Kokborok Day
ককবরক দিবস (Kokborok Day)
আজ ১৯ শে জানুয়ারি (19 January), ককবরক দিবস (Kokborok Day), যা ত্রিপুরী ভাষা দিবস (Tripuri Language Day) নামেও পরিচিত। প্রতি বছর ১৯ শে জানুয়ারি তারিখটি ককবরক দিবস বা ত্রিপুরী ভাষা দিবস রূপে পালিত হয়। ককবরক দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল ককবরক ভাষার চর্চা বৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক উন্নতিসাধন। উল্লেখ্য, ককবরক বা ত্রিপুরী হল উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা (Tripura) রাজ্যের একটি সরকারি ভাষা (Official Language)। ১৯৭৯ সালের ১৯ শে জানুয়ারি ত্রিপুরা সরকার ককবরক বা ত্রিপুরী ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা প্রদান করে। সেই উপলক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে প্রথমবার ককবরক দিবস পালিত হয়। ককবরক (Kokborok) বা ত্রিপুরী (Tripuri) হল একটি তিব্বতীয়-বার্মীয় (Tibeto-Burman) ভাষা। কক (Kok) শব্দটির অর্থ হল ভাষা এবং বরক (Borok) শব্দটির অর্থ হল মানুষ (ত্রিপুরী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী)। অর্থাৎ ককবরক শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ত্রিপুরী মানুষের ভাষা।
ককবরক ভাষা পূর্বে ত্রিপুরী বা তিপরা কক (Tipra Kok) নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে এই ভাষা মূলত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগে প্রচলিত রয়েছে। ভারতের জনগণনা ২০১১ অনুসারে, ককবরক বা ত্রিপুরী ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ১৩ লক্ষ। ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা অনুসারে, ত্রিপুরা রাজ্যের দ্বিতীয় প্রধান ভাষা হল ককবরক (ত্রিপুরা রাজ্যের প্রধান ভাষা বাংলা)। ভারতের জনগণনা ২০১১ অনুসারে, ত্রিপুরার ২৫.৯০% অধিবাসীর ভাষা হল ককবরক। মৌখিক ইতিহাস অনুসারে, খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে কোলোমা (Koloma) লিপিতে দুর্লবেন্দ্র চোনতাই (Durlobendra Chontai) ককবরক ভাষাতে রাজরত্নাকর (Rajratnakar) বা রাজমালা (Rajmala) শীর্ষক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে শুক্রেশ্বর ও বাণেশ্বর নামের দুই ব্রাহ্মণ সংস্কৃত ও বাংলা ভাষায় রাজমালা অনুবাদ করেন। ১৯০০ সালে রাধামোহন ঠাকুর ‘কক-বরক-মা’ (Kók-borok-ma) গ্রন্থ রচনা করেন, যা ছিল ত্রিপুরী ভাষার প্রথম ব্যাকরণ গ্রন্থ। এই গ্রন্থ থেকেই ককবরক শব্দটি উৎপত্তি লাভ করে। ১৯৯৪ সালে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ককবরক শিক্ষা (Certificate Course) চালু হয়। ২০০১ এবং ২০১৫ সালে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা এবং মাস্টার অফ আর্টস্ (M.A.) ডিগ্রি চালু হয়।
ককবরক বা ত্রিপুরী ভাষাতে কয়েকটি সাধারণ শব্দ হল — খুলুম কা (বাংলা অর্থ : নমস্কার), বাহাই (বাংলা অর্থ : কেমন), ফাইদি (বাংলা অর্থ : আসুন), আচুকদি (বাংলা অর্থ : বসুন), আং (বাংলা অর্থ : আমি), নিনি (বাংলা অর্থ : আপনার), মুঙ (বাংলা অর্থ : নাম), আমিঙ (বাংলা অর্থ : বিড়াল), মুসুক (বাংলা অর্থ : গরু), মায়ুং (বাংলা অর্থ : হাতি)। ককবরক বা ত্রিপুরী ভাষাতে কয়েকটি সাধারণ বাক্য হল — তাম চানাই সাদি (বাংলা অর্থ : কি খাবেন বলুন), আর তাম ওংখা (বাংলা অর্থ : ওখানে কি হয়েছে) ; দাকতি ফাইদি (বাংলা অর্থ : তাড়াতাড়ি এসো), আও থাংগানু (বাংলা অর্থ : হ্যাঁ যাচ্ছি), আনি মুঙ (বাংলা অর্থ : আমার নাম)।
Pingback: Parakram Divas - ভূগোলিকা-Bhugolika