Monday, July 28, 2025

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভৌগোলিক প্রবন্ধ

Height Growth of Mount Everest

মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Height Growth of Mount Everest । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

Height Growth of Mount Everest
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ : মাউন্ট এভারেস্ট

মাউন্ট এভারেস্ট (Mount Everest)!… হ্যাঁ, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ (World’s Highest Mountain Peak) রূপে এই নাম আমাদের সকলের কাছে সুপরিচিত। হিমালয় পর্বতমালার মহালাঙ্গুর হিমাল বিভাগের অন্তর্গত মাউন্ট এভারেস্ট নেপাল ও তিব্বত (চিন) সীমান্তে অবস্থিত। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের সার্ভেয়র জেনারেল স্যার জর্জ এভারেস্ট (Sir George Everest) -এর নামানুসারে এটি মাউন্ট এভারেস্ট নামে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ হলেও, নেপালে ‘সগরমাথা’ (অর্থাৎ আকাশের দেবী) এবং তিব্বতে ‘চোমোলুংমা’ (অর্থাৎ পবিত্র মাতৃদেবী) নামে পরিচিত। প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে, মাউন্ট এভারেস্ট নেপালের ১ নং প্রদেশের সোলুখুম্বু জেলা (Solukhumbu District) এবং চিন অধিকৃত তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তিংরি কাউন্টি (Tingri County) -এর মধ্যবর্তী সীমানায় অবস্থিত। ১৯৫৩ সালে হিলারি-নোরগে কর্তৃক সর্বপ্রথম জয়ী মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার — এই তথ্য এতদিন সর্বজন স্বীকৃত হলেও, সম্প্রতি (২০২০) নেপাল ও চিন সরকার যৌথভাবে মাউন্ট এভারেস্টের নতুন উচ্চতা ঘোষণা করেছে। সাম্প্রতিক এই ঘোষণা অনুসারে, পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গের উচ্চতা ৮৮৪৮.৮৬ মিটার (২৯,০৩১.৭ ফুট)

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : সুন্দরবনের মাতলা নদী

মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা কত? — উনিশ শতকে ব্রিটিশ আমল থেকেই এনিয়ে সার্ভে শুরু হয়। ১৮৪৯ সালে জেমস নিকোলসন মাউন্ট এভারেস্ট (তৎকালীন সময়ে Peak ‘b’ রূপে পরিচিত) -এর উচ্চতা ৯২০৫ মিটার (৩০,২০০ ফুট) বলে চিহ্নিত করেন। মূলত আলোক প্রতিসরণের কারণে তাঁর সার্ভে নির্ভুল ছিলনা। ১৮৫২ সালে রাধানাথ শিকদার (Radhanath Sikdar) সর্বপ্রথম নির্ভুলভাবে মাউন্ট এভারেস্ট (Peak XV) পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা পরিমাপ করেন। তাঁর নির্ণীত মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ছিল ২৯,০০০ ফুট বা ৮৮৩৯.৮ মিটার। তবে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল অ্যান্ড্রু ওয়া ২ ফুট বাড়তি উচ্চতা যোগ করেন কেবলমাত্র একেবারে ২৯,০০০ ফুট উচ্চতা সম্পর্কে সন্দেহ বা বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য। ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ৮৮৪০ মিটার (২৯,০০২ ফুট) প্রকাশ করে। ১৯৫৪ সালে একটি ভারতীয় সার্ভের দ্বারা মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ৮৮৪৮ মিটার (২৯,০২৮.৮৭ ফুট)। এরপর, ১৯৭৫ সালে একটি চিনা সার্ভেতে এভারেস্টের উচ্চতা ৮৮৪৮.১৩ মিটার বলে চিহ্নিত করা হয়। ২০০৫ সালে চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস এবং স্টেট ব্যুরো অফ সার্ভেয়িং অ্যান্ড ম্যাপিং ঘোষণা করে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ৮৮৪৪.৪৩ মিটার (২৯,০১৭ ফুট)। পূর্বোক্ত সার্ভেগুলিতে মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষদেশে সঞ্চিত তুষার অংশটিও উচ্চতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ২০০৫ সালের এই চিনা সার্ভেতে ৩.৫ মিটার উঁচু তুষার অংশটিকে বাদ দিয়ে, মাউন্ট এভারেস্টের শিলার উচ্চতম বিন্দু পর্যন্তই উচ্চতা পরিমাপ করা হয়। যদিও নেপাল সরকার এই উচ্চতাকে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০১০ সালে নেপাল ও চিন সরকারের সম্মতিতে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার রূপে চিহ্নিত করা হয় এবং নেপাল সরকার চিনের দাবিকৃত মাউন্ট এভারেস্টের শিলা অংশের উচ্চতা ৮৮৪৪.৪৩ মিটারকে স্বীকৃতি দেয়।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : ভাসমান দ্বীপ ফুমদি

২০১৫-এর ভয়াবহ ভূমিকম্প (2015 Nepal Earthquake) -এর পর নেপাল সরকার ঘোষণা করে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ২০১৫ -তে নেপালে ভূমিকম্পের ফলে হিমালয় পর্বতমালায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। যার জেরে উচ্চতারও পরিবর্তন হতে পারে মাউন্ট এভারেস্টের। এমনটাও জানিয়েছিলেন তাঁরা। ২০১৯-এ নেপাল সফরে গিয়ে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা মাপার বিষয়টি স্থির করে আসেন। এরপর দুই দেশ যৌথভাবে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপ করে। অবশেষে ৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ -তে মাউন্ট এভারেস্টের নতুন উচ্চতার কথা যৌথভাবে ঘোষণা করে নেপাল এবং চিন। এই ঘোষণা অনুসারে, মাউন্ট এভারেস্টের নতুন উচ্চতা হল ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার (২৯,০৩১.৭ ফুট)। অর্থাৎ পূর্বের তুলনায় উচ্চতা বেড়েছে ০.৮৬ মিটার বা ২.৮ ফুট।

তবে হয়তো এখানেই শেষ নয়। পাতসংস্থানের কারনে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল আজও ভূতাত্ত্বিক ভাবে সক্রিয়। ভারতীয় পাত ক্রমশ উত্তরমুখী হয়ে ইউরেশীয় পাতের সাথে আজও সংঘর্ষে লিপ্ত। সাম্প্রতিককালে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে একাধিক ছোটোবড়ো ভূমিকম্প তারই প্রমাণ। বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা অনুসারে, হিমালয় পর্বতমালার মাউন্ট এভারেস্ট অঞ্চলের উচ্চতা প্রতি বছর গড়ে ৪ মিমি (০.১৬ ইঞ্চি) বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১.৫-১.৭ কোটি বছর পূর্বে, মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ছিল ৫০০০ মিটার (১৬,৪০৪ ফুট)। নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এক গবেষণাপত্র (২০২৪) -এর তথ্যমতে, মাউন্ট এভারেস্ট থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে নেপালের অরুণ নদ (Arun River) -এর অববাহিকায় ভূত্বকের ক্ষয়ের কারণে মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গের উচ্চতা বছরে ২ মিমি পর্যন্ত বাড়ছে। গবেষকেরা বলেছেন, অরুণ নদ ও তার শাখা-প্রশাখার (নেটওয়ার্ক) ক্ষয় এই পর্বতশৃঙ্গের উত্থানে অবদান রাখছে। নদীপ্রবাহে তলদেশ থেকে মৃত্তিকা ও শিলা উপাদান দূরে সরে যায়। এটি ভূত্বকের নিচে গুরুমন্ডল (Mantle) স্তরের ওপর চাপ কমিয়ে দেয়। এর ফলে পাতলা ভূত্বক নমনীয় হয়ে ওপরের দিকে উঠে আসে। এই প্রক্রিয়া ‘আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ড’ (Isostatic Rebound) নামে পরিচিত। প্রায় ৮৯ হাজার বছর আগে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এই ঊর্ধ্বমুখী চাপ মাউন্ট এভারেস্ট-সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্যান্য শৃঙ্গগুলি (লোৎসে, মাকালু) -এর উচ্চতা বাড়াচ্ছে। ফলে বলা যায়, ভবিষ্যতে কোনো প্রবল ভূমিকম্প কিংবা ক্রম ভূতাত্ত্বিক উত্থানের কারণে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতার আবারও পরিবর্তন ঘটবে। আপাতত, নেপাল ও চিন সরকার কর্তৃক যৌথভাবে ঘোষিত ৮৮৪৮.৮৬ মিটার-ই হল মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা। (Height Growth of Mount Everest)

উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-II]

লেখিকাঃ- দেবিকা হালদার (জলঙ্গি, মুর্শিদাবাদ)
তথ্যসূত্রঃ- Wikipedia ; আনন্দবাজার পত্রিকা ; বিবিসি নিউজ ; এই সময় ; The Indian Express

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : প্রসঙ্গ – কার্স্ট ভূমিরূপ স্পেলিওথেম

One thought on “Height Growth of Mount Everest

  • Sudip Mahato

    তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধ

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!