Khazan Agriculture of Goa
গোয়ার খজান কৃষি
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Khazan Agriculture of Goa । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনব ভারতের গোয়া রাজ্যের খজান কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

মানুষ কর্তৃক উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক জন্ম ও বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ দ্রব্য উৎপাদনের প্রক্রিয়াই হল কৃষিকাজ (Agriculture)। কৃষিকাজ হল একটি প্রাথমিক অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ (Primary Economic Activity)। ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু ভেদে পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকার কৃষি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। পশ্চিম উপকূলে আরব সাগরের তীরে অবস্থিত গোয়া হল ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্য। গোয়ার অর্থনীতিতে সর্বপ্রধান দুই ক্ষেত্র হল পর্যটন এবং খনি। যদিও গোয়ার জিডিপিতে কৃষিক্ষেত্রের অবদান ৫ শতাংশেরও কম, তবুও উপকূলীয় এই রাজ্যে বৈচিত্র্যময় কৃষি পদ্ধতির প্রচলন দেখা যায়। খজান কৃষি (Khazan Agriculture) হল গোয়ার উপকূলীয় নিম্নভূমি অঞ্চলে প্রচলিত এক সুপ্রাচীন কৃষিব্যবস্থা। (Khazan Agriculture of Goa)
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : মহাদেশ সংযোগকারী বসফরাস সেতু
খজান (Khazan) শব্দটি চলিত কোঙ্কণি শব্দ ‘খরসান’ (Kharsan) থেকে এসেছে, যার অর্থ হল ‘লবণাক্ততা’ (Saltiness)। আবার, খরসান শব্দটি সম্ভবত সংস্কৃত শব্দ ক্ষারজনক (Ksharjanaka) থেকে এসেছে, যার অর্থ হল লবণ উৎপাদক। সাধারণত গোয়া উপকূলে ম্যানগ্রোভ প্রান্তযুক্ত নদী মোহনার নিকটস্থ লবণতা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় পুনরুদ্ধারকৃত যেকোনো নিম্নভূমিকে ‘খজান ভূমি’ (Khazan Land) বলে। প্রকৃত খজান ভূমি হল যত্নসহকারে পরিকল্পিত এক ভূ-জল-প্রকৌশলিত (Topo-Hydro-Engineered) কৃষিজ-জলকৃষিজ (Agro-Aquacultural) বাস্তুতন্ত্র। খজান ভূমি গঠনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি হল লবণতা ব্যবস্থাপনার নীতি এবং জোয়ারী সময়ের তথ্যজ্ঞান। অর্থাৎ খজান ভূমির অস্তিত্ব নির্ধারণ করে স্বাদুজল (বৃষ্টিপাত + অ্যাকুইফার) ও নোনাজল (মোহনা) -এর প্রবাহ এবং প্রাপ্যতার মধ্যে ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ। আর এই খজান ভূমিতে যে কৃষিব্যবস্থা প্রচলিত, তাই হল খজান কৃষি। গোয়াতে প্রধানত মান্ডবী, জুয়ারি, তিরাকোল, চাপোরা, বাগা, তালপোনা, গলগিবাগা প্রভৃতি নদী মোহনা অঞ্চলে খজান ভূমি দেখা যায়।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : বাঁকুড়ার ডোকরা গ্রাম বিকনা
খজান ভূমি ও কৃষির প্রায় ২০০০ বছরের সুপ্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। গোয়ার প্রাচীন ভোজ রাজাদের সময়কালে ভূমি প্রদানে ‘খজান ভূমি’-র উল্লেখ পাওয়া যায়। খজান ভূমির তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল : বাঁধ (Bund), স্লুইস গেট (Sluice Gate), পোইম (Poim)। নদীর জোয়ার থেকে কৃষিভূমিকে রক্ষা করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এজন্য বাইরের দিকে স্থানীয় পাথর ও কাদামাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এছাড়া ম্যানগ্রোভও জোয়ারের প্রকোপ হ্রাসে সাহায্য করে। আর ভেতরের দিকে খড়, পাথর ও কাদামাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়, যা পুষ্টিমৌল ধৌতকরণ রোধ করে। জলতল নিয়ন্ত্রণ করতে কৃষিভূমিতে প্রবেশের আগে নদীমুখে কাঠ বা কংক্রিটের স্লুইস গেট তৈরি করা হয়। এই স্লুইস গেটে লাগানো জাল জোয়ারের সময় জলে ভেসে আসা মাছ, কাঁকড়া প্রভৃতিকে পুনরায় ফিরে যেতে দেয়না। খজান ভূমির প্রান্তে ক্ষুদ্র সেচ জলাশয় ‘পোইম’ তৈরি করা হয়, যা রবিশস্য চাষে ব্যবহৃত হয়।
খজান কৃষিতে উৎপাদিত ফসলগুলি হল — ধান (কোরগুট ধান), রাগি, ডাল, আম, নারকেল, কাজু, শাকসবজি প্রভৃতি। এছাড়া অ্যাকোয়াকালচার (Aquaculture) -এর মাধ্যমে মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া প্রভৃতি পাওয়া যায়। পূর্বে খজান কৃষিভূমি ‘ভাউ’ (Bhau) অর্থাৎ স্থানীয় কৃষক রক্ষণ পরিষদ দ্বারা পরিচালিত হত। তবে স্বাধীনতা লাভ এবং গোয়ার ভারত-ভুক্তির পরে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে। বস্তুত এরপরই দুর্বল পরিচালন ব্যবস্থা, কৃষিতে অনাগ্রহ, বাণিজ্যিক মৎস্যচাষের প্রতি ঝোঁক প্রভৃতি কারণে খজান কৃষির প্রচলন ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। তবে সাম্প্রতিক কালে, গোয়া সরকার কৃষি-উন্নয়নে জোর দিয়েছে, ফলে আশা করা যায় খজান কৃষি পুনরায় উন্নতিলাভ করবে।
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-II]
লেখিকাঃ- তানিয়া খাতুন (চাঁপাডাঙা, হুগলি)
তথ্যসূত্রঃ- Herald Goa ; Wikipedia ; India Water Portal ; History of Khazan Land Management in Goa: Ecological, Economic and Political Perspective – Conference Paper (2004) – Dr. Nandkumar M. Kamat ; Jagran Josh ; Down To Earth
Pingback: Topic - Ecotone & Edge Effect - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Asia's Cleanest River Dawki - ভূগোলিকা-Bhugolika
Very Good
Pingback: Tusu Festival of Rarh Region - ভূগোলিকা-Bhugolika