Bhatra – Mini Digha of Malda
ভাটরা – মালদার মিনি দীঘা
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Bhatra – Mini Digha of Malda । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি মালদার মিনি দীঘা নামে পরিচিত ভাটরা বিল সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

বর্ষায় মালদা তথা গৌড়বঙ্গের এক নতুন ডেস্টিনেশন ভাটরা বিল (Bhatra Beel)। মালদা জেলার পুরাতন মালদা ব্লকের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ভাটরা বিলে বর্ষাকালে যেন সমুদ্রের আমেজ। বর্ষায় অতিরিক্ত জল জমে মোহময়ী হয়ে ওঠে ভাটরা বিল। সুবিস্তীর্ণ জলরাশির কলতান, পাড়ে ভাঙে ছোট ছোট ঢেউ। আর এই রূপের কারণে সৈকতসুন্দরী দীঘার সাথে তুলনা করে, দক্ষিণ ভাটরা গ্রামের নিকট অবস্থিত ভাটরা বিল বর্তমানে ‘মালদার মিনি দীঘা’ (Mini Digha of Malda) নামে পরিচিত। ভাটরা বিলের উত্তরে রয়েছে যাত্রাডাঙ্গা বড়বিল, দক্ষিণে রয়েছে জলকরবিথান বিল ; পূর্বে রয়েছে টাঙন নদী এবং পশ্চিমে শান্তিপুর, দক্ষিণ ভাটরা, মাধাইপুর, মোরগ্রাম প্রভৃতি গ্রামীণ বসতি। কৃষিকাজ, মৎস্যশিকার এবং সাম্প্রতিক কালে পর্যটনের কারণে ভাটরা বিল কার্যত এই গ্রামগুলির জীবন-জীবিকার লাইফ-লাইন।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : দাক্ষিণাত্যের লোনার হ্রদ
প্রকৃতিগত দিক থেকে, ভাটরা বিল হল একটি মরসুমি জলাভূমি (Seasonal Wetland)। ভূপ্রাকৃতিক ভাবে, এই অঞ্চল বরেন্দ্রভূমি (Barind Tract)-এর অন্তর্গত। উল্লেখ্য, গাঙ্গেয়-ব্রহ্মপুত্র প্লাবন সমভূমির নিম্নভূমিতে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট স্বাদুজলের আবদ্ধ জলাভূমিকে বিল (Beel) বলে। টাঙন নদী অববাহিকার নিম্নভূমিতে অবস্থিত ভাটরা বিলের আয়তন প্রায় ৮.৬৬ বর্গকিমি (৮৬৬ হেক্টর)। গত প্রায় দুই দশক ধরে ক্রমশ ভাটরা বিলের আয়তন হ্রাস পাচ্ছে। ২০০৫, ২০১০ ও ২০১৫ সালে ভাটরা বিলের আয়তন ছিল যথাক্রমে ৯.৩৯, ৮.৯৭, ৮.৭৮ বর্গকিমি। ২০২০ সালে যা আরও হ্রাস পেয়ে ৮.৬৬ বর্গকিমি হয়েছে (IJRSS-IJMRA, ২০২১)। ভাটরা বিলের সাথে টাঙন ও মৃতপ্রায় বেহুলা নদীর সংযোগ রয়েছে। বর্ষাকালে এই দুই নদীতে জল বাড়লে অতিরিক্ত জল ভাটরা বিলে জমে বিলটিকে পরিপূর্ণ রূপ দেয়। শুষ্ক ঋতুতে ভাটরা বিলের অধিকাংশ এলাকা কৃষিক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ শুষ্ক ঋতুতে যেখানে ধানচাষ হয়, বর্ষায় সেখানে নৌকা চলে।
IJRSS-এ প্রকাশিত ‘সিজনাল নেচার অফ ওয়েটল্যান্ড অ্যান্ড ইটস্ এফেক্ট অন লাইভিহুড প্যাটার্ন – অ্যা কেস স্টাডি অন ভাটরা বিল, মালদা’ (২০২১) অনুসারে, প্রাক-বর্ষা সময়কালে ভাটরা বিলের মোট আয়তনের মাত্র ১০.১% জলাশয় এবং ৮৪.৩% কৃষিভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু, বর্ষা-পরবর্তী সময়কালে ভাটরা বিলের ৯০.৭% জলাশয় এবং ৩.৭% কৃষিভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয় (২০২০)। জুন থেকে ডিসেম্বর অবদি মালদা জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ভাটরা বিলে লিজে মৎস্যচাষ করতে দেওয়া হয়। ভাটরা বিলে প্রধানত রুই, কাতলা, আড়, কই, পাবদা, ট্যাংরা প্রভৃতি মাছের চাষ হয়। এছাড়া এখানে চিংড়ি ও কাঁকড়া পাওয়া যায়। শুষ্ক ঋতুতে (জানুয়ারি-মে) এখানে ধান, পাট, ডাল ও তৈলবীজ প্রভৃতির ফসলের চাষ করা হয়। টাঙন নদীবাহিত উর্বর পলিমাটি ও মৃত্তিকার অধিক আর্দ্রতা এই অঞ্চলের কৃষিকাজে বিশেষ সহায়ক হয়।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : লক্ষদ্বীপ – পর্যটকের স্বর্গ
সাম্প্রতিক সময়ে ভাটরা বিল পর্যটনের কারণে বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মূলত বর্ষার সময়ই ভাটরা বিলে পর্যটক সমাগম ঘটে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা পর্যটকদের ভাটরা বিলে নৌকাবিহার করান। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সরকারের উচিত পর্যটনস্থল হিসেবে ভাটরা বিলের উন্নয়ন সাধন করা। এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জানান, ভাটরা বিলকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল বর্ষার মরসুমে ২-৩ মাস ছাড়া ওখানে পর্যটকদের ভিড় থাকে না। ফলে বছরের অন্য সময়ে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে সমস্যা হবে। পরিশেষে, একথা বলা যায়, ভাটরা বিল কেন্দ্রিক পর্যটন স্থানীয় এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। তাই, সরকারি উদ্যোগে ভাটরা বিলের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সৌন্দর্যায়ন করা হলে স্থানীয় এলাকার আর্থ-সামাজিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। কি ভাবছেন? ‘মালদার মিনি দীঘা’ ভাটরা বিল ভ্রমণে যাবেন? বেরিয়ে পড়ুন, সঙ্গে থাকুক কবিগুরুর চার-লাইন : ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/ একটি ধানের শিষের উপরে/ একটি শিশির বিন্দু’।
কিভাবে যাবেন? দক্ষিণবঙ্গ থেকে: ফারাক্কা থেকে মালদাগামী সড়কপথে মালদা বাইপাস ধরে সাহাপুর – রসিলাদহ – সুজাপুর – দক্ষিণ ভাটরা হয়ে পৌঁছে যাবেন ভাটরা বিল। মালদা বাইপাস সেতু থেকে ভাটরা বিলের দূরত্ব প্রায় ৮ কিমি। উত্তরবঙ্গ থেকে: গাজোল থেকে মালদাগামী সড়কপথে নারায়ণপুর মোড় থেকে মালদা বাইপাস ধরে সুজাপুর – দক্ষিণ ভাটরা হয়ে পৌঁছে যাবেন ভাটরা বিল। নারায়ণপুর মোড় থেকে ভাটরা বিলের দূরত্ব প্রায় ৪ কিমি।
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]
লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- বাংলাপিডিয়া ; Wikipedia ; বর্তমান পত্রিকা ; এই সময় ; নিউজ ১৮ বাংলা ; ভ্রমণ পিপাসু ; ইটিভি ভারত ; উত্তরবঙ্গ সংবাদ ; ‘Seasonal nature of Wetland and its effect on Livelihood pattern’ – A case study on Bhatra Beel, Malda – Sanjoy Dutta – International Journal of Research in Social Sciences/IJMRA, Vol. 11 Issue 08, August 2021 ; Official Website of Malda District, Government of West Bengal
Very nice
ধন্যবাদ ❤️
Pingback: Biodiversity Chronicle of Purulia District - ভূগোলিকা-Bhugolika
Oh Lovely!
ধন্যবাদ ❤️
Pingback: Story of Blue Planet - Our Earth - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Tourism - Joychandi Hill of Purulia - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Sikiajhora - Amazon of Dooars - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Solar Maximum & Solar Minimum - ভূগোলিকা-Bhugolika
Good
Very Nice
ধন্যবাদ ❤️
Very Good
ধন্যবাদ ❤️
Pingback: Srinagar - Tourism in Kashmir - ভূগোলিকা-Bhugolika