Ahiran Beel of Murshidabad
মুর্শিদাবাদের আহিরণ বিল
ভূগোলিকা-Bhugolika -এর ‘ভৌগোলিক প্রবন্ধ’ বিভাগে আপনাকে স্বাগত জানাই। ভৌগোলিক প্রবন্ধে আমরা ভূগোলের নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিস্তারিত তথ্য পেয়ে থাকি, যা আমাদের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক হয়। আজকের ভৌগোলিক প্রবন্ধ : Ahiran Beel of Murshidabad । আশাকরি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি মুর্শিদাবাদের আহিরণ বিল সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।

গাঙ্গেয়-ব্রহ্মপুত্র প্লাবন সমভূমিতে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট স্বাদুজলের আবদ্ধ জলাভূমিকে বিল (Beel) বলে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম এবং বাংলাদেশে নদী অববাহিকার নিম্নভূমিতে সৃষ্ট, সাধারণত অগভীর জলাভূমি বিল নামে পরিচিত। এগুলি বর্ষাকালে পুরোপুরি জলপূর্ণ থাকে এবং অধিকাংশ বিল শুষ্ক ঋতুতে জলশূন্য চারণভূমিতে পরিণত হয়। তবে, বৃহৎ ও গভীর বিলগুলিতে প্রায় সারাবছর কোথাও না কোথাও জল থাকে। সাধারণত বর্ষাকালে বন্যা বা বৃষ্টিপাতের কারণে নিম্নভূমিতে জল জমে বিল গড়ে ওঠে। আবার অনেক সময়, কোনো নদীর নদীখাত পরিবর্তনের কারণে পুরনো নদীখাত বরাবর একাধিক বিল গড়ে ওঠে। যেকোনো বিলই জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হয় এবং চাষাবাদ, মৎস্য আহরণ প্রভৃতির মাধ্যমের স্থানীয় অধিবাসীদের জীবন-জীবিকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার আহিরণ বিল (Ahiran Beel) তেমনই একটি বিল, যা ২০১৬ সালে ভারতের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক কর্তৃক ‘জাতীয় জলাভূমি’ (National Wetland) -এর স্বীকৃতি পেয়েছে। আহিরণ বিলের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাগত বিস্তৃতি হল ২৪°৫২’৩১.০৩” উত্তর থেকে ২৪°৫২’৯০.৯৭” উত্তর এবং ৮৮°০২’৯৮.১৮” পূর্ব থেকে ৮৮°০৩’৪২.৩৮” পূর্ব (IJFAS-2016)। আহিরণ বিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষী এলাকা (Important Bird Area) হিসেবে বিবেচিত হয়।
মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি-১ নং ব্লকের আহিরণ মৌজার অন্তর্গত আহিরণ বিল স্থানীয় ভাবে ‘চাঁদ বিল’ (Chand Beel) নামে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে, আহিরণ বিল হল গঙ্গা নদী তীরবর্তী একটি অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ (Oxbow Lake)। চারিদিকে কৃষিজমি পরিবেষ্টিত আহিরণ বিলের দক্ষিণে আহিরণ গ্রাম, দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গবাড়ি গ্রাম, উত্তর ও পূর্বদিকে জাতীয় সড়ক-১২ (পূর্বতন জাতীয় সড়ক-৩৪) রয়েছে। আহিরণ শব্দটি সম্ভবত ‘আহির’ থেকে এসেছে, যার অর্থ হল গোয়ালা। এই অঞ্চলে প্রধানত ঘোষ সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করেন, যাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা হল গো-পালন। নদীয়া-মুর্শিদাবাদ বনবিভাগ-এর রঘুনাথগঞ্জ বিটের অন্তর্গত আহিরণ বিলের আয়তন প্রায় ৬৫ একর। International Journal of Fisheries and Aquatic Studies -এ প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র (২০১৬) অনুসারে, আর্দ্র ও শুষ্ক ঋতুতে আহিরণ বিলের আয়তন যথাক্রমে ০.৬০ বর্গকিমি ও ০.০৫৪৭ বর্গকিমি। বহরমপুর ও রঘুনাথগঞ্জ থেকে আহিরণ বিলের দূরত্ব যথাক্রমে ৬০ কিমি ও ১১ কিমি।
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : ইজরায়েলের লবণ গুহা মালহাম
আহিরণ বিলে প্রাপ্ত প্রধান উদ্ভিদ প্রজাতিগুলি হল : কচুরিপানা, শোলা, পানিফল, শাপলা, চাঁদমালা, কুরেলি, পাতা শ্যাওলা, হিঞ্চা, কলমী, কচু প্রভৃতি। আহিরণ বিল শীতকালীন পরিযায়ী পাখিদের জন্য বিখ্যাত। আহিরণ বিলে যেসব পরিযায়ী পাখি দেখা যায়, সেগুলি হল : রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড, লেসার হুইসলিং টিল, নর্দার্ন পিনটেল, গ্যাডওয়াল, মুর হেন, কমন কুট, কটন টিল, হোয়াইট আইড পোচার্ড, কর্মোর্যান্ট, ইগ্রেট প্রভৃতি। International Journal of Fisheries and Aquatic Studies -এ প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র (২০১৬) অনুসারে, আহিরণ বিলে ৪৭ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। আহিরণ বিলের উল্লেখযোগ্য মৎস্য প্রজাতিগুলি হল — রুই, ঘেসো রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবোস, বাটা, সিলভার কার্প, সর পুঁটি, জাত পুঁটি, মৌরলা, ট্যাংরা, শিঙ্গি, মাগুর, বোয়াল, কই, তেলাপিয়া, চাঁদা, চিংড়ি ইত্যাদি। (Ahiran Beel of Murshidabad)
ভৌগোলিক প্রবন্ধ : সুন্দরবনের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ
২০০৫ সালে আহিরণ বিলে পরিযায়ী পাখিদের ভিড় দেখে, তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও পরবর্তীকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায় আহিরণ বিলকে ‘এশিয়ার বৃহত্তম পাখিরালয়’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে, তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৮ সালে বনদপ্তরের এক সমীক্ষায় জানা যায়, সেই সময় ৫৭ প্রজাতির ২১০০ পরিযায়ী পাখি আসত এই আহিরণ বিলে। বর্তমানে অবশ্য পাখির সংখ্যা অনেক কমেছে। কমেছে প্রজাতির সংখ্যাও। সাম্প্রতিক কালে আহিরণ বিলে মোটামুটি ১৫-২০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখা যায়। আহিরণ বিলের প্রধান সমস্যাগুলি হল : পার্শ্ববর্তী কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের কারণে জলদূষণ ; উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গকে সংযোগকারী জাতীয় সড়ক-১২ (পূর্বতন জাতীয় সড়ক-৩৪) -এর উপস্থিতি ও সম্প্রসারণ ; পরিযায়ী পাখিদের চোরাশিকার ; সঠিকভাবে বিল সংস্কারের অভাব প্রভৃতি। একদা পরিযায়ী পাখিদের স্বর্গরাজ্য আহিরণ বিল বর্তমানে অবহেলিত। সুতি-১ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আহিরণ বিলের রামসার জলাভূমির স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে, আন্তর্জাতিক জলাভূমির সুযোগসুবিধা মিলতে পারে। এখন কিছু পাখির দেখা মিললেও গাছপালা নেই বললেই চলে। পাখিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে বৃক্ষরোপণ, বিলের সংস্কার করে মাছ চাষ ও এলাকাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের রয়েছে। (Ahiran Beel of Murshidabad)
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস [XI : Semester-I]
লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- আনন্দবাজার পত্রিকা ; সংবাদ প্রতিদিন ; আজকাল পত্রিকা ; বর্তমান পত্রিকা ; Mondal, A., Roy, D., (2014), An Environmental Study Of Ahiron Lake Of Murshidabad District, Journal of Engineering Computers & Applied Sciences(JECAS) Volume 3, No.12 ; Mistry, J., (2016), Ichthyofaunal diversity of Ahiran Lake in Murshidabad District, West Bengal, India, International Journal of Fisheries and Aquatic Studies, (IJFAS) 4(2): 15-18
Pingback: Majuli - Largest River Island of India - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Topic - Will-o'-the-Wisp - ভূগোলিকা-Bhugolika
Pingback: Thanjavur - Granary of South India - ভূগোলিকা-Bhugolika