History of Farakka Barrage
ফারাক্কা বাঁধের ইতিকথা
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : History of Farakka Barrage । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি ফারাক্কা বাঁধ সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে, বিবিধ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কোনো নদীর প্রবাহপথে জলপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী অবকাঠামোকে ‘বাঁধ’ বলা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী কালে, নদীমাতৃক দেশ ভারতের বিভিন্ন নদীতে আধুনিক নদী বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। ভারতের বহুলচর্চিত নদীবাঁধগুলির মধ্যে একটি হল ‘ফারাক্কা বাঁধ’ (Farakka Barrage)। পুণ্যতোয়া গঙ্গা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় দ্বি-বিভক্ত হওয়ার পূর্বে ফারাক্কাতে ১৯৭০-এর দশকে এই বাঁধটি নির্মিত হয়। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ১৮ কিমি দূরে অবস্থিত ফারাক্কা বাঁধ পরিবেশগত ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত বিষয়। উল্লেখ্য, ‘ড্যাম’ (Dam) এবং ‘ব্যারেজ’ (Barrage) — এই দুই ইংরেজি শব্দকে বাংলা ভাষাতে বাঁধ বলা হলেও, ড্যাম ও ব্যারেজের আকার ও গঠনের উদ্দেশ্যে পার্থক্য রয়েছে। ব্যারেজের তুলনায় ড্যাম আকা বড়ো হয়। ড্যামের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল জল সঞ্চয় (Water Storage) ; আর নদীর জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যারেজ গড়ে তোলা হয় (History of Farakka Barrage)।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : সাত সমুদ্রের এডিনবার্গ
ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রেক্ষাপট অনেক পুরানো। কলকাতা বন্দরসহ ভাগীরথী-হুগলি নদীর নাব্যতা বজায় রাখার উপায় খুঁজতে ব্রিটিশ আমলে ১৮৫১-১৯৪৬ সময়কালে কমপক্ষে ৫ টি সমীক্ষা করা হয়েছিল। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে কলকাতা বন্দর অঞ্চলে ভাগীরথী-হুগলি নদীতে নাব্যতা বজায় রাখতে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু হয়। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল মূল গঙ্গা নদী থেকে ১৮০০ ঘনমিটার/সেকেন্ড জল ভাগীরথী-হুগলি শাখাতে সরবরাহের মাধ্যমে ভাগীরথী-হুগলি নদীকে পুনরুজ্জীবিত করে কলকাতা বন্দরকে পলিমুক্ত করে নাব্যতা বজায় রাখা। ১৯৬২ সালে হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে এবং ১৯৭০ সালে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়। ১৯৭৫ সালের ২১ শে এপ্রিল থেকে এই বাঁধটি চালু হয়। ফারাক্কা বাঁধটির দৈর্ঘ্য ২৩০৪ মিটার এবং বাঁধটিতে ১০৯ টি গেট রয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ থেকে ভাগীরথী-হুগলি নদী পর্যন্ত ৪২ কিমি দীর্ঘ ফিডার ক্যানালও রয়েছে। এই বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হয় ১৫৬.২৫ কোটি টাকা। ফারাক্কা বাঁধ শুধুমাত্র একটি নদীবাঁধ, একই সাথে সড়ক ও রেল যোগাযোগের সেতু হিসাবেও এটি ব্যবহৃত হয়। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘতম রেল-তথা-সড়ক সেতু (Longest Rail-cum-Road Bridge of West Bengal) হল ফারাক্কা সেতু।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : প্রসঙ্গ – নারীর ক্ষমতায়ন
ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পর স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘকাল আলাপ-আলোচনা এবং স্বল্পমেয়াদী কিছু চুক্তির পর, ১৯৯৬ সালের ১২ ই ডিসেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ফারাক্কায় জলবন্টন নিয়ে ৩০ বছর মেয়াদী ‘গঙ্গা জল চুক্তি’ (Ganges Water Treaty) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, শুষ্ক মরসুমে অর্থাৎ ১লা জানুয়ারি থেকে ৩১শে মে পর্যন্ত দুই দেশ চুক্তিতে উল্লেখিত ফর্মুলা অনুযায়ী জল ভাগাভাগি করে নেয়। ভারত ও বাংলাদেশ যার যার ন্যায্য ভাগ পেল কিনা সেটা জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে দুই দেশের নদী কমিশনের পর্যবেক্ষণ দল। ভারতের অংশে দৈনিক জলের প্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করা হয় ফারাক্কা বাঁধের নীচে, ফিডার ক্যানেলে এবং নেভিগেশন লকে। বাংলাদেশে কী পরিমাণ জল প্রবেশ করছে, তা পরিমাপ করা হয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত অর্থাৎ বর্ষা মরসুম জুড়ে জল কী পরিমাণ আটকে রাখা হবে বা ছাড়া হবে সেটা নির্ভর করে ভারতের অংশে গড় বৃষ্টিপাত ও নদীর জলপ্রবাহের ওপর। আর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ফারাক্কা বাঁধের সামনে যে পুকুর (রেকর্ডিং লেভেল পন্ড) রয়েছে, তার জলের স্তর অনুযায়ী জলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন মহল থেকে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় যে, ভারত ইচ্ছেমতো অনিয়ন্ত্রিতভাবে জল অপসারণ করছে বা জল আটকে দিচ্ছে। যদিও তা সত্য নয়। এবিষয়ে বিবিসি নিউজ বাংলার অক্টোবর, ২০১৯ এর এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের তৎকালীন জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, “…এখানে বাংলাদেশ কখনোই তার ন্যায্য হিস্যা পায়নি — এমন নজির নেই।”
গত চার দশকেরও বেশি সময়ে ফারাক্কা বাঁধ গঙ্গা অববাহিকায় ব্যাপক পরিবর্তন আনে যার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে ভারত ও বাংলাদেশ – দুই দেশই। ভারতের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলি হল ভাগীরথী-হুগলি নদীকে পুনরুজ্জীবিত করা গেলেও কলকাতা বন্দরকে পুরোপুরি পলিমুক্ত করা যায়নি ; পশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলাতে নদীভাঙন ; বিহার ও উত্তরপ্রদেশের একাংশে জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে, বাংলাদেশে পদ্মা নদীতে শুষ্ক ঋতুতে জলাভাব, চর সৃষ্টি এবং বর্ষা ঋতুতে নদীভাঙন দেখা যায়। পরিশেষে একথা বলা যায়, পরিবেশগত সমস্যা ও কূটনৈতিক জটিলতা থাকলেও, তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষাপটে ভাগীরথী-হুগলি নদীর পুনরুজ্জীবনের জন্য হয়তো ফারাক্কা বাঁধের বিকল্প ছিল না (History of Farakka Barrage)।
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]
লেখিকাঃ- দেবিকা হালদার (জলঙ্গি, মুর্শিদাবাদ) তথ্যসূত্রঃ- Wikipedia; আনন্দবাজার পত্রিকা; বিবিসি নিউজ বাংলা; বাংলাপিডিয়া; প্রথম আলো
Nice
Pingback: Nature's Paradise - Nilgiri - ভূগোলিকা-Bhugolika