Tourism – Joychandi Hill of Purulia
পর্যটনে পুরুলিয়ার জয়চন্ডী পাহাড়
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Tourism – Joychandi Hill of Purulia । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি পুরুলিয়ার জয়চন্ডী পাহাড় সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

প্রবাদপ্রতিম পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা ‘হীরক রাজার দেশে’। মনে পড়ে হীরক রাজার অত্যাচারে উদয়ন পণ্ডিত এক পাহাড়ের গুহায় লুকিয়েছিলেন?… সেই পাহাড়ই হল জয়চন্ডী পাহাড় (Joychandi Hill)। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর মহকুমার রঘুনাথপুর-১ ব্লকে অবস্থিত জয়চন্ডী পাহাড় একটি প্রাকৃতিক এবং ধর্মীয় পর্যটনস্থল (Tourism – Joychandi Hill of Purulia)। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহর থেকে মাত্র ২ কিমি এবং আদ্রা শহর থেকে মাত্র ৪ কিমি দূরে অবস্থিত এই পাহাড় ভূপ্রাকৃতিক দিক থেকে ছোটোনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : ভাটরা – মালদার মিনি দীঘা
জয়চন্ডী পাহাড়ের উপরেই রয়েছে জয়চন্ডী মাতার মন্দির। মা চন্ডীর নামানুসারেই সম্ভবত এই পাহাড়ের নামকরণ হয়েছে। জয়চন্ডী কোনো একটি একক পাহাড় নয়, অর্ধচন্দ্রাকারে পাশাপাশি অবস্থিত ৪টি পাহাড়ের সমষ্টি। প্রতিটি পাহাড়ের নিজস্ব নাম রয়েছে — যোগীঢাল, রামসীতা, জয়চন্ডী, সিজানো। পাশেই রয়েছে আরেকটি পাহাড়, কালী পাহাড়। পুরো এলাকা জুড়েই রয়েছে বড়ো বড়ো পাথর-বোল্ডারের ভূদৃশ্য। জয়চন্ডী পাহাড়ের ঢাল খুবই খাড়া। এখানে পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে। জয়চন্ডী পাহাড়ের গড় উচ্চতা ১৫৫ মিটার (৫০৯ ফুট)। স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, বহুবছর আগে ডাকাতরা জয়চন্ডী পাহাড়ের পথঘাট ব্যবহার করতো।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : পুরুলিয়া জেলার জীববৈচিত্র্য
জয়চন্ডী মাতার মন্দির এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। পাহাড়ের গায়ে প্রায় ৫০০-রও বেশি সিঁড়ি বেয়ে উঠলে পৌঁছে যাবেন পাহাড় চূড়োয় মন্দিরে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় বাঁকে বাঁকে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে কিনতে পাবেন পুজোর সামগ্রী, জল সহ অনেক কিছুই। পাহাড়ের উপরে রয়েছে এক ওয়াচ টাওয়ার ; শোনা যায় কাশীপুরের রাজার সৈন্যরা এখান থেকে নজর রাখতেন বহুদূর পর্যন্ত। সিঁড়ি ভেঙে পাহাড় চূড়োয় ওঠা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কিন্তু সেই কষ্ট এক নিমেষেই দূর হয়ে যাবে, যখন আপনি পাহাড়ের উপর থেকে নিচের দিকে চারিপাশে তাকিয়ে দেখবেন। আহা! কি অপরূপ দৃশ্য। চারিদিকে শুধু সবুজ ঘেরা প্রান্তর, একদিকে শহরের ব্যস্ত জীবন ও অন্যদিকে পাহাড়তলীর গ্রামীণ জীবন।
জয়চন্ডী পাহাড়ের নিচে রয়েছে ছোটদের জন্য পার্ক। আছে থাকা-খাওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। কোনো রকম সমস্যার সম্মুখীন হবেন না। পুরুলিয়ার যেকোনো পর্যটনস্থলের মতোই, জয়চন্ডী পাহাড় ভ্রমণের আদর্শ সময় শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি)। গ্রীষ্মকালে এইসব এলাকার তাপমাত্রা ৪০°C ছাড়িয়ে যায়, যা পর্যটকদের জন্য অনুকূল নয়। প্রতি বছর ২৮ শে ডিসেম্বর থেকে ১ লা জানুয়ারি জয়চন্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় চারিদিক থেকে বহু মানুষের সমাগম দেখা যায়। কিভাবে আসবেন এখানে? প্রথমে সড়কপথে আদ্রা বা রঘুনাথপুর পৌঁছান। সেখান থেকে কয়েক কিমি দূরেই জয়চন্ডী পাহাড়। আবার, রেলপথে আদ্রা স্টেশন বা পাহাড় থেকে ১.৫ কিমি দূরে অবস্থিত জয়চন্ডী পাহাড় স্টেশনে নামুন। সেখান থেকে টোটো বা অটো পৌঁছে যান জয়চন্ডী পাহাড়ে। বলে রাখা ভালো, বিকেল/সন্ধে ৫ টার পর আর পাহাড়ে উঠতে দেওয়া হয়না।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : চ্যাংমারি চা বাগান
বর্তমানে কিছু মানুষের অবিবেচনামূলক কাজের ফলে পাহাড়ের সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে, বাড়ছে দূষণও। জয়চন্ডী পাহাড় এলাকায় নানারকম কীটপতঙ্গ, পাখি, বিষাক্ত সাপ রয়েছে। কখনো কখনো ময়াল সাপও দেখা যায়। প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাবে হ্রাস পাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এবিষয়ে আরও সচেতনতা ও সরকারি উদ্যোগ কাম্য। তবে শুধু জয়চন্ডী পাহাড়ই নয়, রূপসী পুরুলিয়া জেলাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে জানা-অজানা কত পর্যটনস্থল। পুরুলিয়ার প্রকৃতির একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। এককথায় পুরুলিয়া মানেই হল… ‘পিন্দারে পলাশের বন, পালাবো পালাবো মন’।
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]
লেখিকাঃ- অন্বেষা দুবে (মঙ্গলদা, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া)
তথ্যসূত্রঃ- স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে অভিজ্ঞতা এবং তথ্যজ্ঞান; Wikipedia ; আনন্দবাজার পত্রিকা; Official Website of Purulia District ; সংবাদ প্রতিদিন ; এই সময়
Pingback: Sikiajhora - Amazon of Dooars - ভূগোলিকা-Bhugolika
Lovely….
Very Good
ধন্যবাদ ❤️
Very Good
ধন্যবাদ ❤️