National Pollution Control Day
জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস (National Pollution Control Day)

আজ ২ রা ডিসেম্বর (2 December), জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস (National Pollution Control Day)। ভারতে প্রতি বছর ২ রা ডিসেম্বর তারিখটি জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস রূপে পালিত হয়। উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালের ২ রা ডিসেম্বর-৩ রা ডিসেম্বর তারিখে মধ্যপ্রদেশের ভূপালে ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড (Union Carbide India Limited) -এর কারখানাতে বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট (MIC) গ্যাস নির্গত হয়ে ৩৭৮৭ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনা ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা (Bhopal Gas Tragedy) নামে পরিচিত। এই ঘটনার স্মরণে ভারতে প্রতি বছর ২ রা ডিসেম্বর তারিখটি জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস রূপে পালিত হয়। জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল : দূষণের বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, স্থিতিশীল অনুশীলনের প্রচার করা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টায় জনসাধারণের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা। জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবসের লক্ষ্য হল — বায়ু, জল, মাটি এবং শব্দ দূষণ থেকে মানব স্বাস্থ্য এবং পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য কঠোর শিল্প সুরক্ষা ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন পরিবেশগত অনুশীলন এবং শক্তিশালী নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা।
প্রাকৃতিক পরিবেশে যখন ক্ষতিকারক বা অবাঞ্ছিত পদার্থের প্রবেশের ফলে পরিবেশের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে এবং জীবের জীবনধারণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তখন তাকে দূষণ (Pollution) বলে। অন্যভাবে বলা যায় — ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক কারণে পরিবেশের কোনো উপাদানের যে কোনো ধরনের নেতিবাচক পরিবর্তনই হল দূষণ। যেসব উপাদান দূষণ সৃষ্টি করে, তাদের দূষক (Pollutant) বলে। দূষণের কারণ দুই প্রকার — (১) প্রাকৃতিক কারণ : যেমন — অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত বিভিন্ন গ্যাস ও ছাই (২) মানবসৃষ্ট কারণ : যেমন — শিল্পক্ষেত্রে কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া। দূষণ প্রধানত ৪ প্রকার — বায়ু দূষণ (Air Pollution), জল দূষণ (Water Pollution), মাটি দূষণ (Soil Pollution) ও শব্দ দূষণ (Sound Pollution)। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার দূষণ রয়েছে। যেমন — আলোক দূষণ (Light Pollution), আর্সেনিক দূষণ (Arsenic Pollution), প্লাস্টিক দূষণ (Plastic Pollution), তেজস্ক্রিয় দূষণ (Radioactive Pollution) ইত্যাদি।
দূষণের প্রধান কারণগুলি হল — (১) শিল্পায়ন : শিল্পক্ষেত্রে কলকারখানা থেকে ধোঁয়া ও বর্জ্য জল নির্গমন (২) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার : শিল্প ও পরিবহন ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস) -এর ব্যবহার (৩) কৃষিক্ষেত্র : কৃষিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার (৪) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ও আবর্জনা নিক্ষেপণ (৫) দুর্ঘটনা : দুর্ঘটনার কারণে তেল নিঃসরণ, ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ, তেজস্ক্রিয় বিকিরণ। দূষণের প্রধান ফলাফল হল — (১) পরিবেশে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয় (২) জীবজগতের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয় (৩) মানবদেহে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালের ২২ শে সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (Central Pollution Control Board) স্থাপিত হয়। দূষণ প্রতিরোধে ভারত সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যেমন — জল দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন (১৯৭৪), বায়ু দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন (১৯৮১), পরিবেশ সুরক্ষা আইন (১৯৮৬), শব্দ দূষণ প্রবিধান ও নিয়ন্ত্রণ আইন (২০০০), জীববৈচিত্র্য আইন (২০০২) ইত্যাদি।