Desertification and Drought Day
মরুকরণ ও খরা দিবস (Desertification and Drought Day)
আজ ১৭ ই জুন (17 June), মরুকরণ ও খরা দিবস (Desertification and Drought Day)। প্রতি বছর ১৭ ই জুন তারিখটি মরুকরণ ও খরা দিবস রূপে পালিত হয়। উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের ১৭ ই জুন তারিখে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে মরুকরণ প্রতিরোধে ‘United Nations Convention to Combat Desertification‘ (UNCCD) বহুপাক্ষিক চুক্তি গৃহীত হয়। ১৯৯৪ সালের ১৯ শে ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৭ ই জুন তারিখটি বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস (World Day to Combat Desertification and Drought) হিসাবে ঘোষণা করে। ১৯৯৫ সালের ১৭ ই জুন প্রথমবার বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়। ২০১৯ সাল থেকে এই দিবসটি সংক্ষেপে মরুকরণ ও খরা দিবস (Desertification and Drought Day) রূপে পরিচিত হয়। মরুকরণ ও খরা দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল : বিশ্বব্যাপী, বিশেষত তীব্র খরা বা মরুকরণের সম্মুখীন অঞ্চলে মরুকরণ, খরা ও ভূমি অবনমন প্রতিরোধ প্রচেষ্টা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে মরুকরণ ও খরা দিবসের থিম হল : ‘Restore the Land. Unlock the Opportunities’।
উল্লেখ্য, যে অঞ্চলের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৫ সেমির কম, সেই প্রায় উদ্ভিদহীন, শুষ্ক ভূমিরূপযুক্ত অঞ্চলকে মরুভূমি (Desert) বা মরু অঞ্চল বলে। ধারাবাহিকভাবে মরুভূমির ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পাওয়াকে মরুকরণ (Desertification) বলে। ভূমির জৈবিক ক্ষমতার হ্রাস অথবা ধ্বংসের ফলে মরুভূমি সদৃশ যে অবস্থা বা পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তাকে মরুকরণ বলে। UNCCD -এর সংজ্ঞা অনুসারে, মরুকরণ হল জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কার্যকলাপ সহ বিভিন্ন কারণে শুষ্ক, অর্ধ-শুষ্ক ও শুষ্ক উপ-আর্দ্র অঞ্চলে ভূমির অবক্ষয়। মরুকরণের প্রধান কারণগুলি হল : জলবায়ু পরিবর্তন, দীর্ঘস্থায়ী খরা, বনভূমি ধ্বংস, অবৈজ্ঞানিক কৃষিকাজ, অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ ইত্যাদি। অন্যদিকে, কোনো অঞ্চলে এক মরসুম বা তার অধিক সময় ধরে অধঃক্ষেপণ হ্রাসের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে শুষ্কতর যে পর্যায়ে জল ঘাটতি দেখা যায়, তাকে খরা (Drought) বলে। খরার প্রধান কারণগুলি হল : জলবায়ু পরিবর্তন, অবৈজ্ঞানিক কৃষিকাজ, অতিরিক্ত জলসেচ, বনভূমি ধ্বংস, মৃত্তিকা ক্ষয় ইত্যাদি। USGS -এর তথ্যমতে, পৃথিবীর স্থলপৃষ্ঠের ৩৩% অঞ্চল মরুভূমির অন্তর্গত। ইউএন এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ (UNEMG) -এর গ্লোবাল ড্রাইল্যান্ডস্ রিপোর্ট অনুসারে, পৃথিবীর স্থলভাগের ৪০-৪১% অঞ্চল শুষ্কভূমি (Drylands) -এর অন্তর্গত।
পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে সর্বাধিক মরুকরণ দেখা যায়, সেগুলি হল — গোবি মরুভূমি (চিন ও মঙ্গোলিয়া), সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে সহেল অঞ্চল (আফ্রিকা) এবং দক্ষিণ আমেরিকার শুষ্ক, মরুপ্রায় অঞ্চল। উল্লেখ্য, গোবি মরুভূমি হল পৃথিবীর দ্রুততম সম্প্রসারিত মরুভূমি। গোবি মরুভূমির সম্প্রসারণের হার প্রতি বছর গড়ে ৩৬০০ বর্গকিমি। আফ্রিকার সহেল অঞ্চলে সাহারা মরুভূমির সম্প্রসারণের কারণে গত ৫০ বছরে ৬.৫০ লক্ষ বর্গকিমি উৎপাদনশীল কৃষিভূমিতে মরুকরণ ঘটেছে। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ২৫% অঞ্চল শুষ্কভূমি হিসাবে বিবেচিত হয় এবং এই মহাদেশের ৬৮% অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয় ঘটে চলেছে। মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধের প্রধান উপায়গুলি হল — বৈজ্ঞানিক কৃষিকাজ, খরা প্রতিরোধী ফসলের চাষ, পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ, বৃক্ষরোপণ ও সবুজ প্রাচীর (Green Wall) নির্মাণ, মৃত্তিকার আর্দ্রতা বজায় রাখা ইত্যাদি।
Pingback: World Refugee Day - ভূগোলিকা-Bhugolika