Mama-Bhagne Hill of Birbhum
বীরভূমের মামা-ভাগ্নে পাহাড়
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Mama-Bhagne Hill of Birbhum । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি বীরভূমের মামা-ভাগ্নে পাহাড় সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার দুবরাজপুর শহরের নিকট অবস্থিত মামা-ভাগ্নে পাহাড় (Mama-Bhagne Hill) এক জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকে, ছোটোনাগপুর মালভূমির একেবারে ক্ষয়িষ্ণু পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত মামা-ভাগ্নে পাহাড় হল বীরভূম জেলার একমাত্র পাহাড়। ইতিহাস বলছে, কয়েক শতক আগে আজকের দুবরাজপুর পৌরসভা আদিবাসী অধ্যুষিত ‘জঙ্গল দুবরাজপুর’ নামে পরিচিত ছিল এবং সেসময় মামা-ভাগ্নে পাহাড়ের প্রস্তরময় ভূখন্ডটি ‘পাহাড়েশ্বর’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৮০-এর দশকে পাহাড়েশ্বর দুবরাজপুর পৌরসভার আওতায় এলেও, ২০০০ সালের পরে পাহাড়েশ্বরে সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং ‘পাহাড়েশ্বর পার্ক’ (শিশু উদ্যান) গড়ে ওঠে। সমতল ভূমিতে গড়ে ওঠা বীরভূমের দুবরাজপুর শহরের আশেপাশে কোথাও পাহাড় বা টিলা নেই। একমাত্র ব্যতিক্রম ‘মামা-ভাগ্নে পাহাড়’, যার উৎপত্তি নিয়ে অনেক কিংবদন্তী প্রচলিত রয়েছে। মামা-ভাগ্নে পাহাড়ের উৎপত্তি নিয়ে মূলত দু’টি কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। এক, সেতুবন্ধনের উদ্দেশ্যে শ্রীরামচন্দ্রের সেনা হিমালয় থেকে পাথর নিয়ে দক্ষিণে যাওয়ার পথে কিছু পাথর পড়ে মামা-ভাগ্নে পাহাড় তৈরি হয়। দুই, শিব ঠাকুরের নির্দেশে বিশ্বকর্মা যখন দ্বিতীয় কাশী নির্মাণ করছিলেন, তখন কিছু পাথর পড়ে মামা-ভাগ্নে পাহাড় তৈরি হয়।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : চ্যাংমারি চা বাগান
ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে, মামা-ভাগ্নে পাহাড় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গোলাকার গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত এক পাহাড়। এখানকার গ্রানাইট শিলাগুলি মূলত কাচিক কোয়ার্টজ, গোলাপি-ধূসর ফেল্ডস্পার এবং বায়োটাইট (কৃষ্ণ অভ্র) দ্বারা গঠিত। মামা-ভাগ্নে পাহাড় প্রায় এক বর্গকিমি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং বিভিন্ন আকৃতির গ্রানাইট শিলা দ্বারা সজ্জিত হয়ে এই পাহাড় গড়ে উঠেছে। এখানকার সবচেয়ে বড়ো দুই শিলা (যার একটির উচ্চতা ১৫ ফুট এবং অপরটির উচ্চতা ১২ ফুট) একে অপরকে যেন জড়িয়ে রয়েছে। বড়ো শিলাটি মামা ও ছোটোটি ভাগ্নে নামে পরিচিত এবং এ থেকেই এই পাহাড় ‘মামা-ভাগ্নে পাহাড়’ নামে পরিচিত হয়েছে। মামা-ভাগ্নে শিলাজোড়া আসলে ভারসাম্য শিলা (Balancing Rock)। বড়ো শিলাটি অপেক্ষাকৃত ছোটো শিলার ওপর ভারসাম্য অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। মামা-ভাগ্নে পাহাড়ের উচ্চতা ১২৯ মিটার বা ৪২৩ ফুট (Google Earth)। ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে, মামা-ভাগ্নে পাহাড় হল আর্কিয়ান যুগের ছোটোনাগপুর গ্রানাইট নিস কমপ্লেক্স (CGGC)-এর একটি সম্প্রসারিত অংশ (Datta and Sarkar 2019 ; Datta 2020)। মামা-ভাগ্নে পাহাড় প্রকৃতপক্ষে এক ‘টর’ (Tor) জাতীয় ভূমিরূপ। আবহবিকার ও ক্ষয়ের ফলে অন্তঃস্থ গ্রানাইট শিলা ভূপৃষ্ঠে উন্মুক্ত হয়ে প্রস্তরখন্ড সজ্জিত ভূমিরূপ (মামা-ভাগ্নে পাহাড়) গড়ে উঠেছে। মামা-ভাগ্নে পাহাড় পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ জিওমরফোসাইট (Geomorphosite)।
সবুজে মোড়া মামা-ভাগ্নে পাহাড়ের সৌন্দর্য সত্যিই রোমাঞ্চকর। ঝোপ-জঙ্গলের পরিবেশে কখনও বা বাঁদরের দলের দেখা মিলতে পারে। এছাড়া মামা-ভাগ্নে পাহাড়ের ওপর থেকে দুবরাজপুর শহর ও চারিপাশের সবুজ সমতলভূমির সৌন্দর্য অতুলনীয়। মামা-ভাগ্নে পাহাড়ের ওপর রয়েছে মা পাহাড়েশ্বরীর মন্দির (মা শ্যামাঙ্গী কালী মন্দির) এবং পাহাড়েশ্বরী যোনিপীঠ। মামা-ভাগ্নে পাহাড়ের নিচে রয়েছে তিলেশ্বর মহাদেব মন্দির এবং পাহাড়েশ্বর পার্ক। উল্লেখ্য, সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অভিযান (১৯৬২) সিনেমার শুটিং হয়েছিল মামা-ভাগ্নে পাহাড়ে। কার্যত এই সিনেমাই মামা-ভাগ্নে পাহাড়কে বিখ্যাত করে তুলেছিল। এমনকি, সত্যজিৎ রায় রচিত ফেলুদা কাহিনী ‘রবার্টসনের রুবি’ (১৯৯১)-তে মামা-ভাগ্নে পাহাড়ের উল্লেখ রয়েছে। তবে, পরিবেশবিদ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কংক্রিটের আড়ালে মামা-ভাগ্নে পাহাড় অবহেলিত। পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে নির্মাণ মামা-ভাগ্নে পাহাড়ে বেমানান নির্মাণকাজ হয়েছে। রয়েছে যথাযথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সমস্যা। এছাড়া, পাথরের গায়ে পর্যটকদের একাংশ কর্তৃক নানারকম লেখালিখি বেশ দৃষ্টিকটু। আশাকরি, প্রাকৃতিক পরিবেশকে ঠিকমতো সংরক্ষণ করে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে মামা-ভাগ্নে পাহাড়ের উন্নয়নে দুবরাজপুর পৌরসভা উদ্যোগী হবে। (Mama-Bhagne Hill of Birbhum)
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]
লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- আনন্দবাজার পত্রিকা ; বর্তমান পত্রিকা ; Wikipedia ; নিউজ ১৮ বাংলা ; জি ২৪ ঘন্টা ; The Telegraph ; Official Website of Birbhum District/Tourism ; CPREEC – EIACP Programme Centre, Resource Partner on Ecological Heritage and Sacred Sites of India ; Google Earth ; Calculation of area, mapping and vulnerability assessment of a geomorphosite from GPS survey and high resolution Google Earth satellite image: a study in Mama Bhagne Pahar, Dubrajpur C. D. block, Birbhum district, West Bengal (2019) – Krishanu Datta, Somnath Sarkar – Spatial Information Research
Very Nice
Pingback: Chengmari Tea Garden//চ্যাংমারি চা বাগান - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Longwa Village of Dual Citizenship//দ্বৈত নাগরিকত্বের লংওয়া গ্রাম - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Kurkure Chhatu of Jangalmahal//জঙ্গলমহলের কুড়কুড়ে ছাতু - ভূগোলিকা-Bhugolika
সুন্দর…
ধন্যবাদ ❤️
খুব সুন্দর, সমৃদ্ধ হলাম
….
Very Nice!
Very Nice
Pingback: Lonar Lake of Deccan - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Deomali of Odisha Travel - ভূগোলিকা-Bhugolika