World Logic Day
বিশ্ব যুক্তিবিজ্ঞান দিবস (World Logic Day)
আজ ১৪ ই জানুয়ারি (14 January), বিশ্ব যুক্তিবিজ্ঞান দিবস (World Logic Day), যা বিশ্ব যুক্তিবিদ্যা দিবস বা বিশ্ব তর্ক দিবস নামেও পরিচিত। প্রতি বছর ১৪ ই জানুয়ারি তারিখটি ইউনেস্কো (UNESCO) এবং ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ফিলোসফি অ্যান্ড হিউম্যানিস্টিক স্টাডিজ্ (International Council for Philosophy and Humanistic Studies) -এর উদ্যোগে বিশ্ব যুক্তিবিজ্ঞান দিবস রূপে পালিত হয়। বিশ্ব যুক্তিবিজ্ঞান দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাস, ধারণাগত তাৎপর্য এবং যুক্তিবিদ্যার ব্যবহারিক প্রভাবকে আন্তঃবিভাগীয় বিজ্ঞান সম্প্রদায় এবং বৃহত্তর জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ২০১৯ সালের ১৪ ই জানুয়ারি লজিকা ইউনিভার্সালিস অ্যাসোসিয়েশন (Logica Universalis Association) -এর উদ্যোগে প্রথমবার বিশ্ব যুক্তিবিজ্ঞান দিবস পালিত হয়। এরপর ২০১৯ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে যথাক্রমে ইউনেস্কো এবং ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ফিলোসফি অ্যান্ড হিউম্যানিস্টিক স্টাডিজ্ ১৪ ই জানুয়ারি তারিখটি বিশ্ব যুক্তিবিজ্ঞান দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।
মানবজাতির সবচেয়ে সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল চিন্তন ক্ষমতা। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে, মানবতার সংজ্ঞার সাথে চেতনা, জ্ঞান ও যুক্তির মতো ধারণার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন সভ্যতা দ্বারা যুক্তি নীতির অনুসন্ধান হিসাবে যুক্তিবিদ্যা অধ্যয়ন করা হয়েছে এবং যুক্তিবিদ্যা দর্শন এবং বিজ্ঞানের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে আধুনিক যুগের প্রেক্ষাপটে যুক্তিবিদ্যা আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আজকের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ কম্পিউটার এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতেও যৌক্তিক এবং অ্যালগরিদমিক যুক্তি নিহিত রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৪ ই জানুয়ারি তারিখটি বিশ শতকের দুই বিখ্যাত যুক্তিবিদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস। ১৪ ই জানুয়ারি হল পোলিশ-আমেরিকান যুক্তিবিদ আলফ্রেড তারস্কি (১৯০১-১৯৮৩) -এর জন্মদিন এবং জার্মান যুক্তিবিদ কার্ট গোডেল (১৯০৬-১৯৭৮) -এর মৃত্যুদিন।
ইংরেজি ‘Logic’ শব্দটি গ্রিক ‘Logos’ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ হল চিন্তন ভাষা বা শব্দ। চিন্তনের সাথে ভাষার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এই ভাষা বা শব্দ হল চিন্তনের বাহন। তাই শব্দার্থ অনুসারে বলা যায় যে, ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা সম্পর্কিত বিদ্যাই হল যুক্তিবিজ্ঞান বা যুক্তিবিদ্যা। যুক্তিবিদ জোসেফ (Joseph) -এর মতে, যুক্তিবিদ্যা হল চিন্তা বিষয়ক বিজ্ঞান। যুক্তিবিদ কপি (Copi)-এর মতে, যুক্তিবিদ্যা হল যথার্থ যুক্তি থেকে অযথার্থ যুক্তির পার্থক্য নির্দেশক সংশ্লিষ্ট পদ্ধতি ও নীতি বিষয়ক বিদ্যা। যুক্তিবিদ মিল (Mill)-এর মতে, যুক্তিবিদ্যা হল সেই বিজ্ঞান যা বিচার বা প্রমাণের মাধ্যমে জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপনীত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বৌদ্ধিক ক্রিয়ার সহায়ক মানসিক প্রক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে। তাই, বলা যেতে পারে, যে বিষয় যুক্তি ও তার সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াগুলির সাহায্যে যথার্থ যুক্তি প্রয়োগ ও অযথার্থ যুক্তি পরিহার করতে সহায়তা করে, তাকে যুক্তিবিদ্যা বলে। যুক্তিবিদ্যাতে কয়েকটি মৌলিকসূত্র বা স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম প্রমাণ প্রচলিত রয়েছে। যেমন : অভেদনিয়ম (Law of Identity), বিরোধ নিয়ম (Law of Contradiction), প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নিয়ম (Law of the Uniformity of Nature), কার্যকারণ নীতি (Law of Causation) ইত্যাদি। যুক্তিবিদ্যা বিজ্ঞান (Science) না কলা (Art) — এ নিয়ে যুক্তিবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে, জন ডান্স স্কোটাস (John Duns Scotus) যুক্তিবিদ্যাকে ‘বিজ্ঞান সমূহের বিজ্ঞান ও কলাবিদ্যাসমূহের কলাবিদ্যা’ বলেছেন।
Pingback: Indian Army Day - ভূগোলিকা-Bhugolika