Deomali of Odisha Travel
ভ্রমণে ওড়িশার দেওমালি
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Deomali of Odisha Travel । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি ওড়িশার দেওমালি ভ্রমণ সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

দেওমালি, ওড়িশা
ভূগোল ও ভ্রমণ পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই ভূগোল অধ্যয়নের সাথে যদি ভ্রমণটাও হয়ে যায়, তবে মন্দ হয় না। এইরকমই এক ভৌগোলিক তাৎপর্যপূর্ণ অথচ ভ্রমণ সহায়ক অনামী জায়গা হল ওড়িশা রাজ্যের দেওমালি (Deomali of Odisha Travel)। মলয়াদ্রি অর্থাৎ পূর্বঘাট পর্বতমালার অংশ বিশেষ চন্দ্রগিরি-পোটাঙ্গি উপবিভাগের অন্তর্গত দেওমালি হল সমগ্র ওড়িশার সর্বোচ্চ এবং পূর্বঘাট পর্বতমালার তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা প্রায় ১৬৭২ মিটার (৫৪০০ ফুট)। পর্বতের শীর্ষ অঞ্চল প্রায় ৩-৫ কিমি প্রশস্ত সমতল পৃষ্ঠ। এখান থেকে ইংরেজি ‘M’ অক্ষরের মতো সমগ্র পার্বত্য অঞ্চলটি দেখতে পাওয়া যায়। এটি পুরো ওড়িশা রাজ্যের তিন চতুর্থাংশ জুড়ে অবস্থিত। ভূতাত্ত্বিক ভাবে ভারতীয় উপদ্বীপের প্রাচীন ভূখন্ড গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশ হল দেওমালি।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : বীরভূমের মামা-ভাগ্নে পাহাড়
এই অঞ্চলটি চার্নোকাইটস, গ্রানাইট, নিস, কোয়ার্টজাইট রক ফর্মেশনের ফলে গঠিত, যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন নদী দ্বারা গভীরভাবে কর্তিত হয়েছে এবং খনিজ সমৃদ্ধ। এখানে বক্সাইট, চুনাপাথর এবং রত্ন পাথরের খনি রয়েছে। ব্রুকস এবং গভীর উপত্যকা দিয়ে গঠিত অঞ্চলটি সাম্প্রতিক দিনে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। দেওমালির পাদদেশে রয়েছে রথিবালি জলপ্রপাত (Rathibali Waterfall), যা প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি কতকগুলো ধাপের ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী উল্লেখযোগ্য জলপ্রপাতগুলি হল — মাচকুন্ড নদীর উপর ডুডুমা জলপ্রপাত (Duduma Waterfall) এবং রানি ডুডুমা জলপ্রপাত (Rani Duduma Waterfall)।
ঘন সবুজ অরণ্য দ্বারা আচ্ছাদিত এই দেওমালি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে সাথে জীববৈচিত্র্যেও ভরপুর। এই অঞ্চল ভূপ্রকৃতিগত বিভিন্নতার সাথে জীববৈচিত্র্যেও বিশেষ সমৃদ্ধ। বায়োলজিস্ট প্রত্যুষ মহাপাত্র এবং প্রসাদ দাসের সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, এখানে প্রায় ৩৪৫ টিরও বেশি উদ্ভিদ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। যার মধ্যে বেশ কিছু প্রজাতির ওষধি গাছ অত্যন্ত বিরল, যা কেবল এই অঞ্চলেই দেখতে পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে কয়েকটি হল — Mallotus phillipensis, Colchespermum religiousm, Hypericum geitii, Kalanchoa pinnata এবং Viola scanders। এছাড়াও অত্যন্ত বিরল প্রজাতির চার রকম অর্কিডের সন্ধান মিলেছে দেওমালির উচ্চ অংশে, যেগুলো বায়োলজিক্যাল সিস্টেমে Bio-indicator অর্থাৎ জৈব নির্দেশক বলে পরিগণিত হয়। এদের মধ্যে Habenia grandifloriformis, Emillia zenlanica, Gynuura lycopersicifolia হল অন্যতম। হায়েনা, গোল্ডেন ফক্স, বেঙ্গল ফক্স, ফ্লাইং ফক্স, সম্বর হরিণ, জংলি প্রজাতির বিড়াল, লেপার্ড, বাইসন, হাতি, জায়েন্ট স্কুইরাল প্রভৃতি বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি প্রায় ২০টির বেশি প্রজাতির সরীসৃপের দেখা পাওয়া গেছে এই অরণ্যসংকূল পার্বত্য অঞ্চলে। যাদের মধ্যে একটি হল অতিবিরল শ্রীলঙ্কান ডোরাকাটা সাপ (Liopeltis Calamaria)। এছাড়া রয়েছে বিভিন্নপ্রকার কচ্ছপ (Indian black turtle, Indian flapshell turtle, Indian tent turtle, Indian star tortoise), গিরগিটি (Indian chameleon, Reticulated gecko, rock gecko, golden gecko) ইত্যাদি।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : দাক্ষিণাত্যের লোনার হ্রদ
আদিবাসী সম্প্রদায়ের আবাসস্থল হিসেবে ওড়িশার এই অংশ বিশেষ সমৃদ্ধ। শুধুমাত্র দেওমালি অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সম্প্রদায়গুলি হল — কান্ধ্য উপজাতি, যা ওড়িশার বৃহত্তম উপজাতি (খোন্ড, কোন্ড, নাঙ্গুলি কাঁধ, সীত কান্ধ, কোন্ঠ, কুই, বুদা কন্ধ, বুড়া কান্ধা, দেশিয়া কান্ধ, ডুঙ্গারিয়া কোঁধ, কুটিয়া কান্ধ, কান্ধ গৌড়, মুলি কান্ধ, মালুয়া কান্ধ, পেঙ্গো কান্ধ, রাজা কান্ধ, রাজ খোন্ড ইত্যাদি), পারাজাস, ভূমিজ উপজাতি (তেলী ভূমিজ, হালাদিপোখরিয়া ভূমিজ, হালাদি পোখারিয়া ভূমিজ, দেশী ভূমিজ, দেশিয়া ভূমিজ, তামারিয়া ভূমিজ), মালি, ভোত্রা ইত্যাদি।
★ কি দেখবেন?
দেওমালি পাহাড়ের সৌন্দর্যের সাথে স্থানীয় আদিবাসীদের জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণযোগ্য। পার্শ্ববর্তী মাচকুন্ড নদীর উপর বিখ্যাত ডুডুমা জলপ্রপাত রয়েছে। নন্দপুরের রানি ডুডুমা জলপ্রপাত একটি তিন ধাপের জলপ্রপাত। নন্দপুর জেলা সদর কোরাপুট থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ছোট শহর, যা সিমিলিগুডা থেকে প্রায় ১৪ মাইল দূরে এবং পাতঙ্গী থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই স্থানটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসবিদ জি. রামদাস অনুমান করেছেন যে, গ্রামটির নাম মগধের বিখ্যাত নন্দ রাজবংশ থেকে এসেছে, যা এই অঞ্চলেও রাজত্ব করেছিল বলে মনে করা হয়। এছাড়া বাটিসি সিংহাসন (৩২ টি সিংহাসন) নন্দপুরে অবশ্যই একটি দর্শনীয় স্থান। এর পাশাপাশি গালিগাবদার, দামনজোর, ঐতিহাসিক স্থান গুপ্তেশ্বরের প্রাচীন শিবমন্দির ও চুনাপাথরের গুহা, সাবেরী নদী এই অঞ্চলের দর্শনীয় স্থান।
★ কিভাবে যাবেন?
রেলপথে হাওড়া জংশন থেকে হাওড়া-জগদলপুর এক্সপ্রেস ধরে ওড়িশার কোরাপুট। এরপর সড়কপথে কোরাপুট থেকে দেওমালি। দেওমালি কোরাপুট শহর থেকে প্রায় ৬০ কিমি, বিশাখাপত্তনম থেকে ২০০ কিমি এবং ভুবনেশ্বর থেকে ৫০০ কিমি দূরত্বে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি উন্নত সড়ক পথ দ্বারা সংযুক্ত রয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]
লেখিকাঃ- মৌমিতা মোদক (তারকেশ্বর, হুগলি)
তথ্যসূত্রঃ- Govt of Odisha/Tourism ; Utkal Today Magazine ; Eco India ; Encyclopaedia Britannica ; Researchgazet ; উইকিপিডিয়া ; নিজস্ব ভ্রমণ অভিজ্ঞতা
খুব সুন্দর
ধন্যবাদ ❤️
খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করা। ভালো
ধন্যবাদ ❤️
Pingback: Bhatra - Mini Digha of Malda - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Five Year Plan and Important Info - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Biodiversity Chronicle of Purulia District - ভূগোলিকা-Bhugolika
Very Nice!
Pingback: Story of Blue Planet - Our Earth - ভূগোলিকা-Bhugolika
Very Nice!
ধন্যবাদ ❤️
Very Good
ধন্যবাদ ❤️