Lakshadweep – Paradise of Tourists
লক্ষদ্বীপ – পর্যটকের স্বর্গ
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Lakshadweep – Paradise of Tourists । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি লক্ষদ্বীপের পর্যটন সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

‘ওয়েলকাম টু লক্ষদ্বীপ— দ্য প্যারাডাইস ইন ইন্ডিয়া’। নামের অর্থ লক্ষদ্বীপের সমাহার হলেও, প্রকৃতপক্ষে লক্ষদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জে মোট দ্বীপ সংখ্যা ৩৬, যার মধ্যে কেবল ১০টি দ্বীপে মানুষের বাস। প্রশাসনিক ভাবে, লক্ষদ্বীপ (Lakshadweep) ভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (Union Territory) এবং আয়তন ও জনসংখ্যায় ভারতের ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। লক্ষদ্বীপের ভূমিভাগের ক্ষেত্রমান মাত্র ৩২ বর্গকিমি হলেও, লক্ষদ্বীপের লেগুন এলাকা ৪২০০ বর্গকিমি এবং আঞ্চলিক জলভাগ ২০ হাজার বর্গকিমি জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। লক্ষদ্বীপের ‘স্টেট অ্যানিম্যাল’ হল প্রজাপতি মাছ (Butterfly Fish), তাই লক্ষদ্বীপ ‘প্রজাপতি মাছের দেশ’ নামেও পরিচিত। ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণে, আরব সাগরের বুকে ১২টি অ্যাটল, ৩টি প্রবাল প্রাচীর এবং ৫টি মগ্নচড়া নিয়ে গঠিত লক্ষদ্বীপ ভারতের একমাত্র প্রবাল দ্বীপপুঞ্জ। কেরালার কোচি উপকূল থেকে লক্ষদ্বীপের দূরত্ব ২২০-৪৪০ কিমি। ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-কৌশলগত পরিসরে, লক্ষদ্বীপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সাধারণভাবে লক্ষদ্বীপ (Lakshadweep) ‘পর্যটকের স্বর্গ’ (Paradise of Tourists) হিসেবেই বিখ্যাত।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : চ্যাংমারি চা বাগান
ইতিহাস বলছে, ১৯৫৬ সালে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদাপ্রাপ্ত লক্ষদ্বীপে ১৯৭৪ সালে পর্যটনের সূচনা ঘটে। ১৯৭৪ সালে এমভি আমিনদিভি জাহাজের মাধ্যমে ভারতের মূল ভূখন্ডের সাথে আধুনিক নৌ-যোগাযোগ শুরু হয় এবং ওই বছরই লক্ষদ্বীপের বাঙ্গারাম দ্বীপটি আন্তর্জাতিক পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়৷ ১৯৯০ সালে লক্ষদ্বীপের পর্যটন বিভাগের আধুনিকীকরণ করা হয়। ১৯৯৭ সালে লক্ষদ্বীপ জাতীয় ইকো-ট্যুরিজম পুরষ্কার লাভ করে। লক্ষদ্বীপের পর্যটনের প্রচার-প্রসারে ‘SPORTS’ (Society for Promotion of Nature Tourism and Sports) শীর্ষক সরকারি সংস্থাটি ‘নোডাল এজেন্সি’ রূপে কাজ করে থাকে। লক্ষদ্বীপে নীল-সবুজ সমুদ্র, সাদা বালির সৈকত, নারিকেল গাছের সারি, প্রবাল প্রাচীর, প্রবাল বাস্তুতন্ত্রের অনন্য সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য প্রভৃতি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি স্নরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং, উইন্ড সার্ফিং, কায়াকিং, ওয়াটার স্কিইং প্রভৃতি জলক্রীড়ারও সুব্যবস্থা রয়েছে। নিচে লক্ষদ্বীপের সেরা ৫টি পর্যটনকেন্দ্র (আগাত্তি, বাঙ্গারাম, কাভারাত্তি, কাদমত ও মিনিকয়)-এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হল।
(১) আগাত্তি দ্বীপ (Agatti Island): আগাত্তি দ্বীপকে ‘লক্ষদ্বীপের প্রবেশদ্বার’ (Gateway of Lakshadweep) বলা হয়, কেননা এই দ্বীপেই লক্ষদ্বীপের একমাত্র বিমানবন্দরটি রয়েছে। আগাত্তি দ্বীপের সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। এখানে স্নরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং, কায়াকিং, ওয়াটার স্কিইং প্রভৃতি জলক্রীড়ার পাশাপাশি ডিপ সি ফিশিং ও গ্লাস বটম বোট রাইডেরও সুযোগ রয়েছে। এখানকার ‘স্মোকড টুনা ফিশ’ খাদ্যরসিকের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। (২) বাঙ্গারাম দ্বীপ (Bangaram Island): লক্ষদ্বীপের যে দ্বীপে প্রথম পর্যটনের সূচনা হয়েছিল, তা হল বাঙ্গারাম দ্বীপ। অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের পাশাপাশি এখানে এশিয়ান ডলফিন, ফ্রগফিশ, অক্টোপাস দেখা যায়। বাঙ্গারাম দ্বীপের সৈকত ফসফোরেসেন্ট প্ল্যাঙ্কটনের সৌজন্যে রাতের বেলা নীলাভ আলোয় ভরে ওঠে। সমগ্র লক্ষদ্বীপে অ্যালকোহল দ্রব্য নিষিদ্ধ হলেও, একমাত্র বাঙ্গারাম দ্বীপে তা নিষিদ্ধ নয়। এখানকার স্বচ্ছ নীল জলে স্নরকেলিং বেশ জনপ্রিয়। (৩) কাভারাত্তি দ্বীপ (Kavaratti Island): লক্ষদ্বীপ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজধানী (প্রশাসনিক কার্যালয়) হল কাভারাত্তি। সাদা বালির সৈকত, শান্ত লেগুন, সারি সারি নারিকেল গাছ- কাভারাত্তির সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ। কাভারাত্তির ‘মেরিন অ্যাকোয়ারিয়াম ও মিউজিয়াম’ অন্যতম দ্রষ্টব্য। এছাড়া এই দ্বীপে স্নরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং প্রভৃতি জলক্রীড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। উল্লেখ্য, এই দ্বীপেই ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি নৌ-ঘাঁটি রয়েছে। (৪) কাদমত দ্বীপ (Kadmat Island): চেয়ার ও ছাতা বিছানো সুন্দর সৈকত, স্বচ্ছ নীলজলের লেগুন, তট থেকে একটু দূরে প্রবাল প্রাচীর, প্রচুর নারকেল ও ঝাউ গাছ — এ সব মিলিয়ে কাদমত দ্বীপ। কাদমত দ্বীপে বালির রং মুখ্যত সাদা হলেও একটু হাল্কা গোলাপি আভা দেখা যায়। এই দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে ছোট ছোট বিভিন্ন রঙের শঙ্খ, সাদা রঙের কাঁকড়া দেখা যায়। এই দ্বীপে স্নরকেলিং, কায়াকিং, স্কুবা ডাইভিংয়ের পাশাপাশি ডিপ সি ডাইভিং, প্যারাসেইলিং প্রভৃতি জলক্রীড়া ব্যবস্থা রয়েছে। (৫) মিনিকয় দ্বীপ (Minicoy Island): স্থানীয় ভাবে ‘মলিকু’ নামে পরিচিত মিনিকয় দ্বীপ আয়তনে লক্ষদ্বীপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ (বৃহত্তম দ্বীপ অ্যান্ড্রোট)। লক্ষদ্বীপের মূল অঞ্চল থেকে ২০০ কিমি চওড়া ‘নয় ডিগ্রি চ্যানেল’ দ্বারা বিচ্ছিন্ন মিনিকয় দ্বীপ হল লক্ষদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণতম দ্বীপ। মিনিকয় দ্বীপ মানেই সাদা বালির সৈকত, নারিকেল গাছের অরণ্য আর দিগন্তবিস্তৃত নির্জন সমুদ্র। এই দ্বীপে ১১টি গ্রামের একটি ক্লাস্টার রয়েছে, যা আভাহ (Avah) নামে পরিচিত। মিনিকয় দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ মিনিকয় লাইটহাউস, থুন্ডি সৈকত। এছাড়া এই দ্বীপে জাহাধোনি (Jahadhoni) বোট রেসিং এবং ঐতিহ্যবাহী লাভা (Lava) নৃত্য বিখ্যাত।
উপরোক্ত ৫টি পর্যটনকেন্দ্র ছাড়াও, লক্ষদ্বীপের পর্যটনে পিট্টি দ্বীপের পিট্টি পক্ষী অভয়ারণ্য, থিন্নাকারা দ্বীপ, কালপেনি দ্বীপ, আমিনি দ্বীপ, কিলটান দ্বীপ প্রভৃতি উল্লেখ্য। ক্রান্তীয় দ্বীপ ভ্রমণে আমরা অনেকেই বিদেশে যাই। কিন্তু বিদেশ নয়, তুলনামূলক কম বাজেটে আপনার গন্তব্য হোক লক্ষদ্বীপ। লক্ষদ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। লক্ষদ্বীপ ভ্রমণের জন্য লক্ষদ্বীপ পর্যটন বিভাগ থেকে স্পেশাল পারমিট সংগ্রহ করতে হয়। বিমানে বা জাহাজে করে কেরালার কোচি থেকে লক্ষদ্বীপ যাত্রাই সবচেয়ে কম দূরত্বের। লক্ষদ্বীপ পর্যটন বিভাগের ওয়েবসাইটে লক্ষদ্বীপ ভ্রমণের বিভিন্ন সরকারি প্যাকেজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। পরিশেষে, কিথ বেলোর উক্তি ধার করে অতুলনীয় লক্ষদ্বীপ সম্পর্কে বলা যায়— ‘once visited, get into your heart and won’t go’। (Lakshadweep – Paradise of Tourists)
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]
লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- Hindustan Times ; Website of Administration of Lakshadweep/ Government of India ; Wikipedia ; আনন্দবাজার পত্রিকা ; এই সময় ; এবিপি আনন্দ ; Travel Triangle/Holiday Triangle Travel ; Holidify Travels Pvt. Ltd.
অসাধারণ লেখা, লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হলাম।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ ❤️
Very Nice
ধন্যবাদ ❤️
Pingback: Deomali of Odisha Travel - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Bhatra - Mini Digha of Malda - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Biodiversity Chronicle of Purulia District - ভূগোলিকা-Bhugolika
Oh Lovely!
অসাধারণ…
Awesome
ধন্যবাদ ❤️
Darun Hoyeche…
ধন্যবাদ ❤️