Sunday, June 8, 2025

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

MISCELLANEOUS

National Identity Elements of India

ভারতের জাতীয় পরিচয় উপাদান

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘পরীক্ষা প্রস্তুতি’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ‘পরীক্ষা প্রস্তুতি’ বিভাগের উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা (Competitive Exams) -তে শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সাহায্য করা। ‘পরীক্ষা প্রস্তুতি’ -এর MISCELLANEOUS বিভাগে সকল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আলোচনা করা হয়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল : National Identity Elements of India । এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি ভারতের জাতীয় পরিচয় উপাদানগুলি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লাভ করবেন।

National Identity Elements of India

 

দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্গত ভারত (India) হল আয়তন অনুসারে, পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম দেশ (Seventh-Largest Country by Area) এবং জনসংখ্যা অনুসারে, পৃথিবীর সর্বাধিক জনবহুল দেশ (Most Populous Country)। যেকোনো দেশের মতো ভারতেরও বিভিন্ন জাতীয় পরিচয় উপাদান (National Identity Elements) রয়েছে। আসুন, একনজরে দেখে নিই ভারতের জাতীয় পরিচয় উপাদানগুলি —

(National Identity Elements of India)

(১) জাতীয় পতাকা (National Flag) :

প্রচলিত নাম : তিরঙ্গা (Tricolour)।

আদিরূপ : স্বরাজ পতাকা (Swaraj Flag)।

নকশাকার (Designer) : পিঙ্গলি ভেঙ্কাইয়া (Pingali Venkayya)।

ভারতের জাতীয় পতাকার উচ্চতা ও প্রস্থের অনুপাত (Proportion of Height & Width) হল ২ : ৩ এবং ২০০২ সালের ভারতের পতাকা বিধি (Flag Code of India) অনুসারে, আকৃতি অনুপাত (Aspect Ratio) হল ৩ : ২

বর্ণ (Colour) : অনুভূমিক ত্রিবর্ণ (Horizontal Triband) — উপরে গেরুয়া/কেশরী (India Saffron), মাঝে সাদা (White) এবং নিচে সবুজ (India Green)। ভারতের জাতীয় পতাকার মধ্যভাগে, সাদা আয়তাকার অংশের মাঝে রয়েছে গাঢ় নীল (Navy Blue) বর্ণের অশোক চক্র (Ashoka Chakra)। অশোক চক্রে ২৪ টি দন্ড/অর (Spoke) রয়েছে।

উল্লেখ্য, গেরুয়া বর্ণ ত্যাগ, সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের প্রতীক ; সাদা বর্ণ শান্তি ও সত্যের প্রতীক ; সবুজ বর্ণ প্রাণপ্রাচুর্য, বৃদ্ধি ও উৎকৃষ্টতার প্রতীক।

অশোক চক্র হল মৌর্য সম্রাট অশোক (৩০৪-২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) কর্তৃক প্রবর্তিত ধর্মচক্র (Dharmachakra)। বর্তমান উত্তরপ্রদেশের অন্তর্গত সারনাথ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থল থেকে প্রাপ্ত মৌর্য সম্রাট অশোক কর্তৃক ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত ‘অশোকের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষ’-এর ধর্মচক্র থেকে ভারতের জাতীয় পতাকাতে অশোক চক্র গৃহীত হয়েছে।

অশোক চক্র ন্যায় ও ধর্মের প্রতীক। অশোক চক্র প্রদর্শন করে যে — ‘চলমানতা-তে জীবন এবং স্থবিরতা-তে মৃত্যু রয়েছে’ (Life in Movement & Death in Stagnation)

১৯৪৭ সালের ২২ শে জুলাই ভারতের গণপরিষদ বা সংবিধান সভা (Constituent Assembly of India) দ্বারা ‘ভারতের জাতীয় পতাকা’ গৃহীত হয়। ১৫ ই আগস্ট, ১৯৪৭ থেকে ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৫০ পর্যন্ত ভারত অধিরাজ্য (Dominion of India) এবং ২৬ শে জানুয়ারি, ১৯৫০ থেকে ভারত গণরাজ্য (Republic of India)-এর জাতীয় পতাকা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

(২) রাষ্ট্রীয় প্রতীক/জাতীয় প্রতীক (National Emblem) :

নাম : অশোক স্তম্ভ (Ashoka Stambh)।

ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতীক/জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভ হল বর্তমান উত্তরপ্রদেশের অন্তর্গত সারনাথ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থল থেকে প্রাপ্ত মৌর্য সম্রাট অশোক কর্তৃক ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত ‘অশোকের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষ’-এর রূপান্তর প্রতিরূপ।

ভারতের রাষ্ট্রীয়/জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভে তিনটি সিংহের প্রতিকৃতি দেখা যায়, যা শক্তি, সাহস, আত্মবিশ্বাস ও গর্বের প্রতীক। এর নিচে মধ্যভাগে অশোক চক্র বা ধর্মচক্র রয়েছে। অশোক চক্রের বামদিকে দৌড়ায়মান ঘোড়া এবং ডানদিকে ষাঁড় রয়েছে। দৌড়ায়মান ঘোড়া আনুগত্য, গতি ও কর্মশক্তির প্রতীক এবং ষাঁড় কঠোর পরিশ্রম ও অবিচলতার প্রতীক।

অশোকের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষের ঠিক নিচে দেবনগরী লিপি (Devanagari Script)-তে লেখা রয়েছে ‘সত্যমেব জয়তে’ (सत्यमेव जयते), যা ভারতের জাতীয় নীতিবাক্য বা আদর্শবাণী। সত্যমেব জয়তে শব্দবন্ধটির বাংলা অর্থ হল ‘সত্যেরই জয় হয়’ বা ‘সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী’ (Truth Alone Triumphs)।

১৯৪৭ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর ভারত অধিরাজ্য (Dominion of India) কর্তৃক একটি আয়তাকার কাঠামোতে সারনাথে প্রাপ্ত অশোকের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষের প্রতিরূপকে সরকারি রাষ্ট্রীয় প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালের ২০ শে জানুয়ারি ‘সত্যমেব জয়তে’-এর ওপর অশোকের সিংহচতুর্মুখ স্তম্ভশীর্ষের রূপান্তর প্রতিরূপ ভারত গণরাজ্য (Republic of India)-এর ‘রাষ্ট্রীয়/জাতীয় প্রতীক’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(৩) জাতীয় নীতিবাক্য/আদর্শবাণী (National Motto) :

‘सत्यमेव जयते’ (সত্যমেব জয়তে) 

দেবনগরী লিপি (Devanagari Script)-তে ‘সত্যমেব জয়তে’ (सत्यमेव जयते)-এর বাংলা অর্থ ‘সত্যেরই জয় হয়’ বা ‘সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী’ (Truth Alone Triumphs)। ভারতের রাষ্ট্রীয়/জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভের নিচে জাতীয় নীতিবাক্য/আদর্শবাণী লেখা রয়েছে।

উৎস (Source) : হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অর্থব বেদ (Atharva Veda)-এর অন্তর্গত মুন্ডক উপনিষদ (Mundaka Upanishad) -এর একটি মন্ত্র (৩.১.৬)-এর অংশ হল ‘সত্যমেব জয়তে’।

১৯১৮ সালে তৎকালীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি পন্ডিত মদনমোহন মালব্য এই বাক্যাংশটিকে জাতীয় স্তরে জনপ্রিয় করে তোলেন।

১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ভারত গণরাজ্য (Republic of India) -এর ‘জাতীয় নীতিবাক্য/আদর্শবাণী’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(৪) জাতীয় সঙ্গীত/রাষ্ট্রগীত (National Anthem) :

নাম : জন-গণ-মন (Jana-Gana-Mana)।

পাঠ :

জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পাঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মারাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছ্বল জলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় হে।।

১৯১১ সালের ১১ ই ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গান রচনা করেন।

স্বরলিপিকার : দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রাগ : ইমন এবং তাল : কাহারবা।

১৯১১ সালের ২৭ শে ডিসেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত ভারতের জাতীয় কংগ্রেস-এর ২৬-তম অধিবেশনে সরলা দেবী চৌধুরানী সর্বপ্রথম জনসমক্ষে এই গান পরিবেশন করেন।

১৯১২ সালে ব্রাহ্ম সমাজের মুখপত্র ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’-তে ‘ভারত ভাগ্য বিধাতা’ শিরোনামে ৫ স্তবকের এই গান প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতবিতান সঙ্গীত-সংকলনের স্বদেশ পর্যায়ভুক্ত ১৪ সংখ্যক গান হল ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঞ্চয়িতা কাব্য-সংকলনে এই গান ‘ভারত-বিধাতা’ শিরোনামে মুদ্রিত রয়েছে।

১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি ভারতের গণপরিষদ বা সংবিধান সভা (Constituent Assembly of India) দ্বারা ‘ভারত ভাগ্য বিধাতা’ গানের প্রথম স্তবকটি ‘ভারতের জাতীয় সঙ্গীত/রাষ্ট্রগীত’ হিসেবে গৃহীত হয়।

ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের পূর্ণাঙ্গ সংস্করণের সময়সীমা ৫২ সেকেন্ড এবং সংক্ষিপ্ত সংস্করণের সময়সীমা ২০ সেকেন্ড

(৫) জাতীয় স্তোত্র/জাতীয় গান/রাষ্ট্র গান (National Song) :

নাম : বন্দেমাতরম্ (Vande Mataram)।

পাঠ :

বন্দে মাতরম্।
সুজলাং সুফলাং
মলয়জশীতলাম্
শস্যশ্যামলাং
মাতরম্!
বন্দে মাতরম্।

শুভ্র-জ্যোৎস্না
পুলকিত-যামিনীম্
ফুল্লকুসুমিত
দ্রুমদলশোভিনীম্,
সুহাসিনীং
সুমধুরভাষিণীম্
সুখদাং বরদাং
মাতরম্।।
বন্দে মাতরম্।

১৮৭৫ সালের ১০ ই ডিসেম্বর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই গান রচনা করেন এবং ১৮৮১-৮২ সালে বঙ্গদর্শন পত্রিকাতে আনন্দমঠ উপন্যাসে সর্বপ্রথম এই গান প্রকাশিত হয়। ১৮৮২ সালে বন্দেমাতরম্ গান সহ আনন্দমঠ উপন্যাস গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী যদুভট্ট বা যদুনাথ ভট্টাচার্য সর্বপ্রথম এই গানে সুর (রাগ : মল্লার) দিয়েছিলেন৷ ১৮৮৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বালক’ পত্রিকাতে ‘দেশ’ রাগে এই গানের স্বরলিপি প্রকাশ করেন।

১৮৯৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ১২-তম অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গান পরিবেশন করেন।

১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক এই গানের প্রথম দুটি স্তবক ‘ভারতের জাতীয় গান’ (National Song of India) রূপে গৃহীত হয়।

১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি ভারতের গণপরিষদ বা সংবিধান সভা (Constituent Assembly of India) দ্বারা এই গানের প্রথম দুটি স্তবক ‘ভারতের জাতীয় গান/রাষ্ট্রগান’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(৬) জাতীয় দিবস (National Days) :

ভারতের জাতীয় দিবস ৩ টি১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস (Independence Day), ২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস/সাধারণতন্ত্র দিবস/গণতন্ত্র দিবস (Republic Day) এবং ২ রা অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তী (Gandhi Jayanti/Birthday of M.K. Gandhi)।

স্বাধীনতা দিবস : ১৯০ বছরের (১৭৫৭-১৯৪৭) ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।

প্রজাতন্ত্র দিবস : ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান (Constitution of India) কার্যকর হয় এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারত একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র (ভারত গণরাজ্য, Republic of India) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

গান্ধী জয়ন্তী : ১৮৬৯ সালের ২ রা অক্টোবর বর্তমান গুজরাটের পোরবন্দরে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জন্মগ্রহণ করেন। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে শীর্ষ নেতৃত্বের একজন। ১৯৪৮ সালের ২ রা অক্টোবর প্রথমবার গান্ধী জয়ন্তী উদযাপন করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৫ ই আগস্ট, ২৬ শে জানুয়ারি ও ২ রা অক্টোবর — এই ৩ টি দিন ভারত সরকার কর্তৃক জাতীয় ছুটি দিবস (National Holidays) রূপে পালিত হয়।

(৭) জাতীয় মুদ্রা (National Currency) :

নাম : ভারতীয় রুপি (Indian Rupee)।

প্রতীক (Symbol) : ₹

সংকেত (Code) : INR

রুপি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ রুপ্য (Rupya) অর্থাৎ রূপা (Silver) থেকে এসেছে।

প্রতি ভারতীয় রুপি ১০০ পয়সাতে উপবিভক্ত রয়েছে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (Reserve Bank of India) ভারতীয় রুপি জারি ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারতীয় রুপি জাতীয় মুদ্রা হিসেবে গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ১৫ ই জুলাই ভারতীয় রুপির প্রতীকটি (₹) ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়। দেবনগরী অক্ষর ‘র’ এবং ইংরেজি অক্ষর ‘R’-এর সংমিশ্রণে এই প্রতীক তৈরি করা হয়েছে। এই প্রতীকের নকশাকার উদয় কুমার ধর্মলিঙ্গম (Udaya Kumar Dharmalingam)

(৮) জাতীয় বর্ষপঞ্জি (National Calendar) :

নাম : শক বর্ষপঞ্জি (Shaka Calender)।

শক বর্ষপঞ্জি একপ্রকার সৌর বর্ষপঞ্জি (Solar Calendar)। এই বর্ষপঞ্জিতে বছরগুলিকে সন বা শকাব্দ বলা হয়। এই বর্ষপঞ্জিতে বছরের দিন সংখ্যা ৩৬৫ (অধিবর্ষে ৩৬৬) এবং মাস সংখ্যা ১২

এই বর্ষপঞ্জিতে প্রথম মাস চৈত্র, যার দিন সংখ্যা ৩০ (অধিবর্ষে ৩১)। ইংরেজি গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১ লা চৈত্র হল ২১ শে বা ২২ শে মার্চ। এরপর রয়েছে যথাক্রমে বৈশাখ (দিন সংখ্যা ৩১), জৈষ্ঠ্য (দিন সংখ্যা ৩১), আষাঢ় (দিন সংখ্যা ৩১), শ্রাবণ (দিন সংখ্যা ৩১), ভাদ্র (দিন সংখ্যা ৩১), আশ্বিন (দিন সংখ্যা ৩০), কার্তিক (দিন সংখ্যা ৩০), অগ্রহায়ণ (দিন সংখ্যা ৩০), পৌষ (দিন সংখ্যা ৩০) ও মাঘ (দিন সংখ্যা ৩০) মাস। এই বর্ষপঞ্জির শেষ মাস ফাল্গুন, যার দিন সংখ্যা ৩০।

৭৮ খ্রিস্টাব্দে শক বর্ষপঞ্জির সূচনা ঘটে। তাই, ইংরেজি গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি থেকে শক বর্ষপঞ্জি ৭৮ বছর পিছিয়ে রয়েছে। শক বর্ষপঞ্জির উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। পূর্বে প্রচলিত মত অনুসারে, কুষাণ সম্রাট কণিষ্ক (Kanishka I)-এর সিংহাসনে আরোহণ কালে শকাব্দে সূচনা ঘটে। তবে বর্তমান নতুন গবেষণা থেকে জানা গেছে, কার্দমক ক্ষত্রপ চষ্টন (Chashtana) এই বর্ষপঞ্জির প্রচলন করেন। ভিন্নমতে, সাতবাহন রাজা শালিবাহন (Shalivahana) এই বর্ষপঞ্জির প্রচলন করেন।

১৯৫৭ সালের ২২ শে মার্চ (শক বর্ষপঞ্জি অনুসারে, ১ লা চৈত্র, ১৮৭৯) ভারত সরকার কর্তৃক এই বর্ষপঞ্জি ‘জাতীয় বর্ষপঞ্জি’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(৯) জাতীয় পশু (National Animal) :

নাম : বাংলার বাঘ (Bengal Tiger) বা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger)।

বৈজ্ঞানিক নাম : প্যানথেরা টাইগ্রিস টাইগ্রিস (Panthera tigris tigris)।

বাংলার বাঘ বা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার হল বাঘের একটি উপপ্রজাতি (Subspecies)। হলুদ-কালো ডোরাকাটা দাগের এই মাংসাশী প্রাণী স্বভাবে রাজকীয় প্রকৃতির।

১৯৭২ সালের ১৮ ই নভেম্বর ভারত সরকার কর্তৃক বাংলার বাঘ ‘জাতীয় পশু’ হিসেবে গৃহীত হয়। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ভারতের জাতীয় পশু ছিল এশীয় সিংহ (Asiatic Lion)

১৯৭৩ সালের ১ লা এপ্রিল ভারত সরকার বাঘ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ‘ব্যাঘ্র প্রকল্প’ (Project Tiger)-এর সূচনা করে। বাঘ সুমারী-২০২২ অনুসারে, ভারতে বাঘের সংখ্যা কমপক্ষে ৩১৬৭ টি (All India Tiger Estimation 2022)। বর্তমানে (ডিসেম্বর, ২০২৪) ভারতে ‘টাইগার রিজার্ভ’ (Tiger Reserve) -এর সংখ্যা ৫৭। পৃথিবীর মোট বন্য বাঘের ৭৫% ভারতে রয়েছে। বর্তমানে ভারতের ২০ টি রাজ্যে বাঘের উপস্থিতি রয়েছে।

(National Identity Elements of India)

(১০) জাতীয় পাখি (National Bird) :

নাম : ভারতীয় ময়ূর (Indian Peafowl/Common Peafowl/Blue Peafowl)।

বৈজ্ঞানিক নাম : পাভো ক্রিস্টাটাস (Pavo cristatus)।

ভারতীয় সভ্যতায় ময়ূরের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। ১৯৬৩ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি ভারত সরকার কর্তৃক ভারতীয় ময়ূর ‘জাতীয় পাখি’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(১১) জাতীয় ঐতিহ্যবাহী পশু (National Heritage Animal) :

নাম : ভারতীয় হাতি (Indian Elephant)।

বৈজ্ঞানিক নাম : এলিফাস ম্যাক্সিমাস ইন্ডিকাস (Elephas maximus indicus)।

ভারতীয় হাতি হল এশীয় হাতি (Asian Elephant) -এর একটি উপপ্রজাতি (Subspecies)। ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে হাতির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

ভারতীয় হাতি হল ভারতের বৃহত্তম স্থলজ স্তন্যপায়ী (Largest Terrestrial Mammal of India)। বিশ্বের মোট এশীয় হাতির ৬০% ভারতে রয়েছে। হাতি সুমারী-২০১৭ অনুসারে, ভারতে ২৯,৯৬৪ টি হাতি রয়েছে। বর্তমানে (ডিসেম্বর, ২০২৩) ভারতে ‘এলিফ্যান্ট রিজার্ভ’ (Elephant Reserve)-এর সংখ্যা ৩৩

২০১০ সালের ২২ শে অক্টোবর ভারত সরকার কর্তৃক ভারতীয় হাতি ‘জাতীয় ঐতিহ্যবাহী পশু’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(১২) জাতীয় বৃক্ষ (National Tree) :

নাম : বট (Banyan/Indian Banyan/Banyan Fig)।

বৈজ্ঞানিক নাম : ফাইকাস বেঙ্গলেনসিস (Ficus benghalensis)।

বট একপ্রকার ক্রান্তীয় উদ্ভিদ। ভারতের ধর্ম ও সংস্কৃতিতে বট বৃক্ষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৫০ সালে ভারত সরকার কর্তৃক বট ‘জাতীয় বৃক্ষ’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(১৩) জাতীয় ফল (National Fruit) :

নাম : আম (Mango)।

বৈজ্ঞানিক নাম : ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা (Mangifera indica)।

আম হল একপ্রকার ক্রান্তীয় ফল (Tropical Friut)। আম উৎপাদনে ভারত বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে।

১৯৫০ সালে ভারত সরকার কর্তৃক আম ‘জাতীয় ফল’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(১৪) জাতীয় ফুল (National Flower) :

নাম : পদ্ম/ভারতীয় পদ্ম (Lotus/Indian Lotus/Sacred Lotus/Padma/Kamal)

বৈজ্ঞানিক নাম : নেলাম্বো নুসিফেরা (Nelumbo nucifera)।

ভারতের ধর্ম ও সংস্কৃতিতে পদ্ম ফুল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৫০ সালে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্ম ‘জাতীয় ফুল’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(১৫) জাতীয় জলজ প্রাণী (National Aquatic Animal) :

নাম : গাঙ্গেয় শুশুক বা গাঙ্গেয় ডলফিন (Gangetic Dolphin/Ganges River Dolphin)।

বৈজ্ঞানিক নাম : প্ল্যাটানিস্টা গ্যাঞ্জেটিকা (Platanista gangetica)।

গাঙ্গেয় শুশুক স্তন্যপায়ী শ্রেণীর একপ্রকার স্বাদুজলের শুশুক বা নদী শুশুক

২০১০ সালের ১৮ ই মে ভারত সরকার কর্তৃক গাঙ্গেয় শুশুক ‘জাতীয় জলজ প্রাণী’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(১৬) জাতীয় সরীসৃপ (National Reptile) :

নাম : শঙ্খচূড় বা রাজ গোখরা (King Cobra)।

বৈজ্ঞানিক নাম : ওফিয়োফ্যাগাস হান্নাহ্ (Ophiophagus hannah)

শঙ্খচূড় বা রাজগোখরা হল পৃথিবীর দীর্ঘতম বিষধর সাপ (World’s Longest Venomous Snake)

(১৭) জাতীয় নদী (National River) :

নাম : গঙ্গা (Ganges/Ganga)।

অন্যান্য নাম : ভাগীরথী (Bhagirathi), জাহ্নবী (Jahnabi) ইত্যাদি।

গঙ্গা ভারতের দীর্ঘতম নদী (India’s Longest River)। ভারতীয় সভ্যতা এবং ভারতের ধর্ম ও সংস্কৃতিতে গঙ্গা নদীর অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। গঙ্গা হল ভারতের পবিত্রতম নদী

২০০৮ সালের ৪ ঠা নভেম্বর ভারত সরকার কর্তৃক গঙ্গা ‘জাতীয় নদী’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(১৮) জাতীয় অণুজীব/জীবাণু (National Microbe) :

নাম : ল্যাক্টোব্যাসিলাস ডেলব্রুকি উপপ্রজাতি বুলগারিকাস (Lactobacillus delbrueckii subsp. bulgaricus)।

ল্যাক্টোব্যাসিলাস ডেলব্রুকি উপপ্রজাতি বুলগারিকাস হল একপ্রকার ব্যাকটেরিয়া, যা প্রধানত দই তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই ব্যাকটেরিয়া ভারতীয় সংস্কৃতি ও জীবনধারার এক অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০১২ সালের ১৮ ই অক্টোবর ভারত সরকার কর্তৃক ল্যাক্টোব্যাসিলাস ডেলব্রুকি উপপ্রজাতি বুলগারিকাস ‘জাতীয় অণুজীব’ বা ‘জাতীয় জীবাণু’ হিসেবে গৃহীত হয়।

(National Identity Elements of India)

উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]

ভারতের ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট

5 thoughts on “National Identity Elements of India

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!