Sunday, June 8, 2025

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভূগোলিকা-Bhugolika

ভূগোল শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান

ভৌগোলিক প্রবন্ধ

Continent Connector Bosphorus Bridge

মহাদেশ সংযোগকারী বসফরাস সেতু

ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Continent Connector Bosphorus Bridge । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশ সংযোগকারী তুরস্কের বসফরাস সেতু সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

Continent Connector Bosphorus Bridge
বসফরাস সেতু, তুরস্ক

মানবসভ্যতার নির্মাণকৌশলের উন্নতি এবং পারস্পরিক সুদৃঢ় যোগাযোগের প্রতীক হল সেতু (Bridge)। ছোটোবড়ো নদনদী, সংকীর্ণ প্রণালী বা উপকূলের সামুদ্রিক অংশের ওপর গড়ে ওঠা যেকোনো সেতুই দুই স্থানের/অঞ্চলের মেলবন্ধন ঘটিয়ে থাকে। কখনও কখনও একটি সেতু দুই দেশকে যুক্ত করে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অগণিত ছোটোবড়ো সেতু গড়ে উঠেছে। একটি সেতু নির্মাণের পিছনে মূল কারণটি হল প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে দূর করে দুই স্থান/অঞ্চলের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে বিবিধ আদানপ্রদানের মাধ্যমে সামগ্রিক অগ্রগতির পথ তৈরি করা। বসফরাস সেতু (Bosphorus Bridge) হল এমনই এক সেতু, যা শুধুমাত্র দুই স্থান বা অঞ্চল নয়, দুই মহাদেশ (এশিয়া ও ইউরোপ) -কে যুক্ত করেছে

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : কলকাতার দুর্গাপূজা – ইউনেস্কোর স্বীকৃতি

বসফরাস প্রণালী (Bosphorus Strait) হল উত্তর-পশ্চিম তুরস্কে অবস্থিত এক সামুদ্রিক প্রণালী, যা উত্তরে কৃষ্ণসাগরের সাথে দক্ষিণে মারমারা সাগরকে যুক্ত করেছে। বসফরাসের দক্ষিণে দার্দানেলিস প্রণালী আবার মারমারা সাগরের সাথে অ্যাজিয়ান সাগর (ভূমধ্যসাগরের অংশ) -কে যুক্ত করেছে। মধ্যযুগ থেকেই বসফরাস প্রণালী অতি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নৌপথ রূপে পরিচিত। বসফরাস শব্দটি গ্রিক শব্দ বসপরস (Bosporos) থেকে এসেছে, যার অর্থ হল গবাদি পশুর প্রণালী (Cattle Strait), যা গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীর সাথে সম্পর্কিত। বসফরাস প্রণালীর দৈর্ঘ্য ৩১ কিমি, সর্বোচ্চ প্রস্থ ৩৪২০ মিটার, সর্বনিম্ন প্রস্থ ৭০০ মিটার, সর্বোচ্চ গভীরতা ১১০ মিটার, সর্বনিম্ন গভীরতা ১৩ মিটার এবং গড় গভীরতা ৬৫ মিটার। এই প্রণালী ‘ইস্তানবুল প্রণালী’ নামেও পরিচিত। বসফরাস প্রণালী এশিয়া ও ইউরোপের মহাদেশীয় সীমারেখার একটি অংশ। বসফরাস প্রণালীর পূর্বদিক এশিয়ার এবং পশ্চিমদিক ইউরোপের অন্তর্গত। তাই বসফরাস প্রণালীর ওপর নির্মিত বসফরাস সেতু মহাদেশ সংযোগকারী সেতু, যা এশিয়া ও ইউরোপকে যুক্ত করেছে।

বসফরাস প্রণালীর ওপর বর্তমানে ৩টি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে, যথা : প্রথম বসফরাস সেতু (১৫ জুলাই শহীদ সেতু), দ্বিতীয় বসফরাস সেতু (ফাতিহ সুলতান মেহমেত সেতু) এবং তৃতীয় বসফরাস সেতু (ইয়াভুজ সুলতান সেলিম সেতু)। ছয় লেনের মোটরওয়ের প্রথম সেতুটি ১৯৭৩ সালে নির্মিত হয়, যার দৈর্ঘ্য ১৫৬০ মিটার, প্রস্থ ৩৩.৪ মিটার ও উচ্চতা ১৬৫ মিটার। আট লেনের মোটরওয়ের দ্বিতীয় সেতুটি ১৯৮৮ সালে নির্মিত হয়, যার দৈর্ঘ্য ১৫১০ মিটার, প্রস্থ ৩৯ মিটার ও উচ্চতা ১০৫ মিটার। আট লেনের মোটরওয়ের এবং একটি ডাবল ট্র্যাক রেলওয়ের তৃতীয় সেতুটি ২০১৬ সালে নির্মিত হয়, যার দৈর্ঘ্য ২১৬৪ মিটার, প্রস্থ ৫৮.৪ মিটার ও উচ্চতা ৩২২ মিটার। বসফরাস প্রণালীর ওপরে নির্মিত ৩ টি সেতুই তুরস্কের এশীয় ও ইউরোপীয় অংশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। দক্ষিণে অবস্থিত প্রথম সেতুটি পূর্বে বেইলেরবেয়ি (এশীয় অংশ) এবং পশ্চিমে ওর্টাকয় (ইউরোপীয় অংশ)-কে যুক্ত করেছে। মধ্যভাগে অবস্থিত দ্বিতীয় সেতুটি পূর্বে কাভাসিক (এশীয় অংশ) এবং পশ্চিমে হিসারুস্তু (ইউরোপীয় অংশ)-কে যুক্ত করেছে। উত্তরে অবস্থিত তৃতীয় সেতুটি পূর্বে পয়রাজকয় (এশীয় অংশ) এবং পশ্চিমে গ্যারিপসে (ইউরোপীয় অংশ)-কে যুক্ত করেছে।

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : পুরুলিয়ার রঙ পাহাড়

বসফরাস প্রণালীর দুই পাশে অবস্থিত তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তানবুল (Istanbul) হল একটি অন্তর্মহাদেশীয় শহর (Intercontinental City)। প্রথম ও দ্বিতীয় বসফরাস সেতু ইস্তানবুল শহরের দুই প্রান্তের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। তৃতীয় বসফরাস সেতুটি নর্দার্ন মারমারা মোটরওয়ের অংশ। বর্তমানে উভয় দিকে প্রথম বসফরাস সেতু দিয়ে প্রতিদিন ১.৮০ লক্ষ, দ্বিতীয় বসফরাস সেতু দিয়ে প্রতিদিন ১.৫০ লক্ষ এবং তৃতীয় বসফরাস সেতু দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১.৩৫ লক্ষ যানবাহন যাতায়াত করে থাকে। শুধুমাত্র তুরস্কের অভ্যন্তরীণ পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়, বসফরাস সেতুগুলি ইউরোপের বলকান অঞ্চলের সাথে পশ্চিম এশিয়ার যোগসূত্র স্থাপন করেছে, যার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। বসফরাস সেতুগুলির এক দিকে ইউরোপ আর অন্য দিকে এশিয়া— দৈনন্দিন ভাবে মানুষ এশিয়া থেকে ইউরোপ, ইউরোপ থেকে এশিয়া আসছেন ; সৌজন্যে ‘বসফরাস সেতু’। (Continent Connector Bosphorus Bridge)

উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]

লেখিকাঃ- তানিয়া খাতুন (চাঁপাডাঙ্গা, হুগলি)
তথ্যসূত্রঃ- Wikipedia ; আনন্দবাজার পত্রিকা ; Wayback Machine ; Google Earth

ভৌগোলিক প্রবন্ধ : প্রসঙ্গ – আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

4 thoughts on “Continent Connector Bosphorus Bridge

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!