Kurkure Chhatu of Jangalmahal
জঙ্গলমহলের কুড়কুড়ে ছাতু
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Kurkure Chhatu of Jangalmahal । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি জঙ্গলমহলের কুড়কুড়ে ছাতু সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

কুড়কুড়ে ছাতু (Kurkure Chhatu) হল অ্যাস্ট্রিয়াস গণের একপ্রকার বন্য ছত্রাক প্রজাতি এবং জঙ্গলমহলের এক অর্থকরী বনজ সম্পদ। কুড়কুড়ে ছাতুর ইংরেজি নাম হাইগ্রোস্কোপিক আর্থস্টার (Hygroscopic Earthstar) / ব্যারোমিটার আর্থস্টার (Barometer Earthstar) / ফলস্ আর্থস্টার (False Earthstar)। এই ছত্রাক প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাস্ট্রিয়াস হাইগ্রোমেট্রিকাস (Astraeus hygrometricus)। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা সমৃদ্ধ শাল অরণ্যে এই ছত্রাক পাওয়া যায়। খাবার সময় একটি বিশেষ শব্দ হয় বলেই জঙ্গলমহলে এই ছত্রাকের আঞ্চলিক নাম কুড়কুড়ে ছাতু। এছাড়া আকারে ছোটো হওয়ার কারণে এই ছত্রাক ‘পুটকা ছাতু’ নামেও পরিচিত।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : বীরভূমের মামা-ভাগ্নে পাহাড়
সাধারণত বর্ষাকালে, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে জঙ্গলমহলের শাল অরণ্যে এই ছত্রাক পাওয়া যায়। দুই-তিন দিন ভালোরকম বৃষ্টি, তারপর এক-দুই দিন রোদ ঝলমলে আবহাওয়া — অর্থাৎ ভিজে মাটির ওপর চড়া রোদ এই ছত্রাক জন্মানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। শাল অরণ্যের পাতা পচা ভেজা মাটির অল্প নিচে ঝাঁকে-ঝাঁকে এই ছত্রাক পাওয়া যায়। বর্ষাকালে জঙ্গলের ফুলে-ফেঁপে ওঠা মাটি দেখে জঙ্গলমহলের যে কোনো অভিজ্ঞ মানুষই কুড়কুড়ে ছাতুর উপস্থিতি চিনতে পারেন। সরু লাঠি বা আঙুল দিয়ে মাটি হালকা খুঁচিয়ে কুড়কুড়ে ছাতু সংগ্রহ করা হয়। এই ছত্রাক দেখতে সাদা/ঘিয়ে/কালচে রঙের এবং গোল মার্বেল বা চ্যাপ্টা আকৃতির হয়ে থাকে। মাটি লেগে থাকার কারণে কুড়কুড়ে ছাতু সংগ্রহের পর জলে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। কাইটিন দ্বারা তৈরি এই ছত্রাকের বহিরাবরণ ঈষৎ শক্ত হয় এবং ভেতরে সাদা নরম অংশ (গ্লেবা) থাকে। তবে, পরিণত অবস্থায় এই ছত্রাকের ভেতরের অংশ কালো হয়ে যায়।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : দ্বৈত নাগরিকত্বের লংওয়া গ্রাম
সমগ্র জঙ্গলমহলে কুড়কুড়ে ছাতু সুস্বাদু খাবার রূপে বিবেচিত হয়। জঙ্গলমহলের নিজস্ব খাদ্য সংস্কৃতিতে কুড়কুড়ে ছাতুর বিশেষ স্থান রয়েছে। এই ছত্রাকের খাদ্য ও পুষ্টিগুণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এতে কম ফ্যাট এবং পর্যাপ্ত ফাইবার ও প্রোটিন রয়েছে। কুড়কুড়ে ছাতু লিভার, হৃদপিন্ডের সুরক্ষায়, প্রদাহের উপশমে, রোগ প্রতিরোধে এবং লিসম্যানিয়াসিস মোকাবিলায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ২০১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক কৃষ্ণেন্দু আচার্য জানান, এই ছত্রাকের রাসায়নিক চরিত্র বিশ্লেষণ করে দুটি নতুন যৌগের (অ্যাস্ট্রাকুরকুরোন এবং অ্যাস্ট্রাকুরকুরোল) সন্ধান মিলেছে। লিভার ও ফুসফুসের ক্যান্সার কোষের মোকাবিলায় এই যৌগ দুটি উল্লেখযোগ্য ভালো কাজ করছে। চাহিদা ও জোগান ভেদে, কুড়কুড়ে ছাতুর দাম প্রতি কেজি ১০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করে। তাই, বর্ষাকালে কুড়কুড়ে ছাতু জঙ্গলমহলের অরণ্য-কেন্দ্রিক গ্রামগুলির বাসিন্দাদের জন্য এক বিকল্প আয়ের উৎস হয়ে ওঠে।
এহেন বনজ সম্পদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হল, কুড়কুড়ে ছাতু সংগ্রহের এক-দুই দিনের মধ্যে বিক্রি করতে না পারলে, তা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময়, ছাতু কুড়ানি (সংগ্রহকারী)-দের তুলনায় ছাতু ব্যবসায়ীরা কুড়কুড়ে ছাতু বিক্রি করে অধিক লাভ করেন। কিন্তু বর্তমানে জঙ্গলমহল জুড়েই কুড়কুড়ে ছাতুর উৎপাদন কমে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও উপযুক্ত আবহাওয়ার অভাব, গ্রীষ্মকালে শাল অরণ্যে আগুন লাগিয়ে দেওয়া প্রভৃতি কারণে জঙ্গলমহলে কুড়কুড়ে ছাতুর উৎপাদন অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। সঠিকভাবে বন সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে, ভবিষ্যতে জঙ্গলমহলের এই সম্পদ হয়তো বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাবে। (Kurkure Chhatu of Jangalmahal)
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]
লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- সংবাদ প্রতিদিন ; আনন্দবাজার পত্রিকা ; Wikipedia ; ScienceDirect ; এই সময়
খুব সুন্দর
ধন্যবাদ ❤️
তথ্যসমৃদ্ধ লেখা🤍
ধন্যবাদ ❤️
Pingback: Longwa Village of Dual Citizenship//দ্বৈত নাগরিকত্বের লংওয়া গ্রাম - ভূগোলিকা-Bhugolika
Very Nice!
ধন্যবাদ ❤️
Very informative article… ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ ❤️
Pingback: Chengmari Tea Garden//চ্যাংমারি চা বাগান - ভূগোলিকা-Bhugolika
Nice
Pingback: Mangoes of Malda - ভূগোলিকা-Bhugolika
Good
Nice One
ধন্যবাদ ❤️
Pingback: Gangani - Grand Canyon of Bengal - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Natural Raincoat - Ghong - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Blue Banana - ভূগোলিকা-Bhugolika