Alpha, Beta & Gamma Diversity
আলফা, বিটা ও গামা বৈচিত্র্য
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Alpha, Beta & Gamma Diversity । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি জীববৈচিত্র্যের আলফা, বিটা ও গামা বৈচিত্র্য সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে বা স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন প্রকার জীবের বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাবেশকে জীববৈচিত্র্য (Biodiversity) বলে। UNEP-এর সংজ্ঞা অনুসারে, জীববৈচিত্র্য হল জিন, প্রজাতি এবং বাস্তুতান্ত্রিক পর্যায়ে বৈচিত্র্যের পরিমাপ। উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে অনুষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল ফোরাম অন বায়োডাইভার্সিটি’ শীর্ষক সভাতে ওয়াল্টার জি. রোসেন সর্বপ্রথম ‘Biodiversity’ শব্দটি ব্যবহার করেন। মে, ২০১৬ তে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, পৃথিবীতে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন (ভারতীয় হিসেবে ১,০০,০০০ কোটি) জীব প্রজাতি রয়েছে এবং সমস্ত জীব প্রজাতির ৯৯.৯৯৯% এখনও অনাবিষ্কৃত রয়েছে। কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি (CBD) -এর তথ্যানুসারে, শুধুমাত্র ভারতেই ৪৫০০০+ প্রজাতির উদ্ভিদ (বিশ্বের প্রায় ৭%) এবং ৯১০০০+ প্রজাতির প্রাণী (বিশ্বের প্রায় ৬.৫%) রয়েছে, যা থেকে পৃথিবীর জীবকূলের বৈচিত্র্যময় উপস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।
উপাদানের ভিত্তিতে জীববৈচিত্র্যকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয় ; যথা : (১) জিনগত বৈচিত্র্য :- কোনো জীব প্রজাতির মধ্যে যে গঠন ও প্রকৃতিগত পার্থক্য অর্থাৎ জিনগত বিভিন্নতা থাকে, তাকে জিনগত বৈচিত্র্য (Genetic Diversity) বলে। জিনগত বৈচিত্র্য : জনসংখ্যা → একক/ব্যক্তি → ক্রোমোজোম → জিন → নিউক্লিওটাইড। উদাহরণ — বর্তমানে মানুষের ৩৫-৪৫ হাজার জিনগত বৈচিত্র্য রয়েছে। (২) প্রজাতিগত বৈচিত্র্য :- কোনো অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির (উদ্ভিদ, প্রাণী, আণুবীক্ষণিক জীব) জীবের সমাবেশকে প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (Species Diversity) বলে। প্রজাতিগত বৈচিত্র্য : রাজ্য → পর্ব → শ্রেণী → বর্গ → গোত্র → গণ → প্রজাতি → জনসংখ্যা → একক/ব্যক্তি। উদাহরণ — কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি (CBD) এর তথ্যানুসারে, বর্তমানে ব্রাজিলে কমপক্ষে ১,০৩,৮৭০ প্রাণী এবং ৪৩,০২০ উদ্ভিদ প্রজাতি (জ্ঞাত) রয়েছে। (৩) বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য :- কোনো অঞ্চলে বাস্তুতন্ত্রের সমস্ত অজীবজ ও জীবজ উপাদানের মধ্যে যে বিভিন্নতা থাকে, তাকে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity) বলে। বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য : বায়োম → জীব ভৌগোলিক অঞ্চল → ভূমিরূপ → বাস্তুতন্ত্র → বাসস্থান → ইকোলজিক্যাল নিচ → জনসংখ্যা। উদাহরণ — বনভূমি, তৃণভূমি, মরুভূমি, পুকুর, কৃষিভূমি প্রভৃতি প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য দেখা যায়।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : প্রসঙ্গ – আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
আমেরিকান বাস্তুবিদ রবার্ট হার্ডিং হুইটেকার ১৯৭২ সালে বাস্তুতান্ত্রিক জীববৈচিত্র্য নির্ধারণের জন্য তিনটি সূচক (Index) প্রদান করেন ; যথা — আলফা বৈচিত্র্য/Alpha Diversity (α-Diversity), বিটা বৈচিত্র্য/Beta Diversity (β-Diversity) ও গামা বৈচিত্র্য/Gamma Diversity (γ-Diversity)। তিনি কোনো নির্দিষ্ট বাসস্থানে নির্দিষ্ট প্রজাতির সংখ্যা, আয়তন ও ঘনত্ব বোঝাতে উপরোক্ত তিনটি সূচক ব্যবহার করেন। হুইটেকারের মতে, কোনো একটি ভূমিরূপের সামগ্রিক প্রজাতি বৈচিত্র্য (অর্থাৎ গামা বৈচিত্র্য) দুটি বিষয় দ্বারা নির্ধারিত হয় — স্থানীয় স্তরে কোনো একটি বাসস্থানের গড় প্রজাতি বৈচিত্র্য (অর্থাৎ আলফা বৈচিত্র্য) এবং বিভিন্ন বাসস্থানের মধ্যে প্রজাতির বৈচিত্র্য (অর্থাৎ বিটা বৈচিত্র্য)। (Alpha, Beta & Gamma Diversity)
(১) আলফা বৈচিত্র্য: একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বা একটি নির্দিষ্ট জীবগোষ্ঠীতে উপস্থিত প্রজাতির সংখ্যাকে আলফা বৈচিত্র্য বলে। অর্থাৎ একই প্রকার বাসস্থানে প্রজাতির সংখ্যার বৈচিত্র্যই হল আলফা বৈচিত্র্য। বাস্তুবিদ হুইটেকার স্থানীয় স্তরে বা বাসস্থানে প্রজাতির সংখ্যা বা গড় বোঝাতে আলফা বৈচিত্র্য ব্যবহার করেন। আলফা বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় বা আঞ্চলিক স্তরে স্থলজ, জলজ ও বায়বীয় বাসস্থানের বিষয়ে বিবেচনা করা হয়। এই তিন ধরণের বাসস্থানে প্রজাতির মোট সংখ্যা বা কোনো নির্দিষ্ট প্রজাতির গড়কে নির্ণায়ক হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ আলফা বৈচিত্র্য হল — ‘…the mean species diversity in sites or habitats at a local scale’। আলফা বৈচিত্র্য হল জীববৈচিত্র্যের ক্ষুদ্রতম একক। আলফা বৈচিত্র্যের মাধ্যমে ওই অঞ্চলে বা বাসস্থানে প্রজাতির স্বল্পতা বা প্রাচুর্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অধিক আলফা বৈচিত্র্যের অর্থ হল অধিক প্রজাতির প্রাচুর্য। আলফা বৈচিত্র্যে জীবগোষ্ঠী একই পরিবেশ ও একই অঞ্চল থেকে একই সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হয়। প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য আলফা বৈচিত্র্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সুন্দরবনের একটি দ্বীপের জীবগোষ্ঠীর বৈচিত্র্য।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : মহাদেশ সংযোগকারী বসফরাস সেতু
(২) বিটা বৈচিত্র্য: একটি ভৌগোলিক অঞ্চলের বিভিন্ন সংলগ্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন বাসস্থানের জীবগোষ্ঠীর মধ্যে যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তাকে বিটা বৈচিত্র্য বলে। অর্থাৎ আন্তঃপ্রাকৃতিক স্থলজ বা জলজ বাসস্থানে আন্তঃপ্রজাতির বৈচিত্র্যই হল বিটা বৈচিত্র্য। প্রকৃতিতে প্রতিটি ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ বাসস্থানে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির মধ্যে সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। যেমন, স্বাদু জলের পুকুর এবং হ্রদ উভয়েই জলজ বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত হলেও স্বাদু জলের পুকুর এবং হ্রদে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির মধ্যে সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। এই বৈচিত্র্যই হল বিটা বৈচিত্র্য। অর্থাৎ বিটা বৈচিত্র্য হল দুটি আলফার বৈচিত্র্যের মধ্যেকার বৈচিত্র্য, কিংবা বলা যায় বিটা বৈচিত্র্য হল — ‘…the ratio between regional and local species diversity’। অধিক বিটা বৈচিত্র্যের অর্থ হল বিভিন্ন বাসস্থানের প্রজাতির মধ্যে অধিক বৈসাদৃশ্য। বিটা বৈচিত্র্যে ভিন্ন পরিবেশে বিভিন্ন সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হয়। বিটা বৈচিত্র্যের সাহায্যে বৃহৎ অঞ্চলে প্রজাতির মোট সংখ্যার হ্রাসবৃদ্ধি ও ভৌগোলিক বন্টন সহজেই নির্ধারণ করা যায়। আন্তঃপ্রাকৃতিক স্থলজ ও জলজ বাসস্থানে প্রজাতির বিবর্তনের ক্ষেত্রে বিটা বৈচিত্র্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। বিটা বৈচিত্র্য নির্ণয়ের সূত্রটি হল : বিটা বৈচিত্র্য = গামা বৈচিত্র্য ÷ আলফা বৈচিত্র্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সুন্দরবনের দুটি পাশাপাশি অবস্থিত দ্বীপের জীবগোষ্ঠীর বৈচিত্র্য।
(৩) গামা বৈচিত্র্য: একটি বৃহৎ ভৌগোলিক অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত জীব প্রজাতির সামগ্রিক বৈচিত্র্যকে গামা বৈচিত্র্য বলে। অর্থাৎ গামা বৈচিত্র্য হল — ‘…the total species diversity in a landscape’। একটি বৃহৎ প্রাকৃতিক ভূখন্ডে স্থানীয় বা আঞ্চলিক, মাঝারি ও বৃহৎ প্রকৃতির স্থলজ এবং জলজ বাসস্থানের উপস্থিতি রয়েছে। একই গোষ্ঠীর বা প্রজাতির বিভিন্ন বাসস্থানে তথা সামগ্রিক ভাবে কোনো বৃহৎ ভৌগোলিক পরিবেশে গোষ্ঠী বা প্রজাতির মোট সংখ্যা নির্ধারক হল গামা বৈচিত্র্য। অধিক গামা বৈচিত্র্যের অর্থ হল প্রজাতির পৃথকীকরণ এবং ভৌগোলিক অংশীদারিত্বের অনুপস্থিতি। আলফা ও বিটা বৈচিত্র্যের সমষ্টিই হল গামা বৈচিত্র্য। গামা বৈচিত্র্যে জীবগোষ্ঠী ভিন্ন পরিবেশে বিভিন্ন প্রজাতি ও সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। গামা বৈচিত্র্যের মাধ্যমে বাসস্থান ভিত্তিক প্রজাতির সংখ্যা নির্ধারণ, গোষ্ঠীর স্বল্পতা ও প্রাচুর্য সহজেই নির্ণয় করা যায়। গামা বৈচিত্র্য নির্ণয়ের সূত্রটি হল : গামা বৈচিত্র্য = আলফা বৈচিত্র্য + বিটা বৈচিত্র্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সমগ্র সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপের জীবগোষ্ঠীর বৈচিত্র্য।
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]
লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- Convention on Biological Diversity ; Wikipedia ; National Science Foundation/NSF News ; Jagran Josh ; দ্বাদশ আধুনিক ভূগোল – সমরেন্দ্রনাথ মোদক ; উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল – মুখোপাধ্যায় ও ভট্টাচার্য ; Evolution and Measurement of Species Diversity – R. H. Whittaker
Pingback: Khazan Agriculture of Goa - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Topic - Ecotone & Edge Effect - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Asia's Cleanest River Dawki - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Tusu Festival of Rarh Region - ভূগোলিকা-Bhugolika
Excellent…