Sunday, June 8, 2025

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভৌগোলিক প্রবন্ধ

Janda’s Alur Dum’s Fair of Hooghly

হুগলির জাঁদার ‘আলুর দমের মেলা’

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Janda’s Alur Dum’s Fair of Hooghly । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি হুগলির জাঁদার ‘আলুর দমের মেলা’ সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

Janda's Alur Dum's Fair of Hooghly
আলুর দমের মেলা, জাঁদা, হুগলি

মেলা লোকসংস্কৃতির পরিচয়বাহী। বাংলা তথা ভারতের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হল মেলা। গ্রামীণ ভারতের ভিত্তিই হল কৃষিকাজ। আর কৃষিকাজকে কেন্দ্র করেই ভারতের অর্থনীতির ভিত্তি রচিত হয়েছে। ঋতু অনুসারে কৃষি ও কৃষিজ ফসল উৎপাদনের সাথে গ্রামবাংলার নাড়ির টান রয়েছে। তাই এই ঋতুভিত্তিক কৃষিকাজকে কেন্দ্র করে সুদীর্ঘকাল ধরে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে বিবিধ মেলা-উৎসবের প্রচলন রয়েছে। এমনই এক পল্লী মেলা হল ‘জাঁদার মেলা’ (Fair of Janda)। যেমন আমন ধান ঘরে তোলাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাংলায় ‘নবান্ন’ উৎসব আয়োজিত হয়, ঠিক তেমনই মাঠে নতুন আলু ওঠাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি (Hooghly) জেলায় সুপ্রাচীন ‘জাঁদার মেলা’ আয়োজিত হয়ে থাকে, যা ‘আলুর দমের মেলা’ (Alur Dum’s Fair) নামেও সুপ্রসিদ্ধ।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : প্রসঙ্গ – কার্স্ট ভূমিরূপ স্পেলিওথেম

অবাক লাগছে? আলুর দমের আবার মেলাও হয়? হুগলি জেলার দামোদর নদ (Damodar River) তীরবর্তী আলু উৎপাদনকারী এলাকায় আলুকে কেন্দ্র করে একাধিক মেলা হয়। তবে সবথেকে প্রাচীন ও জনপ্রিয় মেলা হল রাজবলহাটের নিকট জাঁদার মেলাতারকেশ্বর থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিন (এক দিনই) এই মেলা বসে। তারকেশ্বর থেকে চাঁপাডাঙ্গা হয়ে রাজবলহাট যাওয়ার পথেই পড়বে জাঁদা ; সেখানেই দামোদর নদের তীরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। জাঁদার মেলা কত পুরানো? জাঁদার মেলার বয়স প্রায় ২০০ বছর। আবার অনেকের মতে, ৩০০ বছর। নবাব আলিবর্দি খানের সময় থেকেই জাঁদার মেলা পথ চলা শুরু করে। সেসময় এই মেলা ‘পীর ঠাকুরের মেলা’ রূপে পরিচিত ছিল। পূর্বে এই মেলাকে কেন্দ্র করে গানের আসর বসতো, কিন্তু বর্তমানে জনপ্রিয়তার অভাবে তা আর নেই। ৪১ বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে গঙ্গা পুজোর প্রচলন হয়। যাকে কেন্দ্র করেই বর্তমানে মেলা আয়োজিত হয়।

জানা যায়, আগে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে দামোদর নদীতে স্নান করে গ্রামের মানুষরা এই মাঠে আলুর দম ও মুড়ি খেতেন। সেসময় কয়েকটি আলুর দমের দোকান গড়ে ওঠে, যা কালক্রমে মেলার রূপ নেয়। আজও পুরানো রীতি মেনে, গ্রামের মহিলারা পৌষ সংক্রান্তির দিন দামোদরে স্নান করে পরিবারের মঙ্গল কামনায় নদীর জলে কলাগাছের নৌকা ভাসিয়ে দেন। আবার অনেকে বলেন, আলুর গুণাগুণ কাঁচা অবস্থায় পরখ করা সম্ভব নয়। তাই আড়তদাররা যাতে পরখ করে আলু কিনতে পারেন, সেজন্য চাষির গৃহিনীরা আলুর দম রান্না করে তাদের আলুর গুনগুন পরখ করতে দিতেন। এভাবে আড়তদাররাও সন্তুষ্ট হতেন এবং আলু চাষিরাও তাদের পরিশ্রমের দাম পেতেন। এ থেকেই মেলার উৎপত্তি হয়েছে। দামোদর নদ তীরবর্তী এই অঞ্চলে আলু চাষ হয়। প্রতিবছর মেলার জন্য চাষিরা আলু তুলে নেন।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : পর্যটন – রায়দিঘির জটার দেউল

আলুর দমই এই মেলার প্রধান আকর্ষণ। উনুনে বা স্টোভে কড়া বসিয়ে হালকা হলুদ, গাঢ় হলুদ বা টকটকে লাল রঙের হরেকরকম আলুর দম তৈরি হয়। কেজি দরে বিক্রি হওয়া এই আলুর দমের স্বাদ নেওয়ার জন্য জিভে জল আসবেই। বাজারে কাঁচা আলুর দাম অনুসারে আলুর দমের দাম ঠিক হয়। মোটামুটিভাবে, এক কেজি আলুর দমের দাম ২০-৩০ টাকা। দামোদরের পাড়ে বসে অনেকে আবার এই মেলা থেকে আলুর দম কিনে মুড়ির সাথে ছোটোখাটো চড়ুইভাতি সেরে নেন। তবে শুধু আলুর দম নয়, যারা লোকশিল্প ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই মেলা এক বিশাল সম্ভার। এই মেলাতে কাঠের চৌকি, মাদুর, বাঁশের ঝুড়ি, বেত ও বাঁশের সামগ্রী, কোদাল, কাঠের খেলনা গাড়ি, কুলো, ফল, বঁটি, মাটির তৈরি জিনিস, খেলনা সামগ্রী প্রভৃতি নানারকম জিনিসপত্র বেচাকেনা হয়। সঙ্গে জিলিপি, তেলেভাজার পসার আর নাগরদোলার আকর্ষণ তো থাকেই।

বর্তমানে এই মেলা পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে জাঁদা পল্লী মঙ্গল সমিতি (Janda Palli Mangal Samiti)। প্রাচীনতার কারনে এই মেলার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। এক দিনের এই মেলা প্রাঙ্গণে প্রতি বছরই বহু লোক সমাগম ঘটে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই মেলা গমগম করতে থাকে। মেলা মানুষের মিলন ক্ষেত্র। হুগলি জেলার কৃষি কেন্দ্রিক গ্রামীণ সমাজের মূর্ত প্রতীক জাঁদার মেলা। হুগলির অন্যতম অর্থকরী ফসল আলুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জাঁদার মেলা বাংলার গ্রামীণ জীবনে কৃষির ঐতিহ্য ও গুরুত্বকে পরিস্ফুট করে। স্থানীয় অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতেও এই মেলার ভূমিকা রয়েছে। ‘দম, দম, দম, দম… আলুর দম’ ডাকে সরগরম জাঁদার মেলায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আজও অমলিন

(Janda’s Alur Dum’s Fair of Hooghly)

উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-II]

লেখিকাঃ- তানিয়া খাতুন (চাঁপাডাঙ্গা, হুগলি)

তথ্যসূত্রঃ- বর্তমান পত্রিকা ; আনন্দবাজার পত্রিকা ; সংবাদ প্রতিদিন ; এই সময় ; আজকাল পত্রিকা ; স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে লেখিকার ব্যক্তিগত তথ্যসংগ্রহ

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : সুমেরুর যোদ্ধা – ইনুইট

2 thoughts on “Janda’s Alur Dum’s Fair of Hooghly

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!