International Day of Yoga
আন্তর্জাতিক যোগ দিবস (International Day of Yoga)
আজ ২১ শে জুন (21 June), আন্তর্জাতিক যোগ দিবস (International Day of Yoga)। প্রতি বছর ২১ শে জুন তারিখটি আন্তর্জাতিক যোগ দিবস রূপে পালিত হয়। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপনের প্রস্তাব দেন। ২০১৪ সালের ১১ ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ ২১ শে জুন তারিখটি আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। ২০১৫ সালের ২১ শে জুন প্রথমবার আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালিত হয়। আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল : বিশ্বব্যাপী যোগ অনুশীলনের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের থিম হল : ‘Yoga for One Earth, One Health’।
যোগ (Yoga) হল প্রাচীন ভারতে উদ্ভূত এক বিশেষ ধরনের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন প্রথা। বৈদিক ষড়দর্শনের একটি হল যোগ। হিন্দু ধর্ম অনুসারে, মহাদেব বা শিবঠাকুর হলেন আদি যোগী। মহর্ষি পতঞ্জলি যোগসূত্র গ্রন্থ রচনা করেন, যা আধুনিক যোগ অনুশীলনের ভিত্তি হিসাবে বিবেচিত হয়। মহর্ষি পতঞ্জলি ‘যোগ শাস্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা‘ রূপে পরিচিত। মহর্ষি পতঞ্জলি প্রণীত যোগসূত্র গ্রন্থে উল্লিখিত অষ্টাঙ্গ যোগ হল — যম (বর্জন করা), নিয়ম (পালন), আসন (যোগের ভঙ্গি), প্রাণায়াম (শ্বাস নিয়ন্ত্রণ), প্রত্যাহার (ইন্দ্রিয় প্রত্যাহার), ধারণা (মনসংযোগ), ধ্যান (গভীর চিন্তন) ও সমাধি (স্থিরতা বা অভিনিবেশ)। সংস্কৃত শব্দ ‘যোগ‘ (Yoga) -এর অর্থ হল যুক্ত করা বা সমন্বয় সাধন করা। দেহযন্ত্রগুলির কর্মক্ষমতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করে স্নায়ুতন্ত্রের পূর্ণ পরিচর্যার মাধ্যমে মনোদৈহিক সম্পর্কসূত্রগুলিকে প্রকৃতিগতভাবেই একাত্ম করাকে যোগ বলে। কোনো ব্যক্তির মন ও শরীরকে শরীরচর্চার মাধ্যমে একসূত্রে গাঁথাই হল যোগ। নিহিত লক্ষ্য নিয়ে দেহ-মন ও আত্মশক্তিকে উৎকর্ষতায় উন্নীত করার এক কার্যকর মাধ্যম হল যোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) -এর মতে, যোগ অনুশীলন করলে দেহ ও মন, মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে এক ধরনের সংযোগ স্থাপিত হয়, যা মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা অর্জনে সাহায্য করে।
২০১৬ সালে ইউনেস্কো (UNESCO) যোগ-কে মানবতার অস্পর্শযোগ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য (Intangible Cultural Heritage of Humanity) -এর তালিকাভুক্ত করে। যোগের উপকারিতাগুলি হল — (১) নিয়মিত যোগ অনুশীলন সুগঠিত, নমনীয় শরীর বিকাশে সহায়তা করে এবং বর্ধিত নমনীয়তা শারীরিক আঘাতের ঝুঁকি হ্রাস করে। (২) নিয়মিত যোগ অনুশীলন মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দূর করতে সাহায্য করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সামগ্রিক উন্নতিসাধন করে। (৩) নিয়মিত যোগ অনুশীলন মানসিক স্বচ্ছতা, একাগ্রতা, সচেতনতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি করে। (৪) নিয়মিত যোগ অনুশীলন শ্বাস-প্রশ্বাসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, অক্সিজেন গ্রহণ উন্নীত করে। (৫) নিয়মিত যোগ অনুশীলন অনিদ্রার লক্ষণগুলি উপশম করতে সাহায্য করে এবং প্রাত্যহিক জীবনে ঘুমের মান উন্নত করে। (৬) নিয়মিত যোগ অনুশীলন রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে এবং শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে৷ (৭) নিয়মিত যোগ অনুশীলন খাদ্যাভ্যাসের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং স্বাস্থ্যকর বিপাককে উন্নীত করে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। (৮) নিয়মিত যোগ অনুশীলন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং অসুস্থতা ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাকে ব্যবস্থাকে উন্নত করে।
Pingback: National Statistics Day - ভূগোলিকা-Bhugolika