Longwa Village of Dual Citizenship
দ্বৈত নাগরিকত্বের লংওয়া গ্রাম
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Longwa Village of Dual Citizenship । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি নাগাল্যান্ডের দ্বৈত নাগরিকত্বের লংওয়া গ্রাম সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

লংওয়া গ্রাম (Longwa Village) হল উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ডের মোন জেলায় অবস্থিত এক প্রত্যন্ত, পাহাড়ি গ্রাম। এই গ্রামের অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাস যেমন পর্যটকদের মুগ্ধ করে, তেমন এই গ্রামের অনির্বচনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও বিখ্যাত। সড়কপথে নাগাল্যান্ডের মোন শহর থেকে ভারত-মায়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তে অবস্থিত লংওয়া গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৪২ কিমি। পটকাই ও নাগা পর্বতের সংযোগস্থলে অবস্থিত লংওয়া গ্রাম সবুজ বনাঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত। ভারতের জনগণনা ২০১১ অনুসারে, লংওয়া গ্রামে ৭৩২ টি পরিবার রয়েছে এবং মোট জনসংখ্যা ৫১৩২ জন৷ এর মধ্যে ২৬৫৭ জন পুরুষ এবং ২৪৭৫ জন মহিলা৷ তবে নাগাল্যান্ডের সাক্ষরতা হার যেখানে ৭৯.৫৫%, সেখানে লংওয়া গ্রামের সাক্ষরতা হার মাত্র ১১.৬১% (২০১১ অনুসারে)।
নাগাল্যান্ডের লংওয়া গ্রাম দ্বৈত নাগরিকত্ব (Dual Citizenship)-এর অনন্য ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। লংওয়া গ্রামটি ভারত-মায়ানমার আন্তর্জাতিক সীমানা দ্বারা বিভক্ত, অর্থাৎ গ্রামের একটি অংশ ভারতের এবং অন্য অংশটি মায়ানমারের অন্তর্গত। লংওয়া গ্রামের ভারতের অংশটি নাগাল্যান্ডের ফোমচিং বিধানসভার অন্তর্গত এবং মায়ানমারের অংশটি ইয়োচেন লাহে নগর নির্বাচনী এলাকার অন্তর্গত। স্থানীয় ঐতিহ্য অনুসারে, শতাব্দী আগে এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপায় হিসেবে লংওয়া গ্রামের দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই ব্যবস্থা গ্রামবাসীদের শান্তিতে বসবাস করতে সাহায্য করে, যেকোনো দেশের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকে এবং তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারে। এই দ্বৈত নাগরিকত্বের ব্যবস্থা ভারত ও মায়ানমার উভয়ের দ্বারাই রক্ষণাবেক্ষণ এবং স্বীকৃত হয়েছে, যাতে গ্রামবাসীরা দুই দেশের মধ্যে অবাধে যাতায়াত করতে পারে, বাণিজ্য করতে পারে এবং সীমান্তের উভয় পাশে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারে।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : চ্যাংমারি চা বাগান
লংওয়া গ্রামের দ্বৈত নাগরিকত্ব দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার একটি বিরল দৃষ্টান্তের পাশাপাশি, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যের মূল্যের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুস্মারক। লংওয়া গ্রামের উৎপত্তি এবং ইতিহাস বংশপরম্পরায় বসবাসকারী ঐতিহ্যবাহী কোন্যাক নাগা (Konyak Naga) উপজাতি সম্প্রদায়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এই গ্রামটি কয়েক শতাব্দী আগে বর্তমান মায়ানমার থেকে স্থানান্তরিত কোন্যাক নাগা উপজাতির একটি দল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, কোন্যাক নাগারা একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ অব্যাহত রেখেছে। আজও এই গ্রামে উপজাতি প্রধান অংঘ (Angh) শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : বীরভূমের মামা-ভাগ্নে পাহাড়
লংওয়া গ্রাম উপক্রান্তীয় উচ্চভূমি জলবায়ুর অন্তর্গত। এখানে উষ্ণ ও আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং শীতল ও শুষ্ক শীতকাল দেখা যায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হয়। বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে মাঝে মাঝে আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধ্বস ঘটে। লংওয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং সরীসৃপ রয়েছে। বস্তুতপক্ষে, এই বনাঞ্চল এক গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য অঞ্চল। লংওয়া গ্রাম ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প-এর জন্যও পরিচিত, বিশেষত হাতে খোদাই করা কাঠের জিনিস। এছাড়া এই গ্রামে ঐতিহ্যবাহী কোন্যাক নাগাদের বাড়ি এবং প্রাচীন দুর্গের অবশিষ্টাংশ সহ বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে, যা এই অঞ্চলের এক সমৃদ্ধ ইতিহাসের ইঙ্গিত দেয়। লংওয়া গ্রাম মূলত কৃষিনির্ভর এবং বর্তমানে এই গ্রামের উপজাতি গোষ্ঠীর প্রধান অর্থনৈতিক কার্যকলাপ হল ঐতিহ্যবাহী ঝুম পদ্ধতিতে ধান চাষ। এছাড়া এলাচ সহ কিছু মশলার চাষও হয়। সাম্প্রতিক কালে, লংওয়া গ্রামের দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং নাগাল্যান্ডের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অনন্য আকর্ষণ হিসেবে পর্যটনশিল্প প্রসার লাভ করেছে। লংওয়া গ্রাম ভ্রমণের আদর্শ সময় নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস। (Longwa Village of Dual Citizenship)
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]
লেখিকাঃ- রিত্তিকা দত্ত (বেহালা, পর্ণশ্রী, কলকাতা)
তথ্যসূত্রঃ- India Today ; Outlook India ; Amar Ujala ; The Times of India ; Tour My India ; The Indian Express ; The Morung Express ; The Northeast Today ; Census of India 2011 ; Eastern Mirror (Nagaland)
Pingback: Kurkure Chhatu of Jangalmahal//জঙ্গলমহলের কুড়কুড়ে ছাতু - ভূগোলিকা-Bhugolika
তথ্যবহুল লেখা, খুব সুন্দর
ধন্যবাদ ❤️
Very Nice!
ধন্যবাদ ❤️
সমৃদ্ধ হলাম।
আরো ভালো ভালো লেখা দেখতে চাই।
ধন্যবাদ ❤️
Pingback: Chengmari Tea Garden//চ্যাংমারি চা বাগান - ভূগোলিকা-Bhugolika
তথ্য সমৃদ্ধ লেখা
Pingback: Mangoes of Malda - ভূগোলিকা-Bhugolika
Very Nice
Awesome
ধন্যবাদ ❤️
Pingback: Gangani - Grand Canyon of Bengal - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Blue Banana - ভূগোলিকা-Bhugolika