Gender Inequality & Women’s Rights
লিঙ্গ বৈষম্য এবং নারীর অধিকার
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Gender Inequality & Women’s Rights । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি লিঙ্গ বৈষম্য এবং নারীর অধিকার সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

সামাজিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে লিঙ্গ বৈষম্য (Gender Inequality/Sexism) এবং নারীর অধিকার (Women’s Rights) পরস্পর সম্পর্কিত দুই বিপরীতমুখী বিষয়। সহজ কথায়, সমাজ-সংস্কৃতিতে একজন ব্যক্তির যৌনতা বা লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে যে বৈষম্য হয়, তাই লিঙ্গ বৈষম্য। লিঙ্গ বৈষম্যে একটি লিঙ্গকে (পুরুষ) আর একটি লিঙ্গ (নারী)-এর চেয়ে উচ্চতর বলে গণ্য করা হয়। অন্যদিকে, নারীর অধিকার হল মানবাধিকারের মূল্যবোধে সমগ্র নারী জাতির প্রাপ্য ও ন্যায়সঙ্গত অধিকারসমূহ। তবে, সারা বিশ্বেই নারীর অধিকার নিয়ে নানা ধরনের মতবাদ চালু রয়েছে। ধর্ম, বিশ্বাস, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, চিন্তা ও আদর্শগত পার্থক্যের কারণে নারীর অধিকার নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান ও মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নারীর অধিকার নিয়ে মূলত দুই রকমের মত রয়েছে। এক, পুরুষের সমকক্ষতা অর্জনই নারীর প্রকৃত অধিকার এবং দুই, নারী-পুরুষের মধ্যে সৃষ্টিগত পার্থক্যকে স্বীকার করে নারীর ন্যায্য অধিকার।
সেই কবে বিদ্রোহী কবি বলে গেছেন, ‘সাম্যের গান গাই/আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!’। কিন্তু, বড়ই অদ্ভুত সময়ে আমরা বাস করছি। যে সমাজে সোস্যাল মিডিয়া, পাড়া, সংবাদমাধ্যমের সামনে আমরা প্রমাণ করার চেষ্টা করছি যে, লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের প্রাণ নিবেদিত ; অথচ আমরাই মাতৃগর্ভের কন্যাসন্তানকে হত্যা করছি। সংসারে মাতৃনির্যাতন বা বধূ নির্যাতন আজও চলছে। হ্যাঁ, আমরা একদল বুদ্ধিদীপ্ত, আধুনিকতার মাদকতায় মত্ত বিশ্ববাসী, যারা নারীর অধিকারে মৌখিক সম্মতি জানালেও, কার্যক্ষেত্রে তা প্রতিষ্ঠা করতে অনিচ্ছুক। এ সমাজের একটা বড়ো অংশই ভুলতে বসেছে, ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’।
‘Association for Democratic Reform (ADR) -এর তথ্য বলছে, প্রচুর সংখ্যক নারী আজও কোনো না কোনোভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন। দরিদ্র, খেটে-খাওয়া পরিবারের কথা না হয় বাদই দিলাম। শহুরে উচ্চ শিক্ষিত পরিবারে পুত্র সন্তান হলে শঙ্খধ্বনি ও মিষ্টিমুখের মাধ্যমে যে আনন্দ করা হয়, কন্যাসন্তানের ক্ষেত্রে তা ক’জন করেন! রাষ্ট্রসংঘের হেলথ্ এজেন্সির ২০২০-এর তথ্যমতে, সারা বিশ্বে ‘Missing Females’ -এর সংখ্যা ১৪.২৬ কোটি ; যার মধ্যে চীনে ৭.২ কোটি আর ভারতে ৪.৫৮ কোটি। ‘Missing Females’ হল অতীতে প্রসব পূর্ব ও প্রসবোত্তর সময়ে যৌনতা নির্বাচনজনিত প্রভাবের কারণে বর্তমান জনসংখ্যায় অনুপস্থিত নারীর সংখ্যা। শিক্ষা, সচেতনতা ও উপযুক্ত মানসিকতার অভাবে কন্যাভ্রূণ হত্যার মাধ্যমে সমাজ লিঙ্গ বৈষম্যকে প্রকট করেছে। অথচ এই কন্যাভ্রূণ হত্যা নিষিদ্ধ করতে ১৯৯৪ সালে ভারতের সংসদে ‘Pre-Conception and Pre-Natal Diagnostic Techniques (PCPNDT)’ আইন পাশ হয়। যা ১৯৯৬ সালের ১ লা জানুয়ারি থেকে বিধিবদ্ধ হয়। কিন্তু কতজন এই আইন মানছেন!
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : প্রসঙ্গ – বাস্তুতান্ত্রিক পদচিহ্ন
নারী মানে অর্ধেক আকাশ। কিন্তু এই অর্ধেক আকাশ আজ কালো মেঘে ঢাকা। পণপ্রথা, বধূ নির্যাতন, কন্যাভ্রূণ হত্যা, যৌন নির্যাতন — আজও বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। কিন্তু তা হিমশৈলের মতো ১/১০ ভাগই প্রকাশিত হয়। বেশিরভাগই চাপে-ভয়ে-লজ্জায় প্রকাশিত হয়না। ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রসংঘের ‘Convention on the Elimination of all Forms of Discrimination Against Women (CEDAW)’ -তে পুরুষ ও নারীকে সমানভাবে দেখা এবং নারী-পুরুষকে সমান অধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু আজও সব দেশে নারী ও পুরুষের অধিকারের সমতা এক নয়। যেমন, বিবিসি-এর এক প্রতিবেদন (২০১৯) অনুসারে, বিশ্বব্যাঙ্কের ‘নারী, ব্যবসা ও আইন’ শীর্ষক রিপোর্ট বলছে, বিশ্বে মাত্র ৬ টি দেশে (বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ ও সুইডেন) অধিকার সমতা ১০০%। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, স্পেনে ৯৭.৫% ; অস্ট্রেলিয়া, সর্বিয়াতে ৯৬.৮% ; আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩.৭% ; চিনে ৭৬.২% ; রাশিয়াতে ৭৩.১% ; ভারত ও বাংলাদেশে যথাক্রমে ৭১.২% ও ৪৯.৩% ; পাকিস্তানে ৪৬.২% ; ইরানে ৩১.২%। আর সবথেকে কম সৌদি আরবে, মাত্র ২৫.৬%।
ভারতে লিঙ্গ বৈষম্য যথেষ্ট প্রকট। তাই, ভারত সরকার লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সময়ে সময়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন — স্বয়ংসিদ্ধা (Swayamsidhha), স্ব-শক্তি যোজনা (Swa-Shakti Yojana), The Support to Training and Employment Programme for Women (STEP) প্রভৃতি। লিঙ্গ বৈষম্যের জন্য নারীরা সঠিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারছেন না। ফলে কত নারী প্রতিভা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে, তার খবর কে রাখে!
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : পশ্চিমবঙ্গের ঋতু বৈচিত্র্য
পরিশেষে বলা যায়, আজ আমরা আধুনিক হয়েছি ঠিকই কিন্তু লিঙ্গ বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে সমাজের চিন্তাধারা খুব একটা বদলায়নি। এখনও নারীর গুণের চেয়ে রূপের কদর বেশি। কিন্তু নারী মাত্রই রূপসর্বস্ব নয়। তাই সকল অভিভাবকের উচিত পুত্র হোক বা কন্যা ; তাকে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে প্রকৃত মানুষ করে তোলা। মানবিক গুণের বিকাশ ঘটাতে পারলে, কেউই আর পিছিয়ে থাকবে না। সমাজ, অর্থনীতি, শিক্ষা, রাজনীতি, সেনা-পুলিশ, খেলাধূলা — সবক্ষেত্রেই নারীরা কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও দেবেন। এজন্য নারীদের আর্থিক স্বনির্ভরতা একটি বড়ো বিষয়। নারী আর্থিকভাবে সাবলম্বী হলে তবেই লিঙ্গ বৈষম্যকে মুছে ফেলা যাবে।
আমরা প্রতিবছর ৮ ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করলেও, এটা কি অস্বীকার করতে পারবো যে আমাদের দেশে এবং বিশ্বের অনেক দেশেই নারীরা আজও নিরাপদে নেই। সমাজের সাধারণ একজন হিসেবে মনে করি, যেদিন, আমরা নারীরা দেশের যেকোনো শহরে নির্ভয়ে ঘোরার সাহস পাবো, সেদিন, এই দেশে নারীর অধিকার ও নারী-উন্নয়নের প্রথম শর্ত পূর্ণ হবে। শুধু আইন বা সরকারি প্রকল্পে হবেনা ; প্রকৃত অর্থে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে পুরুষ-নারী ভেদাভেদ মুছে এ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই আমরা বিদ্রোহী কবির সুরে বলতে পারবো,
‘সেদিন সুদূর নয়-
যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়’।
(Gender Inequality & Women’s Rights)
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-II]
লেখিকাঃ- শ্রাবন্তী কুমার (ভদ্রেশ্বর, হুগলি)
তথ্যসূত্রঃ- The Statesman ; আনন্দবাজার পত্রিকা ; The Economic Times ; Wikipedia ; UN Health Agency Report ২০২০ ; বিবিসি
Pingback: Padma River's Hilsa of Murshidabad - ভূগোলিকা-Bhugolika
Very Nice
ধন্যবাদ ❤️
Pingback: History of Naming of NorthBengal's Districts - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Borra Caves of Araku Valley - ভূগোলিকা-Bhugolika