International Day of Education
আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস (International Day of Education)
আজ ২৪ শে জানুয়ারি (24 January), আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস (International Day of Education)। প্রতি বছর ২৪ শে জানুয়ারি তারিখটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস রূপে পালিত হয়। ২০১৮ সালের ৩ রা ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ২৪ শে জানুয়ারি তারিখটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস হিসাবে গৃহীত হয় এবং ২০১৯ সালের ২৪ শে জানুয়ারি প্রথমবার আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস পালিত হয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল বৈশ্বিক শান্তি এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার ভূমিকাকে উদযাপন করা। এবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবসের থিম হল : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং শিক্ষা: স্বয়ংক্রিয়তার এক বিশ্বে মানব কর্তৃত্ব সংরক্ষণ (Artificial Intelligence and education: Preserving human agency in a world of automation)।
শিক্ষা শব্দটি সংস্কৃত ‘শাস্’ ধাতু থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ হল শাসন, নির্দেশ, আজ্ঞা, শাস্তিদান ইত্যাদি। শৃঙ্খলা রক্ষা, সংযত জীবনযাপন, সর্বপ্রকারের আনন্দ উপভোগ বর্জন — এক কথায়, ব্রহ্মচর্যাশ্রমের কঠোরতা ছিল প্রাচীন শিক্ষার আনুষঙ্গিক বিষয়। অন্যদিকে ইংরেজি ‘Education’ শব্দটি লাতিন শব্দ ‘Educere’ (অর্থ : নির্দেশনা দেওয়া বা নিষ্কশন করা), ‘Educare’ (অর্থ : পরিচর্যা বা প্রতিপালন করা), ‘Educatum’ (অর্থ : শিক্ষাদানের কাজ), ‘Educo’ (অর্থ : বাইরে নিয়ে আসা) থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
সংকীর্ণ অর্থে, শিক্ষা বলতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেই বোঝায়। ইংরেজ দার্শনিক শিক্ষাবিদ জন স্টুয়ার্ট মিল (J. S. Mill)-এর মতে, যার মাধ্যমে সমাজ তার সঞ্চিত সংস্কৃতির ভান্ডারকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে সঞ্চালিত করে, তাই হল শিক্ষা। ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ মিলিসেন্ট ম্যাকেঞ্জি (M. Mackenzie)-এর মতে, আমাদের ক্ষমতাকে বিকশিত ও অনুশীলন করার উদ্দেশ্যে সচেতনভাবে পরিচালিত যেকোনো প্রচেষ্টাই হল শিক্ষা। তাই, সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষার সংজ্ঞা হল : সমাজের উপযোগী সদস্য হিসাবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র, সমাজ, বিদ্যালয় এবং পরিবার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ সচেতন ও ইচ্ছাকৃতভাবে যে প্রয়াস পরিচালনা করে তাই হল শিক্ষা। আবার ব্যাপক অর্থে, শিক্ষা জীবনের সঙ্গে সমব্যাপক। অর্থাৎ শিক্ষা ও জীবন সমার্থক। মার্কিন শিক্ষাবিদ উইলিয়াম হার্ড কিলপ্যাট্রিক (W. H. Kilpatrick)-এর মতে, সুচিন্তিত জীবনযাপনই হল শিক্ষা। শিক্ষাবিদ আর. সি. লজ (R. C. Lodge)-এর মতে, সমস্ত অভিজ্ঞতাই হল শিক্ষা। তাই, ব্যাপক অর্থে শিক্ষার সংজ্ঞা হল : সুসংহত জীবনপ্রণালী ও জাগতিক বিষয়াবলীর সমন্বিত চিত্রটিকে যা সুস্পষ্ট করে তোলে, তাই হল শিক্ষা। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত ‘মানব অধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র‘ (Universal Declaration of Human Rights) অনুসারে, শিক্ষা (Education) হল একটি মানব অধিকার (Human Right)।
শিক্ষা সম্পর্কে ভারতীয় মতাদর্শ : বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ ঋগবেদ (Rigveda) অনুসারে, শিক্ষা এমন একটি জিনিস, যা একজন মানুষকে আত্মনির্ভরশীল এবং নিঃস্বার্থ করে তোলে। উপনিষদ (Upanishads) অনুসারে, শিক্ষা হল সেই প্রক্রিয়া যার শেষ ফলাফল হল মানুষের মুক্তি। আচার্য কণাদ (Acharya Kanad) -এর মতে, শিক্ষা হল আত্ম-পরিতৃপ্তির বিকাশ। অর্থশাস্ত্র রচয়িতা চাণক্য বা কৌটিল্য-এর মতে, শিক্ষা হল দেশসেবার জন্য উপযুক্ত শিক্ষণ ও জাতির প্রতি ভালবাসা। আদি শঙ্করাচার্য (Adi Shankaracharya) -এর মতে, শিক্ষা হল আত্ম উপলব্ধির উপায়মাত্র। স্বামী বিবেকানন্দ-এর মতে, শিক্ষা হল মানুষের ভিতর যে পূর্ণতা আগে থেকেই বিদ্যমান, তারই প্রকাশ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর মতে, শ্রেষ্ঠ শিক্ষা হল তাই, যা কেবল তথ্য পরিবেশনই করে না, যা বিশ্বসত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী-এর মতে, শিক্ষা হল শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহ, মন ও আত্মার শ্রেষ্ঠ গুণগুলির পূর্ণতার বিকাশ।
Pingback: National Girl Child Day - ভূগোলিকা-Bhugolika