Earth Day
বসুন্ধরা দিবস (Earth Day)
আজ ২২ শে এপ্রিল (22 April), বসুন্ধরা দিবস (Earth Day), যা ‘ধরিত্রী দিবস‘ বা ‘পৃথিবী দিবস‘ নামেও পরিচিত। প্রতি বছর ২২ শে এপ্রিল তারিখটি বসুন্ধরা দিবস রূপে পালিত হয়। উল্লেখ্য, ১৯৬৯ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে আয়োজিত ১৩-তম ন্যাশনাল কনফারেন্স অফ দ্য ইউএস ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কো (National Conference of the US National Commission for UNESCO) -তে শান্তিকর্মী জন ম্যাককনেল (John McConnell) সর্বপ্রথম বসুন্ধরা দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। তিনি মহাবিষুব (Spring Equinox) অর্থাৎ ২১ শে মার্চ তারিখটি বসুন্ধরা দিবস হিসাবে পালনের প্রস্তাব দেন। এরপর তৎকালীন মার্কিন রাজনীতিবিদ গেলর্ড নেলসন (Gaylord Nelson) ১৯৭০ সালের ২২ শে এপ্রিল তারিখটিতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী এক পরিবেশমূলক শিক্ষণ আয়োজনের প্রস্তাব দেন। ১৯৭০ সালের ২২ শে এপ্রিল প্রথমবার বসুন্ধরা দিবস পালিত হয়। উল্লেখ্য, জন ম্যাককনেল ও গেলর্ড নেলসন উভয়ই ‘বসুন্ধরা দিবসের প্রতিষ্ঠাতা‘ (Founder of Earth Day) রূপে পরিচিত। বিজ্ঞাপন লেখক জুলিয়ান কোয়েনিগ (Julian Koenig) ‘বসুন্ধরা দিবস‘ (Earth Day) শব্দবন্ধটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। ১৯৯০ সালে প্রথমবার বৈশ্বিক স্তরে বসুন্ধরা দিবস পালিত হয়। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ ২২ শে এপ্রিল তারিখটি আন্তর্জাতিক পৃথিবী মাতা দিবস (International Mother Earth Day) রূপে ঘোষণা করে এবং ২০১০ সালে প্রথমবার আন্তর্জাতিক পৃথিবী মাতা দিবস পালিত হয়। বসুন্ধরা দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল : বিশ্বব্যাপী পরিবেশমূলক ইস্যুতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং পৃথিবীর সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণে অনুপ্রাণিত করা। এবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে বসুন্ধরা দিবসের থিম হল : ‘Our Power, Our Planet’।
উল্লেখ্য, পৃথিবী (Earth) হল সূর্যের তৃতীয় নিকটতম গ্রহ। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ১৪.৯৬ কোটি কিমি। আমাদের সৌরজগৎ-এর পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ হল পৃথিবী। আমাদের সৌরজগৎ-এর বৃহত্তম পাথুরে গ্রহ এবং সর্বাধিক ঘনত্বযুক্ত গ্রহ হল পৃথিবী। সংস্কৃত শব্দ ‘পৃথ্বী‘ থেকে ‘পৃথিবী’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে, যার অর্থ হল পৃথুর ভূমি বা পৃথুর রাজত্ব। উল্লেখ্য, পৃথু হলেন হিন্দুধর্ম অনুসারে প্রথম বিশ্বজনীন শাসক। পৃথু শব্দটির অর্থ হল সুবিস্তৃত, মহান, বৃহৎ। গ্রিক ও লাতিন ভাষাতে পৃথিবী যথাক্রমে গাইয়া (Gaia) ও টেরা (Terra) নামে পরিচিত। আনুমানিক ৪৫৪ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবী নিজ অক্ষের চারিদিকে ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪.০৯ সেকেন্ডে একবার প্রদক্ষিণ করে এবং ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী পৃষ্ঠের ৭০.৮% জলভাগ ও ২৯.২% স্থলভাগ। মহাকাশ থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠের জলভাগ নীল রঙের দেখায়। তাই পৃথিবীকে নীল গ্রহ (Blue Planet) বলা হয়। এখনও পর্যন্ত, পৃথিবী হল আমাদের সৌরজগৎ এবং মহাবিশ্বের একমাত্র মহাজাগতিক বস্তু, যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। আধুনিক গবেষণা (PLOS Biology, ২০১১) অনুসারে, পৃথিবীতে ৮৭ লক্ষ (± ১৩ লক্ষ) সুকেন্দ্রিক জীব (Eukaryote) প্রজাতি রয়েছে।
পৃথিবী হল মানুষ সহ সকল জীবের বাসভূমি। তাই পৃথিবীর পরিবেশ জীবজগৎ-এর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বসুন্ধরা দিবসের মূল লক্ষ্য হল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদগুলি সুরক্ষিত করা, বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে অনুপ্রাণিত করা। বসুন্ধরা দিবসের প্রধান কর্মসূচি হল — বৃক্ষরোপণ, স্থানীয় এলাকার বর্জ্য পরিষ্কার, প্রকৃতি অন্বেষণ, বর্জ্য থেকে জৈবসার তৈরি, বর্জ্য থেকে পুনর্ব্যবহার দ্রব্য তৈরি, জল সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ব্যবস্থার প্রচলন, সবুজ শক্তির ব্যবহার, পরিবেশ সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
Pingback: World Book Day - ভূগোলিকা-Bhugolika