পঞ্জিকাবর্ষে বসন্ত সর্বশেষ ঋতু হিসেবে স্বীকৃত। বসন্ত ঋতুতে গাছে নতুন পাতা গজায়। এই ঋতুতে কনকচাঁপা, দোলনচাঁপা, নয়নতারা, রুদ্রপলাশ, নাগেশ্বর, শিমুল ইত্যাদি ফুল ফোটে। আবহাওয়ার পরিবর্তন, প্রকৃতিতে নতুন মাত্রা যোগের কারণে বসন্ত ঋতু ‘ঋতুরাজ বসন্ত’ নামে পরিচিত।

প্রকৃতির নিয়মে আমাদের বঙ্গভূমি বিভিন্ন সময় সজ্জিত হয় নানা সাজে। ঋতুচক্রের খেলায় প্রকৃতি আলপনা আঁকে মাটির বুকে, আকাশের গায়ে, মানুষের মনে। তাই ঋতু বদলের সাথে সাথে এখানে জীবনের রঙও বদলায়। তাই তো জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।‘ কিন্তু কালের বিবর্তনে বাংলার ঋতুচক্রের সেই আগের রূপ দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলার ঋতুচক্রে বেশ পরিবর্তন ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র বিশেষভাবে অনুভূত হয় মাত্র চারটি ঋতু। সেগুলি হল : গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত। বর্তমানে বাংলার ঋতুচক্র (Seasonal Diversity of West Bengal) থেকে হেমন্ত এবং বসন্ত ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। (Seasonal Diversity of West Bengal)

https://imojo.in/Xigeosem2

লেখকঃ- অনিরুদ্ধ দাস (দুবড়াখালি, আমাইপাড়া, মুর্শিদাবাদ)
তথ্যসূত্রঃ- গতিশীল জলবায়ুবিদ্যা – ড. বিদ্যুৎ প্রামাণিক ; আনন্দবাজার পত্রিকা ; Wikipedia ; IMD Kolkata ; ভারতের ভূগোল -শুভাশিষ চক্রবর্তী ও প্রসেনজিৎ ব্যানার্জি ; পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল – অলোক পাল ; ভূগোল ও পরিবেশ – সমরেন্দ্রনাথ মোদক

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : প্রসঙ্গ – বাস্তুতান্ত্রিক পদচিহ্ন

7 thoughts on “Seasonal Diversity of West Bengal

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!