Sikiajhora – Amazon of Dooars
সিকিয়াঝোরা – ডুয়ার্সের আমাজন
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Sikiajhora – Amazon of Dooars । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি ডুয়ার্সের আমাজন নামে পরিচিত আলিপুরদুয়ার জেলার সিকিয়াঝোরা সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চল প্রাকৃতিক পর্যটনের স্বর্গরাজ্য। আর, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ডুয়ার্সের পর্যটন মানচিত্রে উঠে এসেছে সিকিয়াঝোরা, যা ‘ডুয়ার্সের আমাজন’ (Sikiajhora – Amazon of Dooars) নামে পরিচিত। আলিপুরদুয়ার জেলার আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের মাঝের ডাবরি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সিকিয়াঝোরা মানেই জল-জঙ্গল ও বন্যপ্রাণ। বক্সা সংরক্ষিত অরণ্যের দমনপুর রেঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তন্বী নদী সিকিয়াঝোরা, যা পরে স্বল্প দূরে দক্ষিণ-পশ্চিমে কালকূট নদীতে মিলিত হয়েছে। বক্সা সংরক্ষিত অরণ্যের দক্ষিণপ্রান্তে, জঙ্গলে ঘেরা এলাকাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ২০০১ সালে একটি ইকো স্পট তৈরি করা হয়। প্রথমদিকে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা সিকিয়াঝোরা নদীতে মাটির বাঁধ দিয়ে জল আটকে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা করেন। ২০০৫ সালে বনদপ্তর সিকিয়াঝোরা নদীতে জল আটকানোর জন্য একটি লকগেট তৈরি করে। যদিও ২০০৮ সালের বর্ষাতে তা ভেঙে যায়। এরপর আবারও মাটির বাঁধ দিয়ে জল আটকে নৌকাবিহার চলছিল। পরে আবারও সিকিয়াঝোরাতে লকগেটটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : পর্যটনে পুরুলিয়ার জয়চন্ডী পাহাড়
সিকিয়াঝোরার মূল আকর্ষণ হল লকগেটের মাধ্যমে জল আটকে প্রায় ৪ কিমি দীর্ঘ নদীপথে নৌকাবিহার। যদিও বর্তমানে ২.৫ কিমি নদীপথেই নৌকাবিহার চালু রয়েছে। এই নদীপথের দুই ধারে রয়েছে ঘন অরণ্য। নদীপথে নৌকায় ভ্রমণের সময় নির্জন, নিস্তব্ধ এই অরণ্য চিতাবাঘ, চিতল হরিণ, সম্বর হরিণ, বাইসন, ভালুক, বন্য শূকর, বনবিড়াল, বড়ো কাঠবিড়ালি সহ বিভিন্ন জীবজন্তুর দেখা পাওয়া যায়। পূর্ব ডুয়ার্স এলিফ্যান্ট রিজার্ভের অন্তর্গত এই অরণ্যে কখনও কখনও হাতিরও দেখা মেলে। বক্সা সংরক্ষিত অরণ্যে ১৫০ প্রজাতির অর্কিড পাওয়া যায়। তাই, সিকিয়াঝোরার নদীপথে নৌকাবিহারের সময় দুই তীরের অরণ্যে অর্কিডের দেখা পাওয়া যায়। এছাড়া বক্সা সংরক্ষিত অরণ্যে ২৮৪ প্রজাতির পাখি রয়েছে। তাই নদীপথে নৌকাবিহারের সময় এখানে দুই তীরে গাছের ডালে বাজপাখি, বক, সারস, মাছরাঙা, হর্নবিল, তিতির, কাঠঠোকরা সহ রঙবেরঙের পাখির দেখা মেলে। অরণ্য বেষ্টিত নদীপথে নৌকাবিহারের সময় আশেপাশে বিভিন্ন জীবজন্তু ও পাখির উপস্থিতি যেন ডুয়ার্সেই এক টুকরো আমাজনের স্বাদ এনে দেয়। তাই সিকিয়াঝোরা-কে ‘ডুয়ার্সের আমাজন’ বলা হয়।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : নীলগ্রহ পৃথিবীর ইতিকথা
সিকিয়াঝোরাতে একটি নজরমিনার (ওয়াচ-টাওয়ার) রয়েছে। এছাড়া একটি ইকো পার্ক এবং নিকটে চা-বাগান রয়েছে। সিকিয়াঝোরার বনলতা হোম স্টে-এর বিশ্বরূপ ঘোষ দস্তিদার প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, এখানে প্রতি বছর আনুমানিক ১-১.৫ লক্ষ পর্যটক আসেন। সাম্প্রতিক কালে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে সিকিয়াঝোরা-তে একটি বায়োডাইভার্সিটি পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এখানে জেটি নির্মাণ সহ নৌকা ও প্যাডেল বোটের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। আলিপুরদুয়ার শহর থেকে সিকিয়াঝোরার দূরত্ব মাত্র ১২-১৫ কিমি। সিকিয়াঝোরার নিকটবর্তী রেলস্টেশন নিউ আলিপুরদুয়ার রেলস্টেশন। তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস, পদাতিক এক্সপ্রেসের মাধ্যমে কলকাতা থেকে নিউ আলিপুরদুয়ার রেলস্টেশনে পৌঁছানো যায়। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের যেকোনো সময় সিকিয়াঝোরা ভ্রমণ করা যায়। তবে সিকিয়াঝোরা ভ্রমণের সেরা সময় শীতকাল। সাধারণত ভোর-সকালে কিংবা বিকেলে বন্য জীবজন্তু সিকিয়াঝোরাতে জল খেতে আসে। তাই সাতসকালে কিংবা বিকেলে নৌকাবিহার করলে বন্য জীবজন্তুর দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সিকিয়াঝোরাতে পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে বনলতা হোম স্টে এবং মা গ্রিনারি ভিউ। তাই, ডুয়ার্স ভ্রমণের তালিকায় ‘ডুয়ার্সের আমাজন’ সিকিয়াঝোরা ‘মাস্ট-ডেস্টিনেশন’।
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]
লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ- বিশ্বরূপ ঘোষ দস্তিদার (বনলতা হোম স্টে, সিকিয়াঝোরা, আলিপুরদুয়ার)
তথ্যসূত্রঃ- আনন্দবাজার পত্রিকা ; সংবাদ প্রতিদিন ; TV9 Bangla ; এই সময় ; North Bengal Tourism ; নিউজ ১৮ বাংলা
তথ্যবহুল লেখা, পড়ে খুব ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন স্যার। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো।
ধন্যবাদ ❤️
Pingback: Solar Maximum & Solar Minimum - ভূগোলিকা-Bhugolika
খুবই সুন্দর একটি ভৌগোলিক প্রবন্ধ।
Pingback: Mini Sundarban of Purulia - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Srinagar - Tourism in Kashmir - ভূগোলিকা-Bhugolika
Very Nice
ধন্যবাদ ❤️
ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ ❤️