Tuesday, December 2, 2025

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভৌগোলিক প্রবন্ধ

Borra Caves of Araku Valley

আরাকু উপত্যকার বোরা গুহা

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Borra Caves of Araku Valley । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি আরাকু উপত্যকার বোরা গুহা সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

Borra Caves of Araku Valley
বামদিকে : বোরা গুহার প্রবেশপথ এবং ডানদিকে বোরা গুহার ভেতর কার্স্ট ভূমিরূপ

ভারতের বিখ্যাত কার্স্ট গুহাগুলির একটি হল বোরা গুহা (Borra Caves), যা অন্ধ্রপ্রদেশের আল্লুরি সীতারাম রাজু জেলাতে অবস্থিত। বোরা গুহা অন্ধ্রপ্রদেশের আরাকু উপত্যকার অনন্তগিরি পাহাড় (পাহাড় শ্রেণীগুলির উচ্চতা ৮০০-১৩০০ মিটার) -এ অবস্থিত। বোরা গুহা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং গুহাটির ভেতরে গভীরতম অংশের উচ্চতা ৬২৫ মিটার। অর্থাৎ বোরা গুহার গভীরতা ৮০ মিটার। বোরা গুহাতে স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট সহ বিভিন্ন প্রকার স্পেলিওথেম রয়েছে। তাই, বিশাখাপত্তনম থেকে সড়কপথে ৯০ কিমি উত্তরে অবস্থিত বোরা গুহা শুধু ভারতের নয়, বিদেশি পর্যটকদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। উল্লেখ্য, চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে ভূগর্ভে দ্রবণ ক্ষয়ের ফলে চুনাপাথরের স্তর ধ্বসে গিয়ে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়, তাকে কার্স্ট গুহা (Karst Cave) বলে। কার্স্ট অঞ্চলে চুনাপাথর গঠিত গুহাতে সৃষ্ট সকল প্রকার সঞ্চয়জাত ভূমিরূপকে একত্রে স্পেলিওথেম (Speleothem) বলে।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : পতঙ্গভুক উদ্ভিদ সূর্যশিশির

স্থানীয় তেলুগু ভাষায় এই গুহাটি ‘বোরা গুহালু’ (Borra Guhalu) নামে পরিচিত। তেলুগু ভাষাতে ‘বোরা’ মানে পেট এবং ‘গুহালু’ মানে গুহা। আবার ‘বোরা’ শব্দটি দেসিয়া ওড়িয়া (দক্ষিণ-পশ্চিম ওড়িয়া) শব্দ ‘বোরা’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘একটি গর্ত’। বোরা গুহা সম্পর্কে স্থানীয় এলাকায় অনেক লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে। সর্বাধিক জনপ্রিয় লোককাহিনী অনুসারে, একবার গোচারণ কালে একটি গরু গুহার ওপর থেকে গর্ত দিয়ে নিচে পড়ে যায়। রাখাল তার হারিয়ে যাওয়া গরুর সন্ধান করতে গিয়ে এই গুহার মধ্যে আসে। রাখাল গুহার ভিতরে একটি পাথর দেখে, যার আকৃতি ছিল শিবলিঙ্গের মতো। রাখাল বিশ্বাস করে যে, স্বয়ং শিবঠাকুর তার গরুকে রক্ষা করেছেন। এই ঘটনার পর গ্রামবাসীরা গুহার বাইরে একটি ছোট মন্দির তৈরি করে। এই গুহা সম্পর্কে আরেকটি লোককথা হল, বোরা গুহার গভীরে শিবলিঙ্গের আকৃতিসদৃশ একটি পাথর রয়েছে, যার ওপরে গাভী-সদৃশ একটি পাথর রয়েছে। প্রচলিত ধারণা অনুসারে, ওই গাভীর স্তন থেকেই গোস্তনী নদী (Gosthani River)-এর উৎপত্তি হয়েছে, যা বিশাখাপত্তনম শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।

১৮০৭ সালে ব্রিটিশ ভূতত্ত্ববিদ উইলিয়াম কিং বোরা গুহা আবিষ্কার করেছিলেন। ধারণা করা হয়, বোরা গুহা আনুমানিক ১৫ কোটি (১৫০ মিলিয়ন) বছর পূর্বে সৃষ্টি হয়েছিল। এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র জলধারার জলে উপস্থিত হিউমিক অ্যাসিডের সাথে চুনাপাথরস্থিত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট বিক্রিয়া করে ও দ্রবীভূত হয়ে স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট সমৃদ্ধ কার্স্ট ভূমিরূপ গড়ে তুলেছে। বোরা গুহা লম্বায় প্রায় ২০০ মিটার ও গুহাপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১২ মিটার। বোরাগুহা অ্যাফোটিক প্রকৃতির, অর্থাৎ এই গুহাতে খুবই সীমিত আলো বা আলোহীন পরিবেশ দেখা যায়। বোরা গুহাতে সৃষ্ট স্ট্যালাকটাইটগুলির দৈর্ঘ্য ০.১ থেকে ৩.৫ মিটার ; স্ট্যালাগমাইটগুলির দৈর্ঘ্য ১.২ মিটার এবং স্তম্ভগুলির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ মিটার ও প্রস্থ ০.৭৫ মিটার। বোরা গুহাস্থিত স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইটের কয়েকটি বিখ্যাত, চিত্তাকর্ষক আকৃতি-রূপ হল : শিব-পার্বতী, ঋষির দাড়ি, মা-শিশু, কুমীর, মানুষের মস্তিষ্ক, বাঘ, গো-স্তন প্রভৃতি।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : লিঙ্গ বৈষম্য এবং নারীর অধিকার

বোরা গুহাতে প্রাপ্ত প্রাণী প্রজাতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : সোনালি গেকো (বৈজ্ঞানিক নাম Gekko badenii) নামক একপ্রকার সরীসৃপ ; একপ্রকার ফল-বাদুড় (বৈজ্ঞানিক নাম Rousettus leschenaultii) ; একপ্রকার স্টাইগোফনা (বৈজ্ঞানিক নাম Habrobathynella borraensis), বিভিন্ন প্রকার অণুজীব প্রভৃতি। উল্লেখ্য, ভৌমজল-ব্যবস্থায় গুহাতে বসবাসকারী প্রাণীদের স্টাইগোফনা বলে। শুধু তাই নয়, বোরা গুহায় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও (প্রাচীন প্রস্তর যুগের) পাওয়া গেছে। অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিকদের দ্বারা বোরা গুহাতে উৎখনন করে ৩০-৫০ হাজার বছরের পুরানো পাথরের হাতিয়ার (মধ্য প্রাচীন প্রস্তর সংস্কৃতি) আবিষ্কৃত হয়েছে, যা বোরা গুহাতে মানুষের বসতি নিশ্চিত করেছে।

বোরা গুহা ভ্রমণের আদর্শ সময় হল প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস। বিশাখাপত্তনম থেকে সড়কপথে বা রেলপথে বোরা গুহা যাওয়া যায়। অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য পর্যটন বিভাগ কর্তৃক বোরা গুহাতে ২৬টি পারদ, সোডিয়াম বাষ্প এবং হ্যালোজেন বৈদ্যুতিক বাতি লাগানো রয়েছে। এই আলোকসজ্জা পর্যটকদের বোরা গুহাস্থিত চমৎকার কার্স্ট ভূমিরূপগুলি আকর্ষণীয় ভাবে প্রদর্শন করে। প্রতি বছর মহাশিবরাত্রিতে স্থানীয় উপজাতি জনগোষ্ঠীর হাজারো মানুষ এই গুহা দর্শন করেন। প্রচলিত লোককথা, ধর্মীয় মাহাত্ম্য, কার্স্ট ভূমিরূপ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য — সবমিলিয়ে বোরা গুহা একটি জনপ্রিয় পর্যটনস্থল, যা যেকোনো পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। (Borra Caves of Araku Valley)

উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-II]

লেখিকাঃ- রিত্তিকা দত্ত (বেহালা, পর্ণশ্রী, কলকাতা)
তথ্যসূত্রঃ- Borra Caves Info Board – Andhra Pradesh Tourism ; Wikipedia ; The Hindu ; The Times of India ; Borra Caves – Incredible India

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : মুর্শিদাবাদের পদ্মা নদীর ইলিশ

7 thoughts on “Borra Caves of Araku Valley

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!