World’s Largest Island Greenland
পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : World’s Largest Island Greenland । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

আটলান্টিক ও উত্তর (আর্কটিক) মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড (Greenland) হল একটি সুবৃহৎ দ্বীপ। গ্রিনল্যান্ড হল পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ (World’s Largest Island)। ৫৯° উত্তর থেকে ৮৩° উত্তর অক্ষাংশ এবং ১১° পশ্চিম থেকে ৭৪° পশ্চিম দ্রাঘিমার মধ্যে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড উত্তরে উত্তর (আর্কটিক) মহাসাগর, উত্তর-পশ্চিমে নারেস প্রণালী ও লিঙ্কন সাগর, দক্ষিণ-পশ্চিমে ডেভিস প্রণালী, দক্ষিণ-পূর্বে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর, পশ্চিমে ব্যাফিন উপসাগর এবং পূর্বে গ্রিনল্যান্ড সাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত রয়েছে। ভৌগোলিক ভাবে গ্রিনল্যান্ড যদিও উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অংশ, কিন্তু রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে গ্রিনল্যান্ড ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্গত। প্রশাসনিক দিক থেকে গ্রিনল্যান্ড হল ডেনমার্কের অন্তর্গত একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর হল নুক (Nuuk)।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : আরাকু উপত্যকার বোরা গুহা
গ্রিনল্যান্ড উত্তর থেকে দক্ষিণে ২৬৭০ কিমি এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে ১০৫০ কিমি বিস্তৃত। গ্রিনল্যান্ডের মোট আয়তন (মূল দ্বীপ এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র দ্বীপ সহ) ২১,৬৬,০৮৬ বর্গকিমি। এর মধ্যে গ্রিনল্যান্ড আইস শিটের আয়তন ১৭,১০,১০০ বর্গকিমি, যা গ্রিনল্যান্ডের মোট আয়তনের ৮০% অধিকার করে। উল্লেখ্য, গ্রিনল্যান্ড আইস শিট বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আইস শিট (বৃহত্তম : আন্টার্কটিকা আইস শিট)। তবে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই আইস শিট ক্রমশ গলে যাচ্ছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্যমতে, গ্রিনল্যান্ড আইস শিট পুরোপুরি গলে গেলে, বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৭ মিটার বৃদ্ধি পাবে। গ্রিনল্যান্ডের সমগ্র উপকূলভূমি জুড়ে রয়েছে ফিয়র্ড, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৪,০০০ কিমি (২৭,০০০ মাইল)। উল্লেখ্য, উচ্চ অক্ষাংশীয় অঞ্চলে সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন পার্বত্যভূমিতে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট উপত্যকা বা হিমদ্রোণী সমুদ্রপৃষ্ঠ অপেক্ষা অনেক গভীর হলে, সেগুলি সমুদ্রজলে নিমজ্জিত হয়। এরূপ জলমগ্ন উপত্যকাগুলিকে ফিয়র্ড বলে।
আইসল্যান্ডের কাহিনী অনুসারে, এরিক দ্য রেড সর্বপ্রথম গ্রিনল্যান্ড নামটি ব্যবহার করেন। তিনিই প্রথম গ্রিনল্যান্ডে ইউরোপীয় বসতি স্থাপন করেছিলেন। তবে গ্রিনল্যান্ডিক ভাষাতে, গ্রিনল্যান্ডের নাম হল ‘Kalaallit Nunaat’, যার অর্থ হল কালালিতের ভূমি। কালালিত হল গ্রিনল্যান্ডের ইনুইট জনগোষ্ঠী। গ্রিনল্যান্ডের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল ওয়াটকিনস্ পর্বতশ্রেণীর গানবিয়র্ন ফিয়েল্ড (Gunnbjørn Fjeld), যার উচ্চতা ৩৬৯৪ মিটার। ভূমিরূপগত দিক থেকে, এটি একটি নুনাটক। উল্লেখ্য, মহাদেশীয় হিমবাহ আইস শিটের মধ্যে অবস্থিত বরফমুক্ত শৃঙ্গকে নুনাটক বলে। গ্রিনল্যান্ডে তুন্দ্রা ও মেরু জলবায়ু দেখা যায়। ড্যানিশ মেটিয়োরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকের বার্ষিক গড় সর্বোচ্চ উষ্ণতা ১.৩ ডিগ্রি C ; বার্ষিক গড় সর্বনিম্ন উষ্ণতা -৩.৭ ডিগ্রি C এবং বার্ষিক গড় অধঃক্ষেপণ ৭৮১.৬ মিমি। তবে গ্রীষ্মকালে গ্রিনল্যান্ডের কোথাও কোথাও (উপকূল অঞ্চলে) ২০-২৬ ডিগ্রি C উষ্ণতা দেখা যায়। আবার, গ্রিনল্যান্ডে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন উষ্ণতা হল -৬৯.৬ ডিগ্রি C, যা ১৯৯১ সালের ২২ শে ডিসেম্বর গ্রিনল্যান্ড আইস শিটের সর্বোচ্চ স্থানে রেকর্ড করা হয়েছিল।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির নামকরণের ইতিহাস
মেরু অঞ্চলের নিকটবর্তী গ্রিনল্যান্ডে স্বতন্ত্র জীববৈচিত্র্য দেখা যায়। উত্তর গ্রিনল্যান্ডে মূলত বামন উইলো, ক্রোবেরি এবং মসের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। দক্ষিণ গ্রিনল্যান্ডে মূলত বামন বার্চ, উইলো প্রভৃতি উদ্ভিদ দেখা যায়। দক্ষিণ গ্রিনল্যান্ডের কিনগুয়া উপত্যকায় গ্রিনল্যান্ডের একমাত্র প্রাকৃতিক অরণ্য (Only Natural Forest in Greenland) রয়েছে। গ্রিনল্যান্ডে ৫০০ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ, ফার্ন প্রভৃতি উদ্ভিদ পাওয়া যায়। এছাড়া ৯৫০ প্রজাতির লাইকেন ; ৬০০-৭০০ প্রজাতির ছত্রাক পাওয়া যায়। গ্রিনল্যান্ডের উল্লেখযোগ্য প্রাণী প্রজাতিগুলি হল : মেরু ভালুক, বলগা হরিণ, মেরু শিয়াল, মেরু খরগোশ, কস্তুরী বলদ (Musk Ox), মেরু নেকড়ে প্রভৃতি। এছাড়া উপকূল ও সামুদ্রিক অংশে বিভিন্ন প্রজাতির সিল, তিমি, চিংড়ি পাওয়া যায়। এছাড়া গ্রিনল্যান্ডের নিকটবর্তী জলভাগে ২৬৯ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, গ্রিনল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব গ্রিনল্যান্ড জাতীয় উদ্যান হল বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান (World’s Largest National Park), যার আয়তন ৯,৭২,০০০ বর্গকিমি।
গ্রিনল্যান্ডের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হল মৎস্য আহরণ, যা গ্রিনল্যান্ডের মোট রপ্তানির ৯০% অধিকার করে। এছাড়া গ্রিনল্যান্ডে চুনি, ইউরেনিয়াম, টাংস্টেন, নিকেল, তামা, টাইটানিয়াম প্রভৃতি খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। অতিরিক্ত শীতের কারণে গ্রিনল্যান্ডে কৃষিকাজ সেভাবে হয়না। গ্রিনহাউস পদ্ধতিতে শাকসবজি ও ফল চাষ করা হয়। গ্রিনল্যান্ডে যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল মাধ্যম আকাশপথ ও জলপথ। ২০২১ সালের হিসেব অনুসারে, গ্রিনল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা ৫৬,৪২১ জন। এর মধ্যে প্রায় ৯০%-ই ইনুইট জনগোষ্ঠী। এছাড়া স্বল্প সংখ্যায় ড্যানিশ ও নর্ডিক জনগোষ্ঠী রয়েছে। গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর নুকের জনসংখ্যা ১৯,৬০৪ জন (জানুয়ারি, ২০২৩)। গ্রিনল্যান্ডের প্রধান ধর্ম হল প্রোটেস্ট্যান্ট ক্রিস্টান। বর্তমানে গ্রিনল্যান্ডের একমাত্র সরকারি ভাষা হল গ্রিনল্যান্ডিক। ভূপ্রাকৃতিক অবস্থান, নিজস্ব সংস্কৃতির সমন্বয়ে গ্রিনল্যান্ড অনন্য (World’s Largest Island Greenland)।
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-II]
লেখিকাঃ- তামশ্রী হালদার (পশ্চিম জটা, মথুরাপুর, দক্ষিণ ২৪পরগনা)
তথ্যসূত্রঃ- Wikipedia ; BBC News ; Danish Meteorological Institute ; National Geographic ; Encyclopaedia Britannica
Pingback: Dooars of South - Jhaluarber - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Biological Diversity to Biodiversity - ভূগোলিকা-Bhugolika
Good…
Pingback: History of Mount Everest Conquest - ভূগোলিকা-Bhugolika