Insectivorous Plant Sundews
পতঙ্গভুক উদ্ভিদ সূর্যশিশির
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Insectivorous Plant Sundews । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি পতঙ্গভুক উদ্ভিদ সূর্যশিশির সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

প্রকৃতির রাজ্যে উদ্ভিদ বৈচিত্র্যময়। ‘পতঙ্গভুক উদ্ভিদ’ (Insectivorous Plant) তারই এক উদাহরণ। যে সব উদ্ভিদ নাইট্রোজেন ঘটিত প্রোটিন খাদ্যের জন্য পতঙ্গ ধরে পতঙ্গের দেহ থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে, তাদের পতঙ্গভুক উদ্ভিদ বলে। পরভোজী উদ্ভিদের অন্তর্গত এই পতঙ্গভুক উদ্ভিদ আবার ‘মাংসাশী উদ্ভিদ’ (Carnivorous Plant) নামেও পরিচিত। সূর্যশিশির (Sundews) পতঙ্গভুক উদ্ভিদের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সূর্যশিশির ইংরেজিতে ‘Sundews’ ও ‘Drosera’ নামে পরিচিত। Sundews নামটি লাতিন শব্দ ‘রস সলিস’ (Ros Solis) থেকে এসেছে, যার অর্থ হল সূর্যের শিশির। আর, ড্রসেরা (Drosera) নামটি গ্রিক শব্দ ‘ড্রসস’ (Drosos) থেকে এসেছে, যার অর্থ হল শিশির বিন্দু। সূর্যশিশির একপ্রকার ভেষজ উদ্ভিদ।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে ভারতের ইতিহাস
আন্টার্কটিকা ব্যতীত সকল মহাদেশেই প্রাপ্ত সূর্যশিশির হল একপ্রকার দ্বিবীজপত্রী, গুপ্তবীজী উদ্ভিদ। এটি সাধারণত বহুবর্ষজীবী হলেও, কিছু বর্ষজীবী প্রজাতিও রয়েছে। সূর্যশিশির ক্যারিওফিলালেস বর্গ (Order) -এর ড্রসেরাসিয়ে পরিবার (Family) -এর ড্রসেরা গণের অন্তর্গত, যা মাংসাশী উদ্ভিদের অন্যতম বৃহৎ গণ (Genus), যার প্রায় ২০০ টি প্রজাতি রয়েছে। এই উদ্ভিদটি ক্রান্তীয়, উপক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ — বিভিন্ন জলবায়ুতে বিভিন্ন প্রজাতিতে দেখা যায়। সূর্যশিশির নানারকম পরিবেশে (ঋতুভিত্তিক আর্দ্র, স্যাঁতস্যাঁতে ও আর্দ্র, শুষ্ক ও মরুপ্রায়, নিবিড় ছায়াযুক্ত) দেখা যায়। তবে অপেক্ষাকৃত কর্দমাক্ত জায়গায় বেশি জন্মায় সূর্যশিশির। এটি প্রধানত অম্লত্ব বৃদ্ধি প্রাপ্ত, নাইট্রোজেনের অভাবযুক্ত মৃত্তিকাতে জন্মায়। ভারতে প্রাপ্ত ড্রসেরার প্রধান প্রজাতিগুলি হল — ড্রসেরা ইন্ডিকা (D. indica), ড্রসেরা পেলটাটা (D. peltata), ড্রসেরা বার্মনী (D. burmannii)। ড্রসেরা বার্মনী প্রধানত মেঘালয়ের খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ি অঞ্চল, আসামের পাহাড়ি অঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলা, ওড়িশাতে দেখা যায়। ড্রসেরা ইন্ডিকা ও ড্রসেরা পেলটাটা প্রধানত মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কেরালা ও কর্ণাটকে দেখা যায়।
সূর্যশিশির একটি গোলাকার থালাসদৃশ উদ্ভিদ। প্রজাতি ভেদে সূর্যশিশিরের আকার অনেকরকম হয়। ভারতে প্রাপ্ত সূর্যশিশির সাধারণত ৪-৮ সেমি ব্যাসবিশিষ্ট হয়। গ্রীষ্মকালে উদ্ভিদটির মধ্য থেকে একটি ৪-৬ থেকে ১৫-২৫ সেমি লম্বা সাদা বা লালচে-বেগুনি রঙের পুষ্পমঞ্জরী হয়। দেহের মধ্যভাগ অনেকটা চামচের মতো ঢালু। পাতাগুলি ছোটো আর গোলাকার হয় এবং কয়েকটি স্তরে প্রায় ১০-১৫ টির মতো পাতা থাকে। পাতাগুলিতে বিভিন্ন উচ্চতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য বোঁটা বা শুঁয়ো (Tentacles) দিয়ে ঢাকা থাকে। প্রত্যেকটি বোঁটা বা শুঁয়োর ওপর থাকে অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রন্থি বা অঙ্গ, যা এক ধরনের স্বচ্ছ আঠালো সান্দ্র পদার্থ (মিউসিলেজ নামক এক প্রকার এনজাইম) উৎপন্ন করে। এই সান্দ্র পদার্থটি বোঁটাগুলির ওপর শিশিরবিন্দুর মতো জমা হয়। ওই পদার্থ নিঃসরণকারী গ্রন্থটি দেখতে লাল বলে এর ওপরের সান্দ্র পদার্থটিও লালচে বলে মনে হয়। শুধু তাই নয়, সূর্যশিশির বাতাসেও একধরনের সুগন্ধ ছড়ায়। পতঙ্গরা উজ্জ্বল লাল রঙ, চকচকে শিশিরবিন্দু আর সুগন্ধে আকৃষ্ট হয়ে এই উদ্ভিদের কাছে চলে আসে। আর পাতার ওপর নামামাত্রই কীটপতঙ্গের পাগুলি পাতার উঁচু বোঁটায় থাকা সান্দ্র পদার্থে আঠার মতো আটকে যায়।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : প্রসঙ্গ – বাস্তুতান্ত্রিক পদচিহ্ন
আটকে পড়া পতঙ্গ পা ছাড়িয়ে নিতে যতই টানাটানি করে, ততই পাতার গ্রন্থিগুলি থেকে আরো বেশি করে আঠালো রস বের হতে থাকে। পতঙ্গরা এভাবে আরো শক্তভাবে পাতায় আটকে যায়। আটকে পড়া পতঙ্গের চারপাশে থাকা বোঁটা বা শুঁয়োগুলি বেঁকে গিয়ে আরো বেশি পরিমাণে রস বের করতে থাকে। পুরো পাতাটি কুঁচকে গিয়ে পতঙ্গের চারপাশে একটি পেয়ালার মতো আকার সৃষ্টি করে। পতঙ্গের দেহের নরম অংশগুলি গলে পাতায় মিশে না যাওয়া পর্যন্ত এই উদ্ভিদের পরিপাকে সাহায্যকারী এনজাইম কাজ করে। চার-পাঁচ দিন পরে সূর্যশিশিরের পাতা ও বোঁটাগুলি আবার আগের মতো সোজা হয়ে যায়। সূর্যশিশির উদ্ভিদের পাতার শুঁয়োগুলি প্রোটিনের সংস্পর্শে আসা মাত্র পতঙ্গের দিকে বেঁকে যায় এবং পতঙ্গকে আবদ্ধ করে। এটি একপ্রকার কেমোন্যাস্টিক চলন (Chemonastic Movement)। উল্লেখ্য, কোনো রাসায়নিক পদার্থের তীব্রতায় সংঘটিত ন্যাস্টিক চলনকে কেমোন্যাস্টিক চলন বলে।
সূর্যশিশিরের অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। অ্যাস্থমা, ফুসফুসে সংক্রমণ, কাশি, পাকস্থলীতে আলসার, ব্রঙ্কাইটিস প্রভৃতি রোগের ওষুধ তৈরিতে সূর্যশিশির ব্যবহৃত হয়। আবার, বাগান সাজানোর জন্যও এই উদ্ভিদটি জনপ্রিয়। তবে বর্তমানে পতঙ্গভুক এই উদ্ভিদটি নিয়ে চিন্তায় গবেষক মহল। সূর্ষশিশির বা ড্রসেরা বর্তমানে স্বাভাবিক পরিবেশে বিপন্ন। উপযুক্ত পরিবেশের অভাব, বনাঞ্চল সাফ করে নগরায়নের দৌড়, পোকামাকড়ের সংখ্যা হ্রাস – এসবের কারণেই তাদের অস্তিত্ব বিপদের মুখে। বিলুপ্তি থেকে সূর্যশিশিরকে বাঁচাতে নতুন করে গবেষণা শুরু করেছেন বন্যপ্রাণ সংরক্ষক ও গবেষকবৃন্দ। (Insectivorous Plant Sundews)
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-II]
লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- সংবাদ প্রতিদিন ; বাংলাদেশ জার্নাল ; Wikipedia ; নয়া দিগন্ত ; জীববিজ্ঞান প্রবেশ – ডঃ হরিদাস গুপ্ত – ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কোং প্রাইভেট লিঃ ; India Biodiversity Portal
Pingback: Gender Inequality & Women's Rights - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Borra Caves of Araku Valley - ভূগোলিকা-Bhugolika
Good Article
চমৎকার
Pingback: Padma River's Hilsa of Murshidabad - ভূগোলিকা-Bhugolika