Sunday, June 8, 2025

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভৌগোলিক প্রবন্ধ

Nature’s Paradise – Nilgiri

প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য নীলগিরি

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Nature’s Paradise – Nilgiri । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি পর্বত সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

Nature's Paradise - Nilgiri
নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চল, তামিলনাড়ু

দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি পর্বত (Nilgiri Mountain) প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে এবং পর্যটনে এক সুপরিচিত নাম। নীলগিরি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ নীলমগিরি থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার আক্ষরিক অর্থ নীল পর্বত (Blue Mountain)। ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণে, পশ্চিমঘাট পর্বত ও পূর্বঘাট পর্বতের মিলনকেন্দ্র হল নীলগিরি। তবে অনেক সময়, নীলগিরি পর্বতকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নীলগিরি পর্বত মূলত তামিলনাডুর উত্তর-পশ্চিমাংশের অন্তর্গত, তবে সামান্য কিছু অংশ কর্ণাটকের দক্ষিণাংশে ও কেরালার পূর্বাংশে রয়েছে। অনন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের কারণে, নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চল ‘প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য’ রূপে পরিচিত (Nature’s Paradise – Nilgiri)।

নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চল মায়ার নদী দ্বারা উত্তরে কর্ণাটক মালভূমি থেকে এবং পালঘাট গ্যাপ দ্বারা দক্ষিণে আনাইমালাই ও পালনি পাহাড় থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভূতাত্ত্বিক ভাবে, নীলগিরি পর্বত আর্কিয়ান যুগে সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞ্চলটি প্রধানত রূপান্তরিত শিলা (নিস, চার্নোকাইট ও শিস্ট) দ্বারা গঠিত। নীলগিরি পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল — দোদাবেতা (Doddabetta), যার উচ্চতা ২৬৩৭ মিটার। বিখ্যাত শৈলশহর উটি (Ooty) থেকে দোদাবেতার দূরত্ব মাত্র ৪ কিমি। এছাড়াও নীলগিরি পর্বতে ২০০০ মিটারের বেশি উচ্চতাযুক্ত একাধিক শৃঙ্গ রয়েছে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য — কোলারিবেতা (২৬৩০ মিটার), মাকুর্নি (২৫৯৪ মিটার), হেকুবা (২৩৭৫ মিটার), মুত্তুনাড়ুবেতা (২৩২৩ মিটার), দেবশোলা (২২৬১ মিটার) প্রভৃতি। নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলে একাধিক জলপ্রপাত রয়েছে। কোলাকাম্বাই ফলস্ (Kolakambai Falls) হল নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলের উচ্চতম জলপ্রপাত, যার উচ্চতা ১২০ মিটার। এছাড়া এই অঞ্চলের অনান্য জলপ্রপাতগুলি হল — ক্যাথেরিন ফলস্ (Catherine Falls), পাইকারা ফলস্ (Pykara Falls), কলহাট্টি ফলস্ (Kalhatti Falls) প্রভৃতি। নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলে তিনটি জাতীয় উদ্যান পরস্পর মিলিত হয়েছে – মুদুমালাই জাতীয় উদ্যান (Mudumalai National Park), মুকুর্থি জাতীয় উদ্যান (Mukurthi National Park), সাইলেন্ট ভ্যালি জাতীয় উদ্যান (Silent Valley National Park)

নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলটি নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (Nilgiri Biosphere Reserve) -এর অন্তর্গত। ১৯৮৬ সালে স্থাপিত এটিই হল ভারতের প্রথম সংরক্ষিত জীবমন্ডল (India’s First Biosphere Reserve)। নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলে ৩৩০০+ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ রয়েছে, যার মধ্যে ১৩২ টি স্থানিক প্রজাতি (Endemic Species)। এছাড়া ১৬০ প্রজাতির ফার্ন ও ১৭৫ প্রজাতির অর্কিড পাওয়া যায়। নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলে তৃণভূমি বেষ্টিতে ‘শোলা অরণ্য’ (Shola Forest) দেখা যায়। এই অঞ্চলের প্রাণী প্রজাতির বৈচিত্র্যও লক্ষ্যণীয়। নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভে ১০০-এরও বেশি প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩০০+ প্রজাতির পাখি, ৮০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩৯ প্রজাতির মাছ, ৩১ প্রজাতির উভচর এবং ৩০০+ প্রজাতির প্রজাপতি দেখা যায় [সূত্র : Vikaspedia & Tamilnadu Biodiversity Board]। নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলে বাঘ, হাতি, চিতা, বাইসন, চিতল হরিণ, সম্বর হরিণ, ঢোলে (বন্য কুকুর), শিয়াল, সোনালি শিয়াল, অ্যান্টিলোপ, হায়েনা, মালাবার জায়ান্ট স্কুইরেল, প্যাঙ্গোলিন, নীলগিরি তহর প্রভৃতি স্তন্যপায়ী; ভারতীয় পাইথন, কিং কোবরা, নীলগিরি কীলব্যাক প্রভৃতি সরীসৃপ ; ময়ূর, শকুন, হর্ণবিল, পেঁচা, বুলবুল প্রভৃতি নানাপ্রকার পাখি দেখা যায়। উল্লেখ্য, নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ও সন্নিকটস্থ অঞ্চলে ভারতের সর্বাধিক সংখ্যক হাতি রয়েছে।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : ফারাক্কা বাঁধের ইতিকথা

১৮৯৯ সালে নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলে নীলগিরি পার্বত্য রেলপথ (Nilgiri Mountain Railway) স্থাপিত হয়। মেট্টুপালায়ম থেকে উটি পর্যন্ত বিস্তৃত এই রেলপথের দৈর্ঘ্য ৪৬ কিমি। এ ধরনের রেলপথ ‘টয় ট্রেন’ নামে পরিচিত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও হিমাচল প্রদেশের কালকা-সিমলা পার্বত্য রেলপথের সাথে নীলগিরি পার্বত্য রেলপথও ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট (Unesco World Heritage Site) -এর মর্যাদা লাভ করেছে। ২০০৫ সালে এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পেয়েছে। নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলে ১৩০০-২৪০০ মিটার উচ্চতায় প্রতি ১২ বছর অন্তর একবার নীল রঙের কুরিঞ্জি (Kurinji) ফুল ফোটে। কুরিঞ্জি একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ, যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘Strobilanthes kunthiana’। এই ফুল ফুটলে মৌমাছির আধিক্য বেড়ে যায়। মূলত জুলাই-নভেম্বরের মধ্যে এই ফুল ফোটে। শেষবার ২০১৮ সালে নীলগিরি অঞ্চলে এই ফুল ফুটেছিল। সুতরাং, ২০৩০ সাল নাগাদ আবারও এই ফুল ফুটবে। নীলগিরি অঞ্চলে কৃষিকাজেও পিছিয়ে নেই। এই অঞ্চলে চা, কফি, বিভিন্ন মশলা, আলু, বাঁধাকপি, গাজর, নানাপ্রকার ফল (যেমন : লিচু, রাম্বুটান, ম্যাঙ্গোস্টিন প্রভৃতি) উৎপাদিত হয়।

দক্ষিণ ভারতের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন অঞ্চল নীলগিরি। সবুজ পাহাড়ি উপত্যকা, জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অরণ্য, জলপ্রপাত ও হ্রদ প্রভৃতি আকর্ষণের কারণে প্রতি বছর এখানে বিপুল পরিমাণে পর্যটক সমাগম হয়। নীলগিরির সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র — উটি (Ooty)। এছাড়া কুন্নুর, কোটাগিরি, দোদাবেতা, পাইকারা, মুদুমালাই টাইগার রিজার্ভ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য পর্যটন আকর্ষণ। নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলে একাধিক উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। উল্লেখযোগ্য উপজাতি গোষ্ঠীগুলি হল— টোডা (Toda), কোটা (Kota), কুরুম্বা (Kurumba), ইরুলা (Irula), পনিয়া (Paniya) প্রভৃতি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য, উপজাতি সংস্কৃতি প্রভৃতির মিশেলে নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চল সাধারণ পর্যটক থেকে ভৌগোলিক প্রত্যেককে হাতছানি দিয়ে ডাকে। প্রকৃতির এই স্বর্গরাজ্যে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যে কারও জন্য বড়ো প্রাপ্তি (Nature’s Paradise – Nilgiri)।

উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]

লেখিকাঃ- দেবিকা হালদার (জলঙ্গী, মুর্শিদাবাদ)

তথ্যসূত্রঃ- Encyclopaedia Britannica ; আনন্দবাজার পত্রিকা ; Official Website of Nilgiri District, Tamilnadu ; Nilgiri Water Portal ; Vikapedia ; Tamilnadu Biodiversity Board ; Nilgiri Biosphere Reserve (NBR)

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : বাংলার ধানের গোলা – পূর্ব বর্ধমান

2 thoughts on “Nature’s Paradise – Nilgiri

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!