World Seagrass Day
বিশ্ব সামুদ্রিক ঘাস দিবস (World Seagrass Day)
আজ ১ লা মার্চ (1 March), বিশ্ব সামুদ্রিক ঘাস দিবস (World Seagrass Day)। প্রতি বছর ১ লা মার্চ তারিখটি বিশ্ব সামুদ্রিক ঘাস দিবস রূপে পালিত হয়। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৩ শে মে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ ১ লা মার্চ তারিখটিকে বিশ্ব সামুদ্রিক ঘাস দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। ২০২৩ সালে প্রথমবার বিশ্ব সামুদ্রিক ঘাস দিবস পালিত হয়। বিশ্ব সামুদ্রিক ঘাস দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল : স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হিসাবে সামুদ্রিক ঘাস সংরক্ষণ করা এবং বাস্তুতান্ত্রিক পরিষেবাতে সামুদ্রিক ঘাসের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। উল্লেখ্য, সামুদ্রিক পরিবেশের একমাত্র সপুষ্পক উদ্ভিদ হল সামুদ্রিক ঘাস (Seagrasses), যার ৭২ টি প্রজাতি রয়েছে। সামুদ্রিক ঘাসের প্রধানত ৪ টি পরিবার (Posidoniaceae, Zosteraceae, Hydrocharitaceae, Cymodoceaceae) রয়েছে। এবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে বিশ্ব সামুদ্রিক ঘাস দিবসের থিম হল : ‘Grooming Youth – Blooming Seagrass’।
বিশ্বের ৬ টি মহাদেশের ১৫৯ টি দেশের ৩০ লক্ষ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে সামুদ্রিক ঘাসের তৃণভূমি রয়েছে। স্থিতিশীল উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকা সত্ত্বেও, সামুদ্রিক ঘাস বিপদের মধ্যে রয়েছে এবং সামুদ্রিক ঘাসের মোট তৃণভূমির মাত্র এক-চতুর্থাংশ সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকার মধ্যে রয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, ১৯৩০ -এর দশক থেকে বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক ঘাস হ্রাস পাচ্ছে। সাম্প্রতিকতম গণনা অনুসারে, প্রতি বছর সামুদ্রিক ঘাসের ৭% এলাকা বিলুপ্ত হচ্ছে। IUCN -এর তালিকা অনুসারে, সামুদ্রিক ঘাসের ২১% প্রজাতি প্রায়-বিপদগ্রস্ত (Near Threatened), সংকটাপন্ন (Vulnerable) ও বিপন্ন (Endangered) হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। সামুদ্রিক ঘাসের মোট ৭২ টি প্রজাতির মধ্যে ২২ টি প্রজাতির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। World Seagrass Association (WSA) প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর গড়ে ১১০ বর্গকিমি সামুদ্রিক ঘাস এলাকা বিলুপ্ত হচ্ছে।
সামুদ্রিক ঘাস গুরুত্বপূর্ণ, কারণ — (১) খাদ্য নিরাপত্তা : সামুদ্রিক ঘাস বাণিজ্যিক ও জীবিকাসত্তাভিত্তিক মৎস্যচাষ এবং তাদের উপর নির্ভরশীল সম্প্রদায় ও অর্থনীতির জন্য সহায়ক। বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৪০% উপকূলের ১০০ কিমির মধ্যে বসবাস করে। খাদ্য নিরাপত্তা এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য মৎস্যসম্পদ অতি গুরুত্বপূর্ণ। (২) জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন : সামুদ্রিক ঘাস বিশ্বের মহাসাগরের ০.২% এরও কম এলাকা অধিকার করে কিন্তু, মহাসাগরে বার্ষিক মোট কার্বন সঞ্চয়ের ১৮% সামুদ্রিক ঘাস এলাকাতে সঞ্চিত হয়। সামুদ্রিক ঘাস তৃণভূমির পলিতে প্রতি বর্গকিমিতে ৮৩ হাজার মেট্রিক টন কার্বন সঞ্চিত হয় ; যা নাতিশীতোষ্ণ এবং স্থলজ বনভূমিতে সঞ্চিত কার্বনের দ্বিগুণ। ফলে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে সামুদ্রিক ঘাস একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। (৩) স্বাস্থ্যকর মহাসাগর : সামুদ্রিক ঘাস সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াতে অক্সিজেন উৎপাদন করে, যা সমুদ্রজলে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক রোগজীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি হ্রাস করে। এছাড়া সামুদ্রিক ঘাসের তৃণভূমিগুলি দ্রবীভূত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণের মাধ্যমে সমুদ্রজলের রসায়নকেও নিয়ন্ত্রণ করে এবং সমুদ্রজলের pH নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। (৪) জীববৈচিত্র্য : সামুদ্রিক ঘাস এলাকা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ। নিকটবর্তী বালিময় সামুদ্রিক এলাকার চেয়ে সামুদ্রিক ঘাস এলাকাতে ৭-২০ গুণ বেশি ক্রাস্টেসিয়ান প্রাণী (যেমন : চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি) এবং মাছ পাওয়া যায়। এছাড়া সামুদ্রিক ঘাস ডুগং (Dugong), ম্যানাটী (Manatee), সামুদ্রিক কচ্ছপ (Sea Turtle) প্রভৃতি প্রাণীর খাদ্য ভান্ডার হিসাবে পরিচিত।
Pingback: World Wildlife Day - ভূগোলিকা-Bhugolika