Sunday, July 27, 2025

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভৌগোলিক প্রবন্ধ

Chocolate Hills of Philippines

ফিলিপিন্সের চকোলেট পাহাড়

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Chocolate Hills of Philippines । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি ফিলিপিন্সের চকোলেট পাহাড় সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

Chocolate Hills of Philippines
চকোলেট পাহাড়, বোহোল প্রদেশ, ফিলিপিন্স

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র ফিলিপিন্স/ফিলিপাইনস্ (Philippines) -এর মধ্য ভিসায়াস অঞ্চল (Central Visayas Region) -এর বোহোল প্রদেশ (Bohol Province) -এ অবস্থিত চকোলেট পাহাড় (Chocolate Hills) হল এক ভূতাত্ত্বিক গঠন। যা ফিলিপিন্সের জাতীয় ভাষা ফিলিপিনো (Filipino) -তে ‘সোকোলাতেং বুরোল’ (Tsokolateng Burol) নামে পরিচিত। বোহোল প্রদেশের চকোলেট পাহাড় একটি বিখ্যাত পর্যটনস্থল এবং ফিলিপিন্সের তৃতীয় ‘ন্যাশনাল জিওলজিক্যাল মনুমেন্ট’ (National Geological Monument)। চকোলেট পাহাড় হল প্রকৃতপক্ষে চুনাপাথর দ্বারা তৈরি, তৃণ আচ্ছাদিত, প্রায় প্রতিসম শঙ্কু বা গম্বুজ আকৃতির উঁচু ঢিবি।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : ভাসমান দ্বীপ ফুমদি

বোহোল প্রদেশে ৫০ বর্গকিমিরও অধিক এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই চকোলেট পাহাড় অঞ্চলকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায় — (১) প্রধান অঞ্চল (Major Regions): সাগবায়ান (Sagbayan), বাটুয়ান (Batuan) ও কারমেন (Carmen) — এই ৩ টি মিউনিসিপ্যালিটি এলাকাতে বিস্তৃত এবং (২) অপ্রধান অঞ্চল (Minor Regions): বিলার (Bilar), সিয়েরা বুলোনেস্ (Sierra Bullones) ও ভ্যালেন্সিয়া (Valencia) মিউনিসিপ্যালিটি এলাকাতে বিস্তৃত। সমগ্র বোহোল প্রদেশে আনুমানিক ১২৬৮ টি থেকে ১৭৭৬ টি ঢিবি (অর্থাৎ চকোলেট পাহাড়) রয়েছে। এই ঢিবিগুলির গড় উচ্চতা ৩০-৫০ মিটার এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা ১২০ মিটার। শুষ্ক ঋতুতে তৃণ আচ্ছাদিত ঢিবিগুলি শুকিয়ে গিয়ে চকোলেট বাদামী রঙ ধারণ করে। তখন এই ঢিবিগুলি অনেকটা চকোলেট ক্যান্ডির মতো দেখতে হয়। তাই, এই ঢিবিগুলি ‘চকোলেট পাহাড়’ (Chocolate Hills) নামে পরিচিত।

চকোলেট পাহাড়গুলির উৎপত্তি হল কিভাবে? এনিয়ে তিনটি পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। প্রথম কাহিনী অনুসারে, দুই ঝগড়াটে দৈত্যের বালি, পাথর প্রভৃতি নিয়ে লড়াইয়ের ফলেই চকোলেট পাহাড়গুলি গড়ে উঠেছে। দ্বিতীয় কাহিনী অনুসারে, প্রেমিকার মৃত্যুতে অ্যারোগো নামের এক দৈত্যের অশ্রুবিন্দু শুকিয়ে চকোলেট পাহাড়গুলি গড়ে উঠেছে। আর তৃতীয় কাহিনী অনুসারে, কারাবাও নামের এক দৈত্যের মলত্যাগের ফলেই চকোলেট পাহাড়গুলি গড়ে উঠেছে। ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণে, চকোলেট পাহাড়গুলি শঙ্কু আকৃতির কার্স্ট পাহাড় (Conical Karst Hills), যা আবার ‘ককপিট কার্স্ট’ (Cockpit Karst) ‘মোগোতে’ (Mogote) নামেও পরিচিত। প্লায়োসিন পর্বের শেষদিক থেকে প্লিস্টোসিন পর্বের প্রথমদিকের পাতলা-মাঝারি স্তরের বালি ও পাথুরে সামুদ্রিক চুনাপাথর দ্বারা এই ঢিবি বা পাহাড়গুলি গঠিত হয়। এই চুনাপাথর প্রবাল, অ্যালগি, মোলাস্ক ও ফোরামিনিফেরা জীবাশ্ম সমৃদ্ধ। ভূতাত্ত্বিক চলনের কারণে সামুদ্রিক প্রবাল অবক্ষেপ প্রথমে সমুদ্রগর্ভ থেকে উত্থিত হয় এবং দীর্ঘকাল ধরে বায়ু ও জলের ক্ষয়কার্যের দ্বারা ক্ষয়িত হয়ে ঢিবি বা পাহাড়গুলি গড়ে তোলে। চকোলেট পাহাড়গুলিতে মূলত তৃণ জাতীয় স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়, যার মধ্যে কুনাই ঘাস (Imperata cylindrica) এবং কাশ (Saccharum spontaneum) প্রধান। এছাড়া অ্যাস্টার ও ফার্ন দেখা যায়। এই ঢিবি বা পাহাড়গুলি সমতলভূমি দ্বারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এই সমতল অংশে ধান সহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসল চাষ করা হয়।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : বন্যপ্রাণ পর্যটন – কৃষ্ণসার জাতীয় উদ্যান

বোহোল প্রদেশের কারমেন মিউনিসিপ্যালিটির সরকারি পর্যটন কেন্দ্র ‘চকোলেট হিলস্ কমপ্লেক্স’ হল চকোলেট পাহাড় অঞ্চলের প্রধান ভিউ পয়েন্ট। ১৯৮৮ সালে ফিলিপিন্সের ‘ন্যাশনাল কমিটি অন জিওলজিক্যাল সায়েন্সেস্’ বোহোল প্রদেশের চকোলেট পাহাড়কে ‘ন্যাশনাল জিওলজিক্যাল মনুমেন্ট’ (National Geological Monument) রূপে ঘোষণা করে। ২০০৬ সালে ফিলিপিন্সের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ এনভায়রণমেন্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস্’ চকোলেট পাহাড়কে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে প্রস্তাবিত করে। চকোলেট পাহাড় সংরক্ষণে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলি হল — (১) খননকার্যের ফলে চকোলেট পাহাড়ের স্বাভাবিক উদ্ভিদ বর্তমানে হুমকিগ্রস্ত। (২) পর্যটন প্রসারের কারণে রিসর্ট সহ অন্যান্য নির্মাণ কার্যের ফলে চকোলেট পাহাড়ের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত। (৩) চকোলেট পাহাড় সংরক্ষিত অঞ্চলে ভূমি ব্যবহার এবং সম্পদ উপযোগিতা ইস্যুতে আইনি সমস্যা ও স্থানীয় অধিবাসীদের অসন্তোষ।

বর্ষাকাল ব্যতীত, বছরের যেকোনো সময় চকোলেট পাহাড় অঞ্চল ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। চকোলেট পাহাড় শুধুমাত্র জনপ্রিয় পর্যটনস্থলই নয়, বোহোল প্রদেশের প্রাকৃতিক আকর্ষণের প্রতীক। বোহোল প্রদেশের প্রাদেশিক সীলমোহর ও পতাকাতেও চকোলেট পাহাড়ের চিত্র রয়েছে। আকাশ থেকে সবুজ সমতলভূমির ওপর তৃণ আচ্ছাদিত চুনাপাথরের এই ঢিবিগুলি অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরে। ফিলিপিন্স সরকার কর্তৃক এই ‘প্রস্তাবিত ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-টি মানুষের লোভ ও স্বার্থের হাত থেকে সুরক্ষিত থাক, এটাই কাম্য

উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-II]

লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- Wayback Machine ; Govt. of Bohol Province, Philippines ; Govt. of Philippines ; Wikipedia ; Bohol Chronicle ; National Geographic ; The Culture Trip

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধি

4 thoughts on “Chocolate Hills of Philippines

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!