Folk Dances of North-East India
উত্তর-পূর্ব ভারতের লোকনৃত্য
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Folk Dances of North-East India । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি উত্তর-পূর্ব ভারতের লোকনৃত্য সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

সাধারণ জীবনের লোকাচার, সামাজিকতা, জীবনের সহজ প্রাণোচ্ছ্বলতা, নতুন ফসল তোলার আনন্দ প্রভৃতি উদযাপনের এক সাবলীল প্রকাশ মাধ্যম হল লোকনৃত্য (Folk Dance)। শাস্ত্রীয় নৃত্যের কঠোরতাকে উপেক্ষা করে সহজাত ভাবে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে লোকনৃত্য। আদিম সমাজের নৃত্যের ব্যাপারে অ্যারিস্টটলের একটি বক্তব্য ভীষণ প্রাসঙ্গিক। নৃত্য প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন — ‘In dancing rhythm along is used without harmony for even dancing imitates character, emotion and action by rthymical movement’। লোকনৃত্যের মাধ্যমে কোনো জাতি, উপজাতি বা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জীবন-জবিকা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় উপস্থাপিত হয়।
‘Seven Sisters’ বলে পরিচিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য হল — অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মেঘালয়, মণিপুর, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ড। এই সাত রাজ্যের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশ উল্লেখযোগ্য। উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে আঞ্চলিক বিভিন্নতা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সামাজিক বৈচিত্র্যতা। বিশেষত লোকনৃত্যের সাংস্কৃতিক ভান্ডার উত্তর-পূর্ব ভারতকে আদিকাল থেকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে। নিচে উপরোক্ত সাতটি রাজ্যের উল্লেখযোগ্য লোকনৃত্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হল —
(Folk Dances of North-East India)
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : প্রাকৃতিক বর্ষাতি ঘঙ
★ অরুণাচল প্রদেশ:
নৃত্য ও সঙ্গীত অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন উপজাতির জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় অঙ্গ। এই রাজ্যের উল্লেখযোগ্য লোকনৃত্যগুলি হল — (১) বুইয়া (Buiya) নৃত্য:- দিগারু মিশমি (Digaru Mishmi) উপজাতি সম্প্রদায় তাজাম্পু (Tazampu), ধুইয়া (Duiya), তানুয়া (Tanuya) উৎসবে বুইয়া নৃত্য পরিবেশন করে থাকে। (২) চালো (Chalo) নৃত্য:- অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ‘চালো লোকু উৎসব (Chalo Loku Festival) -এ নোকতে (Nocte) বা নোকতে নাগা (Nocte Naga) উপজাতি সম্প্রদায় পুরানো ঋতুগুলিকে বিদায় জানতে এই নৃত্যানুষ্ঠান করে। (৩) পাসি কোঙ্গকি (Pasi Kongki) নৃত্য:- আদি (Adi) উপজাতি সম্প্রদায় ‘আবাঙ’ (Aabang) নামক সঙ্গীতের তালে এই লোকনৃত্য পরিবেশিত করে। (৪) আজি লামু (Aji Lamu) নৃত্য:- মোনপা (Monpa) উপজাতি সম্প্রদায় বিভিন্ন জন্তুর মুখোশ ব্যবহার করে এই নৃত্য পরিবেশন করে। (৫) পোনাঙ্গ (Ponung) নৃত্য:- আদি (Adi) উপজাতি সম্প্রদায় বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে একে অপরের কাঁধে হাত রেখে একসাথে ঘুরে ঘুরে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার উদ্দেশ্যে এই নৃত্য করে। এই নৃত্যে ‘ইয়োকশা’ (Yoksa) নামের একপ্রকার তরবারি ব্যবহার করা হয়। (৬) পোপির (Popir) নৃত্য:- গালো (Galo) উপজাতি সম্প্রদায় ‘মোপি উৎসব’ (Mopi Festival) -এ দেবী মোপিন আপে (Goddess Mopin Ape) -এর আরাধনায় এই নৃত্য করে। এছাড়াও অরুণাচল প্রদেশে ওয়াঞ্চো (Wancho), বার্দো ছাম (Bardo Chham), হুরকানি (Hurkani), রিখমপাড়া (Rikhampada) প্রভৃতি লোকনৃত্য প্রচলিত রয়েছে।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : প্রসঙ্গ – মেঘেদের পরিচিতি
★ অসম:
অসম রাজ্যের উল্লেখ্যযোগ্য লোকনৃত্যগুলি হল — (১) বিহু (Bihu) নৃত্য:- অসমীয়া সংস্কৃতির পরিচায়ক হল বিহু লোকনৃত্য। বিহু অসমের সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকনৃত্য। বিহু মূলত ৩ প্রকার — এপ্রিলে বহাগ বিহু/রঙ্গালী বিহু (Bohag Bihu/Rangali Bihu), অক্টোবর বা নভেম্বরে কাতি বিহু/কঙ্গালী বিহু (Kati Bihu/Kongali Bihu) এবং জানুয়ারিতে মাঘ বিহু/ভোগালী বিহু (Magh Bihu/Bhogali Bihu)। নারী-পুরুষ উভয়ে ঐতিহ্যবাহী অসমীয়া পোশাকে বিহু নৃত্যে অংশগ্রহণ করে। নববর্ষের আগমনে বহাগ বিহু/রঙ্গালী বিহুর নৃত্যানুষ্ঠান সবচেয়ে জনপ্রিয়। ঢোল, পেনপা, গগনা, বাঁশি প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। (২) ঝুমুর (Jhumur) নৃত্য:- অসমের চা বাগানের আদিবাসীদের ঝুমুর নৃত্য বিখ্যাত। মহিলারা পরস্পরের কোমর ধরে দলবদ্ধভাবে নৃত্য করেন। পুরুষেরা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে গান করেন। (৩) বাগুরুম্বা (Bagurumba) নৃত্য:- বোড়ো (Bodo) উপজাতি সম্প্রদায় খাম (Kham), সিফুং (Sifung), জোটা (Jota), সের্জা (Serja) প্রভৃতি ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে ‘বিবিসাগু উৎসব’ (Bwisagu Festival) -এ এই নৃত্য করে। এই নৃত্য ‘প্রজাপতি নৃত্য’ (Butterfly Dance) নামেও পরিচিত। অসমের কোকরাঝাড়, বঙ্গাইগাঁও, নলবাড়ি, দারাং অঞ্চলে এই নৃত্য দেখা যায়। এছাড়াও অসমে ভোরতাল (Bhortal), গুমরাগ (Gumrag), কার্বি (Karbi), বৈদিমা (Baidima), বহুয়া (Bohuwa) প্রভৃতি লোকনৃত্য প্রচলিত রয়েছে।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : অধিবর্ষের ইতিকথা
★ মেঘালয়:
আয়তনে ছোটো হলেও, মেঘালয় রাজ্যে অনেক উপজাতি সম্প্রদায়ের বসবাস। তাই, মেঘালয় রাজ্যে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের পাশাপাশি অনেক ধরনের লোকনৃত্য প্রচলিত রয়েছে। এই রাজ্যের উল্লেখযোগ্য লোকনৃত্যগুলি হল — (১) নোংক্রেম (Nongkrem) নৃত্য:- খাসি (Khasi) উপজাতি সম্প্রদায় নভেম্বর মাসে ভালো ফসল উৎপাদনের আশায় কা ব্লেই সিনশার দেবী (Goddess Ka Blei Synshar) -এর উদ্দেশ্যে এই নৃত্যানুষ্ঠান করে। নারী-পুরুষ উভয়ে চক্রাকারে এই বিশেষ নৃত্য প্রদর্শন করে থাকে। (২) শাদ-সুক মিনসিয়েম (Shad-Suk Mynsiem) নৃত্য:- প্রতিবছর এপ্রিল মাসে বসন্তের আগমনে নতুন কৃষি মরসুমের সূচনায় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে খাসি পাহাড়ের ঢালে খাসি (Khasi) উপজাতি সম্প্রদায় এই নৃত্য করে। এই অনুষ্ঠানে টাংমুরি (Tangmuri) নামক একধরনের বাঁশি বাজানো হয়। (৩) বেহদীনখলম (Behdienkhlam) নৃত্য:- বর্ষা ঋতুতে বীজ বপনের সময় জয়ন্তিয়া (Jaintia) উপজাতি সম্প্রদায় সুস্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি ও ভালো ফলনের আশায় এই নৃত্য করে। এছাড়াও মেঘালয়ে ওয়াঙ্গালা (Wangala), লাহো (Laho), দোরেগাতা (Doregata) প্রভৃতি লোকনৃত্য প্রচলিত রয়েছে।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : সময়ের সাথে হ্রাসপ্রাপ্ত সুন্দরবন
★ মণিপুর:
চিত্রাঙ্গদার রাজ্য মণিপুরে লোকনৃত্যের বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। মণিপুরের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী নৃত্যশৈলী হল রাস লীলা বা মণিপুরী নৃত্য। এই রাজ্যের উল্লেখযোগ্য লোকনৃত্যগুলি হল — (১) রাস লীলা (Raas Leela) নৃত্য:- ১৭৭৯ সালে নিংথোউ চিং-থাং খোম্বা (Ningthou Ching-Thang Khomba), যিনি রাজর্ষি ভাগ্য চন্দ্র (Rajarshi Bhagya Chandra) নামে পরিচিত, তাঁরই হাত ধরে এই নৃত্যশৈলীটি স্বীকৃতি পায়। ঈশ্বর ও আত্মার মেলবন্ধন ঘটিয়ে ঈশ্বর আরাধনায় ভীষণ সুন্দর ভাবে এই নৃত্য বিভিন্ন মুদ্রা সহযোগে পরিবেশিত হয়। এই নৃত্যে যে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী পোশাক পরিধান করা হয় তা বিশেষ আকর্ষণীয়। উৎপত্তিগত ভাবে এটি শাস্ত্রীয় নৃত্য হলেও, রাস লীলাতে শাস্ত্রীয় নৃত্য ও লোকনৃত্যের মেলবন্ধন দেখা যায়। রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনী এই নৃত্যের উপজীব্য বিষয়। মূলত মেইতেই (Meitei) উপজাতি সম্প্রদায় এই নৃত্য পরিবেশন করে। (২) পুঙ চোলম (Pung Cholom) নৃত্য:- মণিপুরী শাস্ত্রীয় নৃত্য ও মণিপুরী সংকীর্তন সঙ্গীতের মেলবন্ধনে এই নৃত্য লোকনৃত্যের রূপ পেয়েছে। গম্ভীর শব্দকারী বাদ্যযন্ত্রের তালে লাফিয়ে লাফিয়ে নৃত্য করা হয়। মূলত মেইতেই (Meitei) উপজাতি সম্প্রদায় এই নৃত্য পরিবেশন করে। (৩) লুইবাত ফেইজাক (Luivat Pheizak) নৃত্য:- থাংখুল নাগা (Thangkhul Naga) উপজাতি সম্প্রদায় ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে এই নৃত্য করে। (৪) শিম লাম (Shim Laam) নৃত্য:- রংমেই (Rongmei) উপজাতি সম্প্রদায় উজ্জ্বল রঙিন ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে এই নৃত্য করে। এই নৃত্য ‘Fly Dance’ নামেও পরিচিত। গোল করে ঘুরে একসাথে গান গেয়ে এই নৃত্য করা হয়। (৫) থাং তা (Thang Ta) নৃত্য:- মেইতেই (Meitei) উপজাতি সম্প্রদায় ধারালো তরবারি নিয়ে মার্শাল আর্ট প্রদর্শনের মাধ্যমে এই নৃত্য পরিবেশন করে। এই নৃত্য ‘ঢোল চোলম নৃত্য’ (Dhol Cholom Dance) নামেও পরিচিত। এছাড়াও মণিপুরে কাবুই (Kabui), খাম্বা থাইবি (Khamba Thaibi), লাই হারাওবা (Lai Haraoba) প্রভৃতি লোকনৃত্য প্রচলিত রয়েছে।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ
★ ত্রিপুরা: বাঙালি অধ্যুষিত ত্রিপুরা রাজ্যেও অনেক উপজাতি সম্প্রদায় রয়েছে। এই রাজ্যের উল্লেখযোগ্য লোকনৃত্যগুলি হল — (১) গড়িয়া (Garia) নৃত্য:- ত্রিপুরী (Tripuri) উপজাতি সম্প্রদায় বসন্তের শেষে সাতদিন ধরে গড়িয়া দেবতা (Lord Garia) -এর আরাধনাতে এই নৃত্য পরিবেশন করে। (২) লেবাং বুমানি (Lebang Boomani) নৃত্য:- ত্রিপুরী (Tripuri) উপজাতি সম্প্রদায় এই নৃত্য পরিবেশন করে। পুরুষেরা বাঁশের তৈরি টক্কা (Tokka) নামক বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে থাকে এবং মহিলারা ওড়না উড়িয়ে ‘লেবাং’ (Lebang) নামক একধরনের রঙিন পতঙ্গ ধরে। (৩) হোজাগিরি (Hojagiri) নৃত্য:- রেয়াং (Reang) উপজাতি সম্প্রদায় খাম (Kham), সুমুই (Sumui), সিফু্ং (Siphung) প্রভৃতি বাদ্য বাজিয়ে দেবী মাইলুমা (Goddess Mailuma) অর্থাৎ দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায় এই নৃত্য করে। সাধারণত তরুণী ও মহিলারা ৪-৬ জনের দলে এই নৃত্য পরিবেশন করে। ২০২১ সালে হোজাগিরি নৃত্যশিল্পী সত্যরাম রেয়াং পদ্মশ্রী পুরষ্কার লাভ করেন। (৪) হাই-হক (Hai-hak) নৃত্য:- হালাম (Halam) উপজাতি সম্প্রদায় এই নৃত্য পরিবেশন করেন। ফসল তোলার পর দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায় এই নৃত্য করা হয়। (৫) বিঝু (Bijhu) নৃত্য:- চাকমা (Chakma) উপজাতি সম্প্রদায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে চৈত্র সংক্রান্তিতে বিজু নৃত্য করে। এই নৃত্যে খেং-গারং (Kheng-garang) ও ধুকুক (Dhukuk) বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। (৬) সংরাই (Sangrai) নৃত্য:- চৈত্র মাসে সংরাই উৎসব (Sangrai Festival) -এ মগ (Mog) উপজাতি সম্প্রদায় এই নৃত্য করে। এছাড়াও ত্রিপুরাতে চেরাউ (Cheraw), ওয়াঙ্গালা (Wangala), মামিতা (Mamita) প্রভৃতি লোকনৃত্য প্রচলিত রয়েছে।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : হাঁসুলী বাঁক – সাহিত্য ও ভূগোল
★ মিজোরাম:
মিজোরাম রাজ্যের উল্লেখযোগ্য লোকনৃত্যগুলি হল — (১) চেরাউ (Cheraw) নৃত্য:- মিজো (Mizo) উপজাতি সম্প্রদায় বাঁশের কাঠামোর মধ্যে এই নৃত্য পরিবেশিত করে। তাই এই নৃত্য ‘Bamboo Dance’ নামেও পরিচিত। এই নৃত্য মিজোরামের সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকনৃত্য। (২) খুয়াল্লাম (Khuallam) নৃত্য:- খুয়াল্লাম শব্দটির অর্থ ‘অতিথিদের নাচ’ (Dance of the Guests)। মিজো (Mizo) উপজাতি সম্প্রদায় ‘খুয়াংচাউই’ (Khuangchawi) অনুষ্ঠানে থাংছুয়া (Thangchhuah) উপাধি প্রদান করে। এই অনুষ্ঠানে খুয়াল্লাম নৃত্য পরিবেশন করা হয়। (৩) সরলামকাই (Sarlamkai) নৃত্য:- মিজোরামের দক্ষিণাঞ্চলে পাবি (Pawi) ও মারা (Mara) উপজাতি সম্প্রদায় এই নৃত্য পরিবেশন করে। প্রাচীন সময়ে কোনো লড়াইয়ে বিজয়ী হলে শত্রুদের উপহাস করার জন্য পাঁচদিন ধরে এই নৃত্যানুষ্ঠান করা হত। বর্তমানে শূকর বধ, আমিষ ভোজ সহ এই নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এই নৃত্য সোলাকিয়া নৃত্য (Solakia Dance) নামেও পরিচিত। (৪) চাইলাম (Chailam) নৃত্য:- ‘চাপচার কুট’ (Chapchar Kut) অনুষ্ঠানে মিজো (Mizo) উপজাতি সম্প্রদায়-এর পুরুষ ও মহিলা শিল্পীরা মাদল ও শিঙ্গা বাজিয়ে এই নৃত্য করে। (৫) চানগ্লাইজান (Chawnglaizawn) নৃত্য:- পাবি (Pawi) উপজাতি সম্প্রদায়-এর পুরুষেরা স্ত্রীর মৃত্যুর পর শোকজ্ঞাপন করতে এবং উৎসবে ও শিকারে সফল হয়ে ফিরলে এই নৃত্য পরিবেশন করে। এছাড়াও মিজোরামে ত্লাংলাম (Tlanglam), জাংতালাম (Zangtalam) প্রভৃতি লোকনৃত্য প্রচলিত রয়েছে।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : সুন্দরবনের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ
★ নাগাল্যান্ড:
নাগাল্যান্ড রাজ্যের উল্লেখযোগ্য লোকনৃত্যগুলি হল — (১) চ্যাংস্যাং (Changsang) নৃত্য:- চ্যাং নাগা (Chang Naga) উপজাতি সম্প্রদায় জুলাই মাসে ‘নাকন্যুলাম/পুয়াংলেম উৎসব’ (Naknyulüm/Puanglem Festival) -এ ঐতিহ্যবাহী পোশাকে এই নৃত্য করে। (২) মন্যু আশো (Monyu Asho) নৃত্য:- এপ্রিল মাসে ফোম নাগা (Phom Naga) উপজাতি সম্প্রদায় মন্যু উৎসব (Monyu Festival) -এ এই নৃত্য করে। (৩) কুকুয়িফেতো (Kukuyipheto) নৃত্য:- চাকেস্যাং নাগা (Chakesang Naga) উপজাতি সম্প্রদায় এই নৃত্য পরিবেশন করে। এই নৃত্যে দ্রুত ও জটিল পায়ের কাজ লক্ষ্যণীয়। (৪) মেলো ফিতা (Melo Phita) নৃত্য:- অঙ্গামি নাগা (Angami Naga) উপজাতি সম্প্রদায় ‘সেক্রেন্যি’ (Sekrenyi) অনুষ্ঠানে এই নৃত্য করে। (৫) অঙ্গুশু কিঘিলেহ্ (Angushu Kighileh) নৃত্য:- সুমি নাগা (Sumi Naga) উপজাতি সম্প্রদায় ‘টুলুনি উৎসব’ (Tuluni Festival) -এ এই নৃত্য পরিবেশন করে। এটি একপ্রকার রণ নৃত্য (War Dance)। এছাড়াও নাগাল্যান্ডে চাং লো/সুয়া লুয়া (Chang Lo/Sua Lua), আকোক-খি (Akok-Khi), রুখিয়ো শারু (Rukhyo Sharu), খুপিয়েলিলিয়ে (Khupielilie) প্রভৃতি লোকনৃত্য প্রচলিত রয়েছে।
আসলে উত্তর-পূর্ব ভারতের মতো বহুভাষিক ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক অঞ্চল সারা পৃথিবীতে খুব কমই রয়েছে। এই ক্ষুদ্র অঞ্চলে কমপক্ষে ২০০+ বেশি উপজাতি সম্প্রদায় রয়েছে, যারা সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতকে নিজ সংস্কৃতিতে বর্ণময় এবং প্রাণবন্ত করে রেখেছে। (Folk Dances of North-East India)
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]
লেখিকাঃ- মৌমিতা মোদক (তারকেশ্বর, হুগলি)
তথ্যসূত্রঃ- The Times of India ; Hindu Scriptures ; Incredible Northeast India ; Holiday Travel Magazine ; Wikipedia ; Culture In India ; Indian Folk Dances ; NE Tribe- Travel Community ; Hindustan Times ; Official Website/Government of Meghalaya, Tripura, Mizoram & Nagaland ; The North East Today
I appreciate your endeavours to make geography so simple & heart warming.
Keep it up 👍
Very Nice
Pingback: Ahiran Beel of Murshidabad - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Topic - Fish of Sundarban - ভূগোলিকা-Bhugolika
Outstanding
খুব সুন্দর গোছানো লেখা
ধন্যবাদ ❤️