Biological Diversity to Biodiversity
জৈবিক বৈচিত্র্য থেকে জীববৈচিত্র্য
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Biological Diversity to Biodiversity । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি জীববৈচিত্র্য ধারণার উদ্ভব সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

অশ্মমন্ডল, বায়ুমন্ডল ও বারিমন্ডল অর্থাৎ সমগ্র জীবমন্ডল জুড়ে বসবাসকারী উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবের মধ্যে বিরাজমান প্রজাতিগত, জিনগত ও পরিবেশগত বিভিন্নতাকে সাধারণভাবে ‘জৈব বৈচিত্র্য’ বলা যায়। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ‘Biological Diversity’ (জৈবিক বৈচিত্র্য) ধারণাটি ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল তাঁর সময়কালে ৫০০-৬০০ প্রজাতির জীবের কথা আলোচনার মাধ্যমে প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বিষয়টির উপর আলোকপাত করেন। আধুনিক কালের ধারণা অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, ১৯৪৮ সালে মার্কিন উদ্ভিদবিদ রুথ মার্টাল প্যাট্রিক (Ruth Myrtle Patrick) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার ল্যাঙ্কাস্টারের কনেস্টোগা নদী অববাহিকায় গবেষণার মধ্য দিয়ে ‘Biological Communities’-কে সাধারণীকরণের সফল প্রচেষ্টা করেন, যা অনেকটা জৈব বৈচিত্র্যকেই সমর্থন করে। অন্যদিকে দুই রাশিয়ান বিজ্ঞানী এন. এল. জার্বিলস্কাই (N. L. Gerbilskii) ও এ. পেত্রানকেভিচ (A. Petrunkevitch) ১৯৫৫ সালের জুনে সিস্টেমেটিক জুওলজি (Systematic Zoology) জার্নালে প্রকাশিত তাঁদের ‘Intraspecific Biological Groups of Acipenserines and Their Reproduction in the Lower Regions of Rivers with Regulated Flow’ শীর্ষক প্রবন্ধে জীবের জীবন ইতিহাস ও আচরণের অন্তঃনির্দিষ্ট বৈচিত্র্য আলোচনা প্রসঙ্গে সুপ্তভাবে জৈব বৈচিত্র্যের বিষয়টিই আলোচনা করেন। পরবর্তী সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুওলজি বিভাগের দুই অধ্যাপক মেলবোর্ন সি. হোয়াইটসাইড (Melbourne C. Whiteside) ও রডনি ভি. হার্মসওয়ার্থ (Rodney V. Harmsworth) ১৯৬৭ সালের জুলাইতে প্রকাশিত তাঁদের ‘Species Diversity in Chydorid (Cladocera) Communities’ নামক আলোচনায় একই ধারণা প্রদান করেন। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত ‘A Different Kind of Country’ নামক গ্রন্থে ‘A Question of Diversity’ শীর্ষক অধ্যায়ে পরিবেশের বিভিন্ন বৈচিত্র্য সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে ‘Diversity’ বিষয়টিকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসেন মার্কিন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ তথা পরিবেশ সংরক্ষণবিদ রেমন্ড ফ্রেডরিক দাসম্যান (Raymond Fredric Dasmann)। তিনি তাঁর এই গ্রন্থে ‘The Stored Wealth of Nature’ নামক দ্বিতীয় অধ্যায়ে, মূল বইয়ের ৪৯-তম পাতায় “…diversity itself guarantees biological control of pests…” বলে উল্লেখ করে ‘Diversity’ ও ‘Biological’ শব্দ দুটি ব্যবহার করেন, কিন্তু তা কখনোই ‘Biological Diversity’-এর সমার্থক ছিল না। অর্থাৎ ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্নভাবে জৈব বৈচিত্র্য ধারণাটি বিকশিত হলেও, এর বর্তমান নাম প্রদান করা সম্ভব হয়নি।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : আরাকু উপত্যকার বোরা গুহা
১৯৮০ সালে তিনটি প্রকাশনীর মাধ্যমে ‘Biological Diversity’ শব্দবন্ধটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। এই তিনটি প্রকাশনীর মধ্যে দুটি প্রকাশনী টমাস ই. লাভজয় (Thomas E. Lovejoy) -এর এবং অপরটি দুই আমেরিকান উদ্ভিদবিদ এলিয়ট এ. নোরসে (Elliott A. Norse) ও আর. ই. ম্যাকম্যানাস (R. E. McManus) -এর। টমাস লাভজয় ১৯৮০ সালে ‘কনজার্ভেশন বায়োলজি’ (Conservation Biology) নামক জার্নালে ‘An evolutionary-ecological perspective’ শীর্ষক প্রবন্ধে প্রথম ওই শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন এবং পরে ১৯৮০ সালের অক্টোবরে ‘Changes in Biological Diversity’ শীর্ষক প্রবন্ধে পুনরায় ‘Biological Diversity’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন। অন্যদিকে নোরসে ও ম্যাকম্যানাস ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত তাঁদের ‘Ecology and living resources biological diversity’ শীর্ষক প্রবন্ধে ‘Biological Diversity’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন। একই বছরে দু’মাসের ব্যবধানে দুটি জায়গা থেকে শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হলেও, টমাস লাভজয়ের প্রবন্ধে শব্দবন্ধটি প্রথম ব্যবহৃত হওয়ায়, টমাস লাভজয়কেই ‘Biological Diversity’ শব্দবন্ধটির প্রবর্তক হিসাবে ধরা হয়। লাভজয় শব্দটির যথার্থ সংজ্ঞা প্রদান না করলেও, প্রজাতি সংখ্যার বৈচিত্র্য বোঝাতে শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন। অন্যদিকে ‘Genetic diversity ও Ecological diversity’ বিষয়দুটিকে একত্রিতভাবে উপস্থাপনের জন্য নরসে ও ম্যাকম্যানাস ওই শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন।
‘Biological Diversity’ শব্দবন্ধটি ১৯৮০ সালের শেষের দিকে ব্যবহৃত হলেও, এর সংক্ষিপ্ত রূপ ‘Biodiversity’ শব্দটি প্রবর্তিত হয় আরও প্রায় চার বছর পর। ১৯৮৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস্ এবং স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন পরের বছর জীব বৈচিত্র্য সম্পর্কিত একটি সম্মেলন আয়োজন করার কথা ঘোষণা করে। সে সময় ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস্-এর বরিষ্ঠ কার্যক্রম আধিকারিক ছিলেন ওয়াল্টার জি. রোজেন (Walter G. Rosen), ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওই সম্মেলনের নামকরণের দায়িত্ব তার উপর বর্তায়। শেষমেশ তিনি ১৯৮৫ সালে সম্মেলনটির নামকরণ করেন ‘ন্যাশনাল ফোরাম অন বায়োডাইভার্সিটি’ (National Forum on BioDiversity) এবং এর সাথেই ওয়াল্টার জি. রোজেনের মাধ্যমে ১৯৮৫ সালে ‘Biological Diversity’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হিসাবে ‘BioDiversity’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। ওই সম্মেলন ১৯৮৬ সালের ২১-২৪ শে সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন শহরে আয়োজিত হয়। এই সম্মেলন থেকে উঠে আসা যাবতীয় তথ্য সম্বল করে প্রায় দুই বছর পর ১৯৮৮ সালে মার্কিন উদ্ভিদবিদ এডওয়ার্ড অসবর্ন উইলসন (Edward Osborne Wilson) ‘Biodiversity’ নামক গ্রন্থ প্রকাশ করেন এবং বিশ্বের কাছে ‘Biodiversity’ শব্দটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। উল্লেখ্য, এডওয়ার্ড অসবর্ন উইলসন ‘জীববৈচিত্র্যের জনক’ (Father of Biodiversity) নামে পরিচিত।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড
‘Biodiversity’-এর প্রথম সংজ্ঞাটি আমরা পাই ‘দ্য কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি-১৯৮৬’ (The Convention on Biological Diversity-1986) থেকে। লাইল গ্লোকা এবং অন্যান্য (Lyle Glowka, et al.,) ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত তাঁদের ‘A Guide to the Convention on Biological Diversity’ নামক গ্রন্থে উক্ত সম্মেলনে প্রদত্ত জীববৈচিত্র্যর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন — “The Convention on Biological Diversity defines biodiversity as the variability among living organisms from all sources including, among other things, terrestrial, marine, and other aquatic ecosystems and the ecological complexes of which they are a part; this includes diversity within species, between species and of ecosystems.”। অর্থাৎ, স্থলজ, সামুদ্রিক ও অন্যান্য জলজ বাস্তুতন্ত্র ইত্যাদি বিভিন্নরকম বাস্তুতান্ত্রিক ক্ষেত্রে অবস্থিত বৈচিত্র্যময় জীবের প্রজাতিগত, জিনগত ও বাসস্থানগত বৈচিত্র্যের সমন্বয়কে বলা হয় জৈববৈচিত্র্য। এডওয়ার্ড অসবর্ন উইলসন ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থে ‘Biodiversity’- এর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন, “Biodiversity-তে একক প্রজাতির জনসংখ্যার বিভিন্ন জিনের বিভিন্নতা থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের বিন্যাস পর্যন্ত সমস্ত স্তরে জীবন্ত প্রাণীর জেনেটিক ভিত্তিক বৈচিত্র্যকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বোঝানো হয়েছে।” (“is meant to be all inclusive it’s the genetic based variation of living organisms at all levels, from the variety of genes in populations of single species, through species, on up to the array of natural ecosystems.”)। ম্যাকনিলি (McNeely) ও সহযোগীগণ (১৯৯০) অনুযায়ী, ”জীববৈচিত্র্য তার অংশ হিসাবে সকল প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব এবং বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশগত প্রক্রিয়াগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি একটি এমন শব্দ যা প্রদত্ত সমাবেশে বাস্তুতন্ত্র, প্রজাতি বা জিনের সংখ্যা এবং বিস্তার সহ প্রকৃতির বৈচিত্র্যের মাত্রার ক্ষেত্রে ‘ব্যাপক শব্দ’ (Umbrella Term) হিসাবে কাজ করে।” ব্রিটিশ পরিবেশ বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার জন ব্যারো (Christopher John Barrow) ২০০৫ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘Environmental Management and Development’ নামক গ্রন্থের দ্বিতীয় অংশে ‘Biodiversity Resources’ শীর্ষক অধ্যায়ে Biodiversity-এর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন — “Biodiversity is the diversity of different species together with genetic variation within each species in a given area.”। অর্থাৎ, উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলি থেকে সারাংশের ভিত্তিতে বলা যায়, স্থলজ, সামুদ্রিক ও অন্যান্য জলজ বাস্তুতন্ত্র সহ বিভিন্নরকম বাস্তুতান্ত্রিক ক্ষেত্রে অবস্থিত বৈচিত্র্যময় জীবের প্রজাতিগত, জিনগত ও বাসস্থানগত বৈচিত্র্যের সমন্বয়ই হল জৈববৈচিত্র্য।
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-II]
লেখকঃ- গোপাল মন্ডল (চৌবাট্টা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- (১) “Biodiversity, Sustainability and Human Communities: Protecting Beyond the Protected” : Tim O’Riordan, Susanne Stoll Kleemann, (২) “Measuring Biological Diversity” : Anne E. Magurran, (৩) “Biodiversity” : E. O. Wilson, (৪) “BIODIVERSITY, DEFINITION OF” : Ian R. Swingland, (৫) “CONSERVING THE WORLD’S BIOLOGICAL DIVERSITY” : Jeffrey A. McNeely et al.
Very Nice
ধন্যবাদ ❤️
Very Good
Pingback: Dooars of South - Jhaluarber - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Spatial Distribution of Vegetation in Sundarban - ভূগোলিকা-Bhugolika
Nice One…