World Frog Day
বিশ্ব ব্যাঙ দিবস (World Frog Day)
আজ ২০ শে মার্চ (20 March), বিশ্ব ব্যাঙ দিবস (World Frog Day)। প্রতি বছর ২০ শে মার্চ তারিখটি বিশ্ব ব্যাঙ দিবস রূপে পালিত হয়। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে সংরক্ষণ সংস্থা ‘সেভ দ্য ফ্রগস্!‘ (SAVE THE FROGS!) -এর প্রতিষ্ঠাতা ড. কেরি ক্রিগার (Dr. Kerry Kriger) -এর উদ্যোগে ২৮ শে এপ্রিল তারিখটি ‘সেভ দ্য ফ্রগস্ ডে‘ (Save the Frogs Day) হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০০৯ সালের ২৮ শে জুন প্রথমবার ‘সেভ দ্য ফ্রগস্ ডে’ পালিত হয়। ‘সেভ দ্য ফ্রগস্ ডে’ প্রাথমিক সাফল্য অর্জন করলে, ২০১৪ সালে প্রথমবার বিশ্ব ব্যাঙ দিবস পালিত হয়। বিশ্ব ব্যাঙ দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল : প্রজাতি হিসাবে ব্যাঙের বিপন্নতা ও বৈশ্বিক বাস্তুতন্ত্রে ব্যাঙের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাঙ সংরক্ষণকে উৎসাহিত করা।
ব্যাঙ হল অ্যানুরা (Anura) বর্গের এক বৈচিত্র্যময় উভচর (Amphibian) প্রাণী। আন্টার্কটিকা মহাদেশ ব্যতীত পৃথিবীর সকল মহাদেশে ব্যাঙ পাওয়া যায়। বর্তমানে পৃথিবীর মোট উভচর প্রজাতির ৮৮% হল ব্যাঙ। অ্যাম্ফিবিয়াওয়েব (AmphibiaWeb) -এর তথ্য অনুসারে, বর্তমানে (১ লা মার্চ, ২০২৫) পৃথিবীতে ৭৮১৫ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। উল্লেখ্য, যেসব ব্যাঙ বুফোনিডি (Bufonidae) পরিবারের সদস্য ও প্রধানত শুষ্ক অঞ্চলে দেখা যায়, তাদের কুনোব্যাঙ (Toad) বলে। অন্যদিকে, যেসব ব্যাঙ বুফোনিডি (Bufonidae) পরিবারের সদস্য নয় ও প্রধানত আর্দ্র অঞ্চলে দেখা যায়, তাদের সোনাব্যাঙ (Frog) বলে। বর্তমানে, পৃথিবীর বৃহত্তম ব্যাঙ প্রজাতি (Largest Frog Species) হল গোলিয়াথ ব্যাঙ (Goliath Frog ; বৈজ্ঞানিক নাম Conraua goliath), যার দৈর্ঘ্য ৩৫ সেমি এবং ওজন ৩.৩ কেজি পর্যন্ত হয়। পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ব্যাঙ প্রজাতি (Smallest Frog Species) হল ব্রাজিলীয় মাছি ব্যাঙ (Brazilian Flea Toad ; বৈজ্ঞানিক নাম Brachycephalus pulex), যার গড় দৈর্ঘ্য ৭.১০ মিমি।
IUCN -এর তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বের ৪২% ব্যাঙ প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। আবাসস্থল ধ্বংস, জল দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী এক শতাব্দীতে (১০০ বছরে) ৫০% ব্যাঙ প্রজাতির বিলুপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বাস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণে, ব্যাঙ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। ব্যাঙের গুরুত্বগুলি হল — (১) ব্যাঙ প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খলে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ব্যাঙ বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও অন্যান্য ছোটখাটো প্রাণী খায়। অন্যদিকে, সাপ, পাখি ও কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী ব্যাঙকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এইরূপে ব্যাঙ প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খলে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। (২) ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া সহ বিভিন্ন মশাবাহিত রোগের বাহক মশার লার্ভা হল ব্যাঙাচি অর্থাৎ শিশু ব্যাঙের খাদ্য। মশা ও মশাবাহিত রোগ দমনে ব্যাঙের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। (৩) কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাঙের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ব্যাঙ নিজের দেহের ওজনের দ্বিগুণ পরিমাণ পোকামাকড় খেতে পারে। এইসব পোকামাকড় ফসলের ক্ষতি করে। ফলে ব্যাঙ থাকলে যেমন অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না, তেমনই ফসল ও মৃত্তিকার গুণগত মান ঠিক থাকে। এছাড়া, ব্যাঙের মূত্রে ইউরিয়া জাতীয় পদার্থ থাকে, যা জমির উর্বরতা ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করে। তাই, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ও মানবজাতির স্বার্থেই ব্যাঙ সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ।
