Sunday, June 8, 2025

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভৌগোলিক প্রবন্ধ

Chengmari Tea Garden

চ্যাংমারি চা বাগান

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Chengmari Tea Garden । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম চা বাগান ‘চ্যাংমারি চা বাগান’ সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

Chengmari Tea Garden
চ্যাংমারি চা বাগান, জলপাইগুড়ি

পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম চা উৎপাদক অঞ্চল হল উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চল। ইন্ডিয়ান টি বোর্ডের তথ্য অনুসারে (২০২১), ডুয়ার্স অঞ্চলে মোট উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ প্রায় ২৩৬ মিলিয়ন কেজি, যা পশ্চিমবঙ্গের মোট উৎপাদিত চায়ের প্রায় ৫৮%। জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা ব্লকের অন্তর্গত চ্যাংমারি চা বাগান (Chengmari Tea Garden) হল পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম চা বাগান (West Bengal’s Largest Tea Garden)। সবুজে মোড়া ভুটান পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই চা বাগানের পূর্বদিকে ডায়না নদী এবং পশ্চিমদিকে ক্যারন নদী রয়েছে। চ্যাংমারি চা এস্টেটের মোট আয়তন ১৮০০ হেক্টর, যার মধ্যে ১৪৫০ হেক্টর জমিতে চা বাগান রয়েছে (সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ)। তবে, চ্যাংমারি চা এস্টেটের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, চ্যাংমারি চা এস্টেটের আয়তন ৪৫০০ একর বা ১৮২১ হেক্টর এবং এটি এশিয়ার একক বৃহত্তম চা বাগিচা (Single Largest Tea Plantation in Asia)

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : বীরভূমের মামা-ভাগ্নে পাহাড়

চ্যাংমারি চা বাগান আপার ডিভিশন ও লোয়ার ডিভিশনে বিভক্ত এবং ১০০% সেচসেবিত। শতবর্ষেরও অধিক পুরানো চ্যাংমারি চা এস্টেট প্রধানত কালো চা (CTC) এবং সবুজ চা উৎপাদন করে। এই চা এস্টেট প্রতি বছর ১.৫ বিলিয়ন কাপ কালো চা (CTC) এবং ৫০০ মিলিয়ন কাপ সবুজ চা বিক্রি করে৷ চ্যাংমারি চা ফ্যাক্টরি সম্পূর্ণরূপে HACCP (Hazard Analysis Critical Control Point) এবং ISO (International Organization for Standardization) প্রত্যয়িত। চ্যাংমারি চা বাগানে চা শ্রমিকের সংখ্যা ৫০০০, যার মধ্যে স্থায়ী চা শ্রমিকের সংখ্যা ৩০০০। তবে এই চা এস্টেটের ওপর নির্ভরশীল জনসংখ্যা ১৪,০০০-এরও অধিক। চ্যাংমারি চা এস্টেটে চা শ্রমিক এবং কর্মচারীদের বাসগৃহ ছাড়াও দুটি হাসপাতাল, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : জঙ্গলমহলের কুড়কুড়ে ছাতু

চ্যাংমারি চা এস্টেট হল সম্পূর্ণভাবে সৌরশক্তি পরিচালিত উত্তরবঙ্গের প্রথম চা এস্টেট। শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, অচিরাচরিত শক্তির এমন বড় আকারের ব্যবস্থা ভারত তথা এশিয়ার কোনও চা বাগানের ইতিহাসে এই প্রথম (সূত্র: উত্তরবঙ্গ সংবাদ)। ২০২৪ সালে এই চা বাগানে ৪.৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এক হেক্টর জমিতে ৪৯০ টি সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে, যা ১০৪০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। TPREL (Tata Power Renewable Energy Limited) কর্তৃক স্থাপিত এই সৌরশক্তি কেন্দ্র চা ফ্যাক্টরি চালাতে, সেচ ও অনুসারী কাজে, চা বাগানের শ্রমিক ও কর্মচারীদের বাসগৃহে এবং বাংলো ও অফিসে বিদ্যুতের জোগান দেবে। বর্তমানে প্রতিদিন সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ মিলছে। বিদ্যুৎ ব্যয় এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে এই সৌরশক্তি কেন্দ্র বিশেষ সহায়ক হবে।

উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ চা বাগানের মতো, চ্যাংমারি চা বাগানও সমস্যার বাইরে নেই। প্রাচীন বাগান, আবহাওয়ার খামখেয়ালি, লুপার পোকার আক্রমণ, শ্রমিক অসন্তোষ প্রভৃতি কারণে ডুয়ার্সের চা শিল্পের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীল নয়। সাম্প্রতিক কালে, ২০১৮ এবং ২০২১ সালে শ্রমিক-মালিক বিরোধের কারণে চ্যাংমারি চা বাগান সাময়িকভাবে বন্ধও ছিল। তবে, সদ্য স্থাপিত সৌরশক্তি কেন্দ্র চ্যাংমারি চা এস্টেট-কে ব্যয় সংকোচের মাধ্যমে নতুন দিশা দেখাবে। এছাড়া চ্যাংমারি চা বাগানে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস অবদি ‘লিন পিরিয়ড’-এ শেড-ট্রি হিসেবে কমলালেবুর চাষ বিকল্প আয়ের সন্ধান দিচ্ছে।

উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]

লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- Wikipedia ; নিউজ ১৮ বাংলা ; আনন্দবাজার পত্রিকা ; উত্তরবঙ্গ সংবাদ ; The Telegraph ; Outlook India Magazine ; Official Website of Chengmari Tea Estate

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : দ্বৈত নাগরিকত্বের লংওয়া গ্রাম

15 thoughts on “Chengmari Tea Garden

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!