‘Indira Point’ of India
ভারতের ‘ইন্দিরা পয়েন্ট’
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ: ‘Indira Point’ of India । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি ভারতের দক্ষিণতম বিন্দু ‘ইন্দিরা পয়েন্ট’ সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।
আয়তনে পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম দেশ হল ভারত (India), যা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ। ভারতের মূল ভূখন্ডটি উত্তর থেকে দক্ষিণে ৩২১৪ কিমি বিস্তৃত এবং ভারতের মূল ভূখন্ডের দক্ষিণতম বিন্দু হল তামিলনাড়ু রাজ্যের কন্যাকুমারী অন্তরীপ। কিন্তু সমগ্র ভারতের দক্ষিণতম বিন্দু (Southernmost Point of India) হল গ্রেট নিকোবর দ্বীপ (Great Nicobar Island) -এর ইন্দিরা পয়েন্ট (Indira Point), যার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাগত অবস্থান হল ০৬°৪৬′৫০″ উত্তর এবং ৯৩°৪৯′৩৩″ পূর্ব। প্রশাসনিক দিক থেকে ইন্দিরা পয়েন্ট ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ -এর নিকোবর জেলা (Nicobar District) -এর গ্রেট নিকোবর মহকুমার ক্যাম্পবেল বে (Campbell Bay) ব্লকের লক্ষ্মীনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত একটি গ্রাম।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : ভালোবাসা : ঠিকানা তোমার বলো খুঁজি কোথায়!
বর্তমান ইন্দিরা পয়েন্ট পূর্বে পিগম্যালিয়ন পয়েন্ট (Pygmalion Point) এবং পারসন্স পয়েন্ট (Parsons Point) নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭২ সালের ৩০ শে এপ্রিল এখানে একটি লাইটহাউস চালু হয়, যা ভারত মহাসাগরে জাহাজপথ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই লাইটহাউসটির উচ্চতা গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৫ মিটার। ১৯৮৪ সালের ১৯ শে ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi) এই স্থান পরিদর্শন করেন। সেসময় স্থানীয় সাংসদ ওই স্থানের নাম পরিবর্তন করে ইন্দিরা পয়েন্ট রাখার প্রস্তাব দেন। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর, ১৯৮৫ সালের ১০ ই অক্টোবর এই স্থানটি সরকারিভাবে ইন্দিরা পয়েন্ট নামে পরিচিত লাভ করে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ইন্দিরা পয়েন্ট গ্রাম (Indira Point Village)-টি ২০০৪ সালের সুনামিতে ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও অনেক অধিবাসীর মৃত্যু ঘটে।
ইন্দিরা পয়েন্ট গ্রামটিতে বর্তমানে ৪ টি পরিবার বসবাস করে এবং জনসংখ্যা (২০১১ জনগণনা অনুসারে) মাত্র ২৭ জন (সকলেই পুরুষ) ও সাক্ষরতা হার ৮৫.১৯%। ২০০৪ সালের প্রবল সুনামিতে ইন্দিরা পয়েন্টের ১৬-২০ টি পরিবার এবং ৪ জন বিজ্ঞানীর মৃত্যু ঘটে। এছাড়া ইন্দিরা পয়েন্ট লাইট হাউস (Indira Point Lighthouse) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইন্দিরা পয়েন্ট লাইট হাউসটি সুনামির পূর্বে গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩.৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত ছিল। কিন্তু প্রবল ভূমিকম্পের কারণে সুনামির পর ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে এই লাইটহাউসটির অবস্থান হয় গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ০.৭৫ মিটার নিচে। অর্থাৎ ভূমিকম্পের কারণে এই অঞ্চলটি ৪.২৫ মিটার নিমজ্জিত হয়েছে। এই কারণে বর্তমানে লাইটহাউসটি সমুদ্রে জলমগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : পাপুয়া নিউ গিনির ‘কাদা-মানব’
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী শহর পোর্ট ব্লেয়ার (Port Blair) থেকে ক্যাম্পবেল বে-এর দূরত্ব ৩০০ নটিক্যাল মাইল (৫৫৫ কিমি)। আর আকাশপথে ক্যাম্পবেল বে থেকে ইন্দিরা পয়েন্টের দূরত্ব ২৭ কিমি। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে আকাশ পথে ও জলপথে ক্যাম্পবেল বে-এর মাধ্যমে ইন্দিরা পয়েন্টের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। ইন্দিরা পয়েন্টে একটি হেলিপ্যাড রয়েছে। সাম্প্রতিক কালে, ভারত সরকার কর্তৃক গালাথেয়া নদী (Galathea River) -এর ওপর সেতু নির্মাণ করে শাস্ত্রী নগর থেকে ইন্দিরা পয়েন্ট পর্যন্ত ৩৫ কিমি দীর্ঘ সড়কপথ নির্মাণ করা হয়েছে, যা শাস্ত্রী নগরের মাধ্যমে ক্যাম্পবেল বে-এর সাথে ইন্দিরা পয়েন্টের সড়কপথ যোগাযোগ গড়ে তুলেছে। পর্যটনের প্রসারের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পবেল বে-এর সাথে ইন্দিরা পয়েন্টের সাথে সুদৃঢ় যোগাযোগ গড়ে তোলা হয়েছে। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল ইন্দিরা পয়েন্ট লাইটহাউস। উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ার উত্তরতম অংশ রন্ডো দ্বীপ (Rondo Island) ইন্দিরা পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৩৫ কিমি দূরে অবস্থিত।
লেখকঃ- অমলেন্দু মাহাতো (কেটলাপুর, পাড়া, পুরুলিয়া)
তথ্যসূত্রঃ- Wikipedia ; Census of India 2011 ; Directorate General of Lighthouses and Lightships, Ministry of Shipping, Government of India ; Google Map ; CIRES-University of Colorado Boulder/USA ; Sydney Morning Herald ; Jagran Josh
Pingback: Prominent Universities in India » NIRYAS.IN
Pingback: Flysch and Molasse - ভূগোলিকা-Bhugolika