ভালোবাসা : ঠিকানা তোমার বলো খুঁজি কোথায়!

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Love : Where is Your Address । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি ভূগোলের আলোকে এই পৃথিবী, সৌরজগৎ ও মহাবিশ্ব জুড়ে ভালোবাসার হৃদয়াকৃতি চিহ্ন সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

“তুমি কতো যে দূরে,
কোথা যে হারিয়ে গেলে,
আমার জীবন হতে…
ঠিকানা নেই… বলো
খুঁজি কোথায়…?”
— রাহুলদেব বর্মন ও আশা ভোঁসলের কন্ঠে এই জনপ্রিয় গান আমরা অনেকেই শুনেছি। ভালোবাসার মানুষটির ঠিকানার খোঁজ কে না পেতে চায়! প্রতি বছর ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন’স্ দিবস (Valentine’s Day), অর্থাৎ, ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। মূলত পশ্চিমী দুনিয়া সহ প্রায় সারা বিশ্বেই এই দিনটি পালিত হয়ে থাকে। আর ভালোবাসার চিহ্ন হল — ❤️(হৃদয়াকৃতি)। আসুন, ভূগোলের আলোকে পৃথিবী, সৌরজগৎ ও মহাবিশ্ব জুড়ে সেই ভালোবাসার ঠিকানা খুঁজে বেড়াই —

(১) দ্বীপ (Island) : পৃথিবীতে এরকম অনেক দ্বীপ আছে, যেগুলির আকৃতি পুরোপুরি বা অনেকাংশ ❤️-এর মতো। যেমন — ফিজি দ্বীপপুঞ্জের তাভারুয়া দ্বীপ (Tavarua Island) ; অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড প্রদেশে নুসা নদীর ওপর মেকপিস আইল্যান্ড (Makepeace Island) ; অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট বেরিয়ার রিফের ‘হার্ট রিফ’ (Heart Reef) ; ইকুয়েডরের মানাবি প্রদেশের ইসলা কোরাজন (Isla Corazon) ; ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের নেত্রানি দ্বীপ (Netrani Island) প্রভৃতি।

(২) হ্রদ (Lake) : পৃথিবীতে এরকম অনেক হ্রদ রয়েছে, যেগুলির আকৃতি পুরোপুরি বা অনেকাংশে ❤️-এর মতো। যেমন — আয়ারল্যান্ডের লেইনস্টার প্রদেশের লোফ ওউলার হ্রদ (Lough Ouler Lake) ; ফ্রান্সের মন্টাগনন হ্রদ (Lac du Montagnon) ; কানাডার অন্টারিও প্রদেশের ওমপাহ্ -এর নিকট হার্ট লেক (Heart Lake) ; ভারতের কেরালা রাজ্যে পশ্চিমঘাট পর্বতের চেম্ব্রা শৃঙ্গের নিকট ইরোস হ্রদ (Eros Lake) ; সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর আল কুদ্রার নিকট ‘লাভ লেক’ (Love Lake) প্রভৃতি।

(৩) উল্কাপিন্ড (Meteorite) : নাহ, এটি পৃথিবীর নয়, তবে মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে এসেছে। হৃদয়াকৃতি (❤️)-এর উল্কাপিন্ড। ২৬️ মিটার চওড়া এই উল্কাপিন্ডের নাম ‘দ্য হার্ট অফ স্পেস’ (The Heart of Space)। ১৯৪৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল একটি উল্কাখণ্ড। রাশিয়ার সার্বিয়ার শিখোটে-আলিন পর্বতের উপর এই উল্কাটি পড়েছিল। উল্কার অভ্যন্তরীণ পাথর পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, সেটি প্রায় ৩২০ মিলিয়ন বছরের পুরনো এবং এর ওজন ছিল প্রায় ৯০০ কেজি। পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার সময় বায়ুমন্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে এর অধিকাংশ অংশ জ্বলে পুড়ে যায়।

(৪) নীহারিকা (Nebula) : অসীম ব্রহ্মান্ডেও আমরা ❤️ চিহ্ন খুঁজে পাব, যদি পৃথিবী থেকে ৭৫০০ আলোকবর্ষ দূরের ‘হৃদয় নীহারিকা’ (Heart Nebula) তে যাই! ১৭৮৭ সালের ৩ রা নভেম্বর উইলিয়াম হার্শেল (William Herschel) কর্তৃক আবিষ্কৃত হৃদয় আকৃতির এই নীহারিকাটি ‘IC-১৮০৫’ নামেও পরিচিত। ক্যাসিওপিয়া (Cassiopeia) নক্ষত্রমন্ডলের অন্তর্গত এই নীহারিকাটি প্রায় ১৬৫ আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে।

(৫) বামন গ্রহ প্লুটো (Dwarf Planet Pluto) : বামন গ্রহ প্লুটোতেও পাওয়া গেছে ভালোবাসার চিহ্ন ❤️। প্লুটোর নিরক্ষরেখার ঠিক উত্তরে অবস্থিত ‘টমবাউ রিজিও’ (Tombaugh Regio)। এই হৃদয়াকৃতি চিহ্নের অঞ্চলই হল প্লুটোর বৃহত্তম উজ্জ্বল ভূপৃষ্ঠীয় গঠন (Largest Bright Surface Feature)। অনেকে একে ‘প্লুটোর হৃদয়’ (Pluto’s Heart) বলে থাকেন। ১৫৯০ কিমি ব্যাসের এই অঞ্চলটির নাম প্লুটোর আবিষ্কর্তা ক্লাইড টমবাউ (Clyde Tombaugh) -এর নামেই রাখা হয়েছে। এটিকে প্রথম শনাক্ত করে নিউ হরাইজন মহাকাশযান (New Horizon Spacecraft)।

(Love : Where is Your Address)

ভালো লাগলে, আপনার ভালোবাসার মানুষের প্রতি শেয়ার করতেই পারেন এই পোস্ট, আজকের দিনে! আর আপনার সেই বিশেষ মানুষটির কন্ঠে আপনি শুনতে পাবেন —
“আমি তো আছি, আছি তোমারি,
তোমারি কাছে, তোমারি পাশে,
তোমাতে মিশে, তোমাতে আমি ফিরে আসি!”।
ভালো থাকুক, ভালোবাসা ❤️

(Love : Where is Your Address)

লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- NASA ; Wikipedia ; আনন্দবাজার পত্রিকা ; ESA ; Space Magazine

উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-II]

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : ফুলের উপত্যকা – ক্ষীরাই