মাউন্ট এভারেস্ট বিজয়ের ইতিহাস

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : History of Mount Everest Conquest । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট বিজয়ের ইতিহাস সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

মাউন্ট এভারেস্ট (Mount Everest) হল পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ (World’s Highest Mountain Peak)। এশিয়া মহাদেশের হিমালয় পর্বতের মহালাঙ্গুর হিমাল রেঞ্জে অবস্থিত মাউন্ট এভারেস্টের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা হল ৮৮৪৮.৮৬ মিটার বা ২৯,০৩১.৭ ফুট। এটি নেপাল-তিব্বত (চীন) আন্তর্জাতিক সীমান্তে অবস্থিত। ভূ-মানচিত্রে মাউন্ট এভারেস্টের অবস্থান হল — ২৭°৫৯’১৬” উত্তর এবং ৮৬°৫৫’৪০” পূর্ব। এই অঞ্চলটি সারাবছর তুষারাবৃত থাকে এবং কোনো প্রকার জীবিত প্রাণী দেখা যায় না। তবে অত্যধিক উত্তর-পশ্চিম ঝটিকা বায়ুর জন্য শৃঙ্গদেশ তুলনামূলকভাবে তুষারমুক্ত থাকে। মাউন্ট এভারেস্টের চারিপাশের প্রধান হিমবাহ গুলি হল — পূর্বের কাংশুং হিমবাহ ; উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের রংবুক হিমবাহ ; পশ্চিম ও দক্ষিণের খুম্বু হিমবাহ প্রভৃতি। তিব্বতী ভাষায় মাউন্ট এভারেস্টের নাম হল — ‘চোমোলুংমা’ (Chomolungma), যার অর্থ হল — ‘পবিত্র মাতৃদেবী’ (Holy Mother)। নেপালি ভাষায় মাউন্ট এভারেস্ট ‘সগরমাথা’ (Sagarmatha) নামে পরিচিত, যার অর্থ হল — ‘আকাশের দেবী’ (Goddess of the Sky)।

মাউন্ট এভারেস্টই যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, ১৮৫২ সালের পূর্বে এই তথ্য অজানা ছিল। সে সময় কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মনে করা হত। মাউন্ট এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গ শুরুতে জরিপ বিভাগের কাছে ‘Peak b’ নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে ১৮৪৯-৫০ সালে এই শৃঙ্গের নামকরণ করা হয় ‘Peak XV’ বা পঞ্চদশ শৃঙ্গ। ১৮৫২ সালে রাধানাথ শিকদার (Radhanath Sikdar) সর্বপ্রথম নির্ভুলভাবে মাউন্ট এভারেস্ট (Peak XV) পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা পরিমাপ করেন। তাঁর নির্ণীত মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ছিল ২৯,০০০ ফুট বা ৮৮৩৯.৮ মিটার। তবে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল অ্যান্ড্রু ওয়া পরিমাপ সম্পর্কে সন্দেহ এড়াতে ২৯,০০০ ফুটের পরিবর্তে তা ২৯,০০২ ফুট হিসেবে ধার্য করেন। ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ২৯,০০২ ফুট বা ৮৮৪০ মিটার প্রকাশ করে। সেই থেকে মাউন্ট এভারেস্ট পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে পরিচিত হয়, যদিও সে সময় মাউন্ট এভারেস্ট নামকরণ হয়নি। স্যার জর্জ এভারেস্ট (ব্রিটিশ ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল – সময়কাল : ১৮২৩-৪৩) -এর নামানুসারে ১৮৬৫ সালে এই শৃঙ্গের নামকরন করা হয় — ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। ১৯৫৪ সালে ভারত সরকারের জরিপ বিভাগ মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা পরিমাপ করে। এই জরিপে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ছিল ২৯,০২৮.৮৭ ফুট বা ৮৮৪৮ মিটার, যা নেপাল সরকার মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা হিসেবে গ্রহণ করে। দীর্ঘকাল ধরে এটাই ছিল মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা। তবে, ২০২০ সালের ৮ই ডিসেম্বর মাউন্ট এভারেস্টের সাম্প্রতিক উচ্চতা প্রকাশিত হয়, যা হল ২৯,০৩১.৭ ফুট বা ৮৮৪৮.৮৬ মিটার। উল্লেখ্য, ভূতাত্ত্বিক কারনে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা প্রতি বছর স্বল্প হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মাউন্ট এভারেস্ট বিজয়ের ইতিহাস: ১৯৫৩ সালের ২৯ শে মে, তেনজিং নোরগে (ভারত) ও এডমন্ড হিলারি (নিউজিল্যান্ড) সর্বপ্রথম পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ – ‘মাউন্ট এভারেস্ট’ জয় করেন। বিশ্বের পর্বতারোহণের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিন ও ঘটনা। কিন্তু ১৯৫৩ সালে নোরগে ও হিলারি মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার পূর্বে, মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের তিন দশকেরও বেশি পুরানো এক ইতিহাস রয়েছে। ১৯৫৩ সালে নোরগে ও হিলারির পূর্বে, ৭ টি অভিযাত্রী দল ও ৩ টি পরিদর্শনকারী দল ১৯২১-১৯৫২ সময়কালে মাউন্ট এভারেস্ট অভিযান করেছিল। উল্লেখ্য, ১৮৮৫ সালে ‘Alpine Club’ -এর সভাপতি ক্লিন্টন থমাস ডেন্ট, তাঁর ‘Above the Snow Line’ গ্রন্থে প্রথম মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণ সম্ভবের কথা বলেন। ১৯২১ সালে ‘Alpine Club’ এবং ‘Royal Geographical Society’ মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের উদ্দেশ্যে কর্নেল চার্লস কেনেথ হাওয়ার্ড-ব্যুরির নেতৃত্বে ‘মাউন্ট এভারেস্ট কমিটি’ (Mount Everest Committee) গঠন করে।

মাউন্ট এভারেস্ট বিজয়ের সেই বিস্মৃতপ্রায় ইতিহাস (History of Mount Everest Conquest) সংক্ষেপে তুলে ধরা হল —

(১) প্রথম পরিদর্শনকারী দল (১৯২১): ১৯২১ সালে সর্বপ্রথম মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের জন্য প্রথম পরিদর্শনকারী দল গঠিত হয়। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল চার্লস কেনেথ হাওয়ার্ড-ব্যুরি। প্রথম প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ দলের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন — ম্যালোরি, বুলক, রাইবার্ন, ওলাসটন, হুইলার, হেরন, মর্সহেড, কেলাস প্রমুখ। এই দলটি মূলত মাউন্ট এভারেস্ট অঞ্চলের মানচিত্রায়ন এবং উত্তর দিক থেকে মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছানোর পথ অনুসন্ধান করতে গঠিত হয়েছিল। এই দলের ম্যালোরি, হুইলার ও বুলক ২৩ শে সেপ্টেম্বর তারিখে ২৩,০৩০ ফুট বা ৭০২০ মিটার উচ্চতাযুক্ত মাউন্ট এভারেস্ট অঞ্চলের ‘North Col’ পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন।

(২) প্রথম অভিযাত্রী দল (১৯২২) : ১৯২২ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চার্লস গ্র্যানভিলে ব্রুস-এর নেতৃত্বে প্রথম অভিযাত্রী দলটি গঠিত হয়। এটিই প্রকৃতপক্ষে এভারেস্ট বিজয়ের লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ। এই দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন — ক্রুফোর্ড, মরিস, নোয়েল, ফিঞ্চ, নর্টন, লংস্টাফ, ম্যালোরি, স্টার্ট প্রমুখ। এই দলের স্টার্ট ও ম্যালোরি ২২ শে মে মাউন্ট এভারেস্টের ‘North Ridge’-এর ২৬,৮০০ ফুট বা ৮১৭০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এটাই ছিল ৮০০০ মিটার বা তার অধিক উচ্চতায় মানুষের প্রথম আরোহণ। এই দলের ফিঞ্চ ও ব্রুস ‘North Ridge’-এ ২৭,৩০০ ফুট বা ৮৩২০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত আরোহণ করেন।

(৩) দ্বিতীয় অভিযাত্রী দল (১৯২৪): ১৯২৪ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চার্লস গ্র্যানভিলে ব্রুস -এর নেতৃত্বে দ্বিতীয় অভিযাত্রী দল গঠিত হয়। এই দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন — ম্যালোরি, নর্টন, নোয়েল, সমারভেল, অডেল, হ্যাজার্ড, হিংসটন, আরভাইন প্রমুখ। এই দলের সমারভেল ও নর্টন ৪ ই জুন মাউন্ট এভারেস্টের যথাক্রমে ২৮,০০০ ফুট বা ৮৫০০ মিটার এবং ২৮,১২৬ ফুট বা ৮৫৭৩ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত আরোহণ করেন।

(৪) তৃতীয় অভিযাত্রী দল (১৯৩৩): ১৯৩৩ সালে হিউ-রাটলেজ -এর নেতৃত্বে তৃতীয় অভিযাত্রী দলটি গঠিত হয়। এই দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন — বীরনাই, বৌস্টেড, ব্রকলব্যাংক, ম্যাকলিন, শিপটন, ক্রফোর্ড, লংল্যান্ড, স্মাইথ প্রমুখ। এই দলের স্মাইথ মাউন্ট এভারেস্টের ২৮,১২০ ফুট বা ৮৫৭০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত আরোহণ করে। তবে, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং অভিযাত্রী দলের সদস্যদের অসুস্থতার কারনে এই অভিযান ব্যর্থ হয়।

(৫) দ্বিতীয় পরিদর্শনকারী পর্যবেক্ষণ দল (১৯৩৫): ১৯৩৫ সালে এরিক শিপটন -এর নেতৃত্বে পরবর্তী বছরের মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে প্রস্তুতি হিসেবে দ্বিতীয় পরিদর্শনকারী দল গঠিত হয়। এই দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন — ব্রায়ান্ট, স্কেম্পসর্ন, স্পেন্ডার, টিলম্যান প্রমুখ। এই দলটি মাউন্ট এভারেস্ট অঞ্চলের ‘North Col’-এর ২৩,০৩০ ফুট বা ৭০২০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এই দলের সদস্যরা মাউন্ট এভারেস্টের নিকটবর্তী অঞ্চলের একাধিক শৃঙ্গ (খার্তাফু, খার্তাচাংড়ি ইত্যাদি) আরোহণ করেন। এই দলের সদস্য (মালবাহী) হিসেবে তেনজিং নোরগে সর্বপ্রথম মাউন্ট এভারেস্ট অভিযান করেন।

(৬) চতুর্থ অভিযাত্রী দল (১৯৩৬): ১৯৩৬ সালে হিউ-রাটলেজ -এর নেতৃত্বে চতুর্থ অভিযাত্রী দলটি গঠিত হয়। এই দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন — গ্যাভিন, হ্যারিস, হামফ্রে, মরিস, অলিভার, স্মাইথ, শিপটন, প্রমুখ। এই দলের স্মাইথ, শিপটন ও ওয়ারেন ৯ ই মে মাউন্ট এভারেস্টের ‘North Col’-এর ২৩,০৩০ ফুট বা ৭০২০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে, প্রবল তুষারপাত ও অতর্কিত বর্ষার জন্য এই অভিযান ব্যর্থ হয়।

(৭) পঞ্চম অভিযাত্রী দল (১৯৩৮): ১৯৩৮ সালে বিল টিলম্যান -এর নেতৃত্বে পঞ্চম অভিযাত্রী দলটি গঠিত হয়। এই দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন — লয়েড, অডেল, অলিভার, শিপটন, স্মাইথ প্রমুখ। ৭ জন শেরপার সহায়তায়, শিপটন ও স্মাইথ মাউন্ট এভারেস্টের ২৭,২০০ ফুট বা ৮২৯০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত আরোহণ করেন।

(৮) তৃতীয় পরিদর্শনকারী পর্যবেক্ষণ দল (১৯৫১): ১৯৫১ সালে এরিক শিপটন -এর নেতৃত্বে তৃতীয় পরিদর্শনকারী দলটি গঠিত হয়। এই দলটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন — হিলারি, মারে, ওয়ার্ড, রিডিফোর্ড প্রমুখ। প্রবল বর্ষার জন্য এই অভিযান ব্যর্থ হয়।

(৯) ষষ্ঠ অভিযাত্রী দল (১৯৫২): ১৯৫২ সালে এডুয়ার্ড ডুনান্ট -এর নেতৃত্বে ষষ্ঠ অভিযাত্রী দলটি গঠিত হয়। এই অভিযান ‘সুইস মাউন্ট এভারেস্ট অভিযান-১৯৫২’ নামে পরিচিত। এই দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন — অ্যাসপার, চিভ্যালি, ফ্লোরি, লম্বার্ড, জিমারম্যান, নোরগে প্রমুখ। এই দলের নোরগে ও ল্যাম্বার্ট মাউন্ট এভারেস্টের ২৮,১৯৯ ফুট বা ৮৫৯৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত আরোহণ করেন।

(১০) সপ্তম অভিযাত্রী দল (১৯৫২) : ১৯৫২ সালে গ্যাব্রিয়েল চিভ্যালি -এর নেতৃত্বে সপ্তম অভিযাত্রী দলটি গঠিত হয়। এই দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন — বুজিও, গ্রস, ল্যাম্বার্ট, স্পচেল, ডাইরেনফার্থ প্রমুখ। এই দলটি মাউন্ট এভারেস্টের ২৬,৬০০ ফুট বা ৮১০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত আরোহণ করেছিল। তবে, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও তুষারপাতের জন্য এই অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড

মাউন্ট এভারেস্ট বিজয় (২৯ শে মে, ১৯৫৩): উপরোক্ত ৭ টি অভিযাত্রী দল ও ৩ টি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ দল পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট বিজয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর, ১৯৫৩ সালে কর্নেল হান্ট -এর নেতৃত্বে ‘অষ্টম অভিযাত্রী দল’ গঠিত হয়। এই দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন — ইভান্স, গ্রেগরি, হিলারি, নয়েস, ওয়ার্ড, ওয়েস্টম্যাকট প্রমুখ। এই দলের চলচ্চিত্রকার ও চিকিৎসক ছিলেন যথাক্রমে — স্টবার্ট ও পাফ। তেনজিং নোরগে ছিলেন এই দলের শেরপা সর্দার। ১৭ ই মে, ১৯৫৩, এই দলটি ২৪,০০০ ফুট বা ৭৩১৫ মিটার উচ্চতায় প্রথম ক্যাম্প স্থাপন করে। পরে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন দিক থেকে মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণের চেষ্টা করে। ২৬ শে মে, ১৯৫৩, ইভান্স ও তার সহযোগী ২৮,৭০০ ফুট বা ৮৭৪৭ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত ওঠেন। ওইসময়, হান্ট ও তার সহযোগী ২৭,৩৫০ ফুট বা ৮৩৩৬ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত ওঠেন। ২৮ শে মে, ১৯৫৩, অষ্টম অভিযাত্রী দলটি ২৭,৯০০ ফুট বা ৮৫০৩ মিটার উচ্চতায় ক্যাম্প স্থাপন করেন। ২৯ শে মে, ১৯৫৩, South Col Route-এ, তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারি সকাল ৯ টার সময় মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ার খুবই নিকটে পৌঁছান এবং সকাল ১১:৩০ নাগাদ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। নোরগে ও হিলারি মাত্র ১৫ মিনিট মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় ছিলেন। দুপুরে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ার কিছুটা নিচে, নোরগে-হিলারির সাথে লোয়ের সাক্ষাৎ হয়, যিনি তাদের গরম স্যুপ দিয়ে অভ্যর্থনা করেন। ২ রা জুন, ১৯৫৩ দলটি মূল ক্যাম্পে ফিরে আসে। (History of Mount Everest Conquest)

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : দক্ষিণের ডুয়ার্স – ঝালুয়ারবেড়

তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারি কর্তৃক মাউন্ট এভারেস্ট বিজয়ের পর একটি প্রশ্ন সাধারণ মানুষ থেকে সাংবাদিক, সবার মনে উঁকি দেয় — ‘নোরগে না হিলারি – কে প্রথম বা আগে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া বা সামিটে পৌঁছান?’ যদিও তেনজিং নোরগে পরবর্তীকালে বলেছেন, হিলারিই প্রথম মাউন্ট এভারেস্টের চূড়াতে পা রাখেন। তবে এই প্রশ্নের উত্তরে, ওই অষ্টম অভিযাত্রী দলের অধিনায়ক কর্নেল হান্টের ঘোষণা চিরস্মরণীয়। এ প্রসঙ্গে কর্নেল হান্ট বলেছিলেন — “They reached it together, as a team”, অর্থাৎ তাঁরা একটি দল হিসাবে একসাথে পৌঁছেছে। (History of Mount Everest Conquest)

উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]

লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)

তথ্যসূত্রঃ- Mount Everest/Encyclopaedia Britannica ; The man who ‘discovered’ Everest/BBC News ; The Naming of Mount Everest – Everest Education Expedition/Montana State University ; Mount Everest – Its Name and Height – B. L. GULATEE, The Himalayan Journal/The Himalayan Club ; The Hindu ; The Indian Express

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : রাম সেতু – বিজ্ঞান ও রামায়ণ