পুরুলিয়ার মিনি সুন্দরবন

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Mini Sundarban of Purulia । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি পুরুলিয়ার মিনি সুন্দরবন নামে পরিচিত যোগমায়া সরোবর সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

সুন্দরবন!… তাও আবার রুক্ষ-শুষ্ক পুরুলিয়া জেলাতে! শুনতে অবাক লাগলেও, পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর ব্লকের অন্তর্গত যোগমায়া সরোবর (যা রঞ্জনডিহ জলাধার নামেও পরিচিত) ইতিমধ্যেই পুরুলিয়াবাসী এবং পর্যটকদের নিকট ‘মিনি সুন্দরবন’ নামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পুরুলিয়ার কাশীপুর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে সড়কপথে মাত্র ৭ কিমি দূরে, রঞ্জনডি গ্রামের নিকটে অবস্থিত যোগমায়া সরোবর (Jogmaya Sarobar)-ই হল পুরুলিয়ার ‘মিনি সুন্দরবন’ (‘Mini Sundarban of Purulia’), যা শীতকালীন ভ্রমণের এক দারুণ অফবিট ডেস্টিনেশন (Offbeat Destination)।

যোগমায়া সরোবর বা রঞ্জনডিহ জলাধার (Ranjandih Reservoir) প্রকৃতপক্ষে একটি কৃত্রিম জলাধার, যা স্থানীয় খরাপ্রবণ এলাকায় জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচীতে গড়ে উঠেছে। ঢালু অববাহিকা ধরে গড়ে ওঠা যোগমায়া সরোবর আকারে আয়তক্ষেত্রের মতো, তবে উত্তর ও পশ্চিম দিক থেকে কয়েকটি ছোটো নালা (জোড়) এই সরোবরে এসে মিশেছে। যোগমায়া সরোবরের পরিধি মোটামুটি ৩-৩.৫ কিমি। নিঃসন্দেহে এখানে সুন্দরবনের মতো সুন্দরী-গরান-গেঁওয়া ইত্যাদি গাছ নেই। কিন্তু এই জলাধারের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে সোনাঝুরি গাছের বিস্তীর্ণ অরণ্য রয়েছে। বিশেষত, এই জলাধারের উত্তর ও দক্ষিণদিকের বিস্তৃত পাড় বরাবর স্থানে স্থানে জলমগ্ন সোনাঝুরি গাছ এবং সরোবরের বুকে কয়েকটি দ্বীপ আপনাকে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যকে মনে করিয়ে দেবে। এখানকার নির্জন, কোলাহলহীন পরিবেশ-প্রকৃতি যেকোন মানুষেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। যোগমায়া সরোবরের পূর্ব পাড়ে বাঁধানো সিঁড়ি রয়েছে, যেখানে বসে যেকোনো পর্যটকই চারিদিকে সবুজে মোড়া বিস্তীর্ণ জলরাশির সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হবেন।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : সিকিয়াঝোরা – ডুয়ার্সের আমাজন

সুন্দরবনের সাথে তুলনা অত্যুক্তি হলেও, যোগমায়া সরোবরের বিশেষ আকর্ষণ হল পরিযায়ী পাখি। শীতকালে পুরুলিয়া জেলার অন্যান্য জলাভূমি-জলাধারগুলির মতো, এখানেও বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখা যায়। এখানে লালঝুঁটি ভুতিহাঁস/রাঙ্গামুড়ি হাঁস (Red-crested Pochard), ছোট সরালী/বালি হাঁস (Lesser Whistling Duck), উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস (Northern Pintail), পিয়াং হাঁস (Gadwall), জলময়ূর (Pheasant-tailed Jacana) প্রভৃতি পাখি দেখা যায়। কংসাবতী উত্তর বন বিভাগের অন্তর্গত যোগমায়া সরোবর সংলগ্ন সোনাঝুরি জঙ্গলকে অভয়ারণ্য হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের। যোগমায়া সরোবরে বোটিং-নৌকাবিহার বিশেষ জনপ্রিয়। জনপ্রতি ৪০ টাকা নৌকা বিহার ও ৬০ টাকা বোটিং চার্জ নেওয়া হয়, যা সরোবরের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, যোগমায়া সরোবর পর্যটন স্থলে প্লাস্টিক দ্রব্য বর্জনীয়।

যোগমায়া সরোবরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রয়েছে যোগমায়া সরোবর গেস্ট হাউস। সাম্প্রতিক কালে পর্যটক সমাগম বৃদ্ধি পাওয়াতে, স্থানীয় প্রশাসনের তরফে যোগমায়া সরোবর সংলগ্ন এলাকায় একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের তরফে, ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি কমিউনিটি টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি হাইমাস্ট লাইট লাগানো হয়েছে। সোলার ডিপটিউবওয়েল গড়ে তোলা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ‘আই লাভ কাশীপুর’ (I Love Kashipur) সেল্ফি পয়েন্ট। এছাড়া শিশুদের জন্য পার্কও গড়ে তোলা হয়েছে। পুরুলিয়া থেকে ভায়া লধুড়কা হয়ে সড়কপথে কাশীপুরের দূরত্ব ৩৭ কিমি। আবার, আদ্রা থেকে সড়কপথে কাশীপুরের দূরত্ব মাত্র ৯ কিমি। তাই, আপনার সপ্তাহান্তের পর্যটন তালিকায় রাখতেই পারেন পুরুলিয়ার ‘মিনি সুন্দরবন’ যোগমায়া সরোবর-কে।

উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]

লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- আনন্দবাজার পত্রিকা ; Official Website of Purulia District ; বর্তমান পত্রিকা ; নিউজ ১৮ বাংলা ; Google Map ; সংবাদ প্রতিদিন ; Purulia Tours

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : সোলার ম্যাক্সিমাম ও সোলার মিনিমাম